২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কক্সবাজারের এসপি প্রত্যাহার চায় রাওয়া

আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডই যেন শেষ বিচারবহির্ভূত হত্যা হয় : নাসিমা আক্তার

নিহত মেজর (অব:) সিনহার উত্তরার বাসায় রাওয়া ক্লাবের নেতারা। সিনহার মা এ সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন : নয়া দিগন্ত -

পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব:) সিনহা মো: রাশেদের মা নাসিমা আক্তার বলেছেন, আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডই যেন বিচারবহির্ভূত হত্যার শেষ ঘটনা হয়। এভাবে আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এ বিষয়ে সবাই সচেতন হবেন। গতকাল সোমবার সকালে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) নেতারা সিনহার উত্তরার বাসায় গেলে তার মা এসব কথা বলেন। এ সময় রাওয়ার চেয়ারম্যান মেজর (অব:) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, ঠাণ্ডা মাথায় মেজর (অব:) সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় রাওয়ার সেক্রেটারি লে. কর্নেল (অব:) এ এম মোকারোফ হোসেনসহ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৫ আগস্ট মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং চলচ্চিত্রকর্মী সিফাত-শিপ্রার মুক্তি দাবিতে প্রেস ব্রিফিং করে রাওয়া।
সিনহার মা সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলের বেলায় যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডটি ঘটল এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। প্রত্যেক মায়ের প্রতিনিধি হয়ে বলব এই ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। সবাই যেন সচেতন থাকেন।’ তিনি বলেন, আমার ছেলে পজিটিভ ছিল। সবসময় বি পজিটিভ। আমিও বি পজিটিভের পক্ষে আছি। আমার হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, ‘সিনহা খুব স্পিডে গাড়ি চালাত। কাজ শেষে সাধারণত বাসায় ফিরত। সেদিন বাসায় ফিরছিল না ফোনও ধরছিল না আবার ব্যাকও করছিল না। রাত ১২টার দিকে এক ভদ্রলোক ফোন করে বললেন সিনহা আপনার কী হয়, সে কী করে। আপনার কয় ছেলেমেয়ে। উত্তর দিয়ে জানতে চাইলাম এত প্রশ্ন করছেন, আপনি কে? তখন তিনি বলেন, আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি টেকনাফ থানার ওসি। ভাবলাম ছেলে তো স্পিডে গাড়ি চালায়। আবার কিছু হলো কি না। ‘বললাম, ফোনটা বাজছে আমার ছেলে তো ফোন ধরছে না ওকে একটু দেন। ওসি বলেন হ্যাঁ একটু দূরেই আছে। দেয়া যাবে। বলেই রেখে দিলো। কিন্তু বারবার ফোন দেই আর কেউই ফোন ধরে না। একসময় দুই মেজরের নম্বর দিয়েছিল সিনহা। ফোন দিলাম মেজর মোহসিনকে। জানতে চাইলাম সিনহার খবর। বললাম ফোন ধরছে না। পরে জানাল টেনশন কইরেন না। সিনহা ঠিক আছে। পরদিন ১০টা ১১টা বাজে। বাসায় উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ আসে। তারা মেজর সিনহার বাসা কি না জানতে চেয়ে খোঁজ নেয়। রাজনীতির সাথে জড়িত কি না, দেশের বাড়ি কোথায় জানতে চায়। বলি রাজনীতিতে জড়িত নয় শতভাগ নিশ্চিত। ওরা ভালো ব্যবহার করে চলে যায়। তারাও কিছু জানায়নি।’ সিনহা হত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে কথা বলেছেন। সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান খোঁজ নিয়েছেন আশ্বাস দিয়েছেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাসিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলে দেশকে নিয়ে অনেক ভাবত। আমাকে বলত, আমরা যদি দেশে ভালো কিছু রেখে যাই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটা অনুসরণ করবে। আমার ছেলের প্রত্যেকটি কাজে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। ভেতরে ভেতরে আমি খুবই গর্ববোধ করতাম। ও শুধু কাজ করতেই চাইত।’ সংবাদ সম্মেলনে নাসিমা আরো বলেন, আত্মীয়-স্বজন বলত ও কী কাজ করে ওর কি কোনো টাকা-পয়সা আসে না? কিন্তু সিনহা আসলে সবসময় ক্রিয়েটিভ কাজ করতে চাইত, সবসময় সারপ্রাইজ দিতে চাইত কাজের মাধ্যমে। ও বলত, আমি আমার মনের খোরাকের জন্য কাজ করি যাতে মানুষ উপকৃত হয়। একটা ডকুমেন্টারি করছি এখনো বলার মতো কিছু হয়নি, যখন হবে তখন বলব।’
রাওয়ার চেয়ারম্যান মেজর (অব:) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, সিনহা হত্যার তদন্ত যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে বিচার প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয় সেটি আমরা চাই। তিনি বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ থানা ও কক্সবাজারের পুলিশ এসপিসহ সবাইকে প্রত্যাহার করতে হবে। এর পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যাতে এটাই শেষ হয়, আর কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয় সে বিষয়ে আমরা দাবি জানাচ্ছি। মর্নিং শোজ দ্য ডে, এ পর্যন্ত আমরা সত্যিকার অর্থে দেখেছি, সরকার ও প্রশাসনের যে মনোভাব, তাতে তদন্ত কার্যক্রমে সিনহার মাও খুশি এবং রাওয়া অ্যাসোসিয়েশনেরও সবাই খুশি।
তিনি দাবি জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সংশ্লিষ্ট সব পুলিশ সদস্যের অস্ত্র সিজ (জব্দ) করতে হবে। যারা তদন্তভার নিয়েছে, আমরা জানি তারা অত্যন্ত দক্ষ। তারা তদন্ত নিরপেক্ষভাবে করবে। এই বিচার কার্যক্রম যদি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তবে সিনহা বা তার মতো যারা ভুক্তভোগী হয়েছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
তিনি বলেন, সিনহার বিষয়ে আজ আমরা সোচ্চার হতে পেরেছি। কিন্তু ওই লোকগুলো, ১৪০টি মার্ডার করেছে, তারা কোনো মুখ খুলতে পারছে না। তাদের পেছনে কেউ এগিয়ে আসছে না। আমরা চাই এমন সবগুলো ঘটনার যেন বিচার হয়। সিনহা হত্যার বিচার হবে এছাড়াও প্রদীপ যে সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেগুলোর বিচার হবে। যদি সুপারভিশন ঠিক থাকে তাহলে একটা পুলিশ এতো বেপরোয়া হতে পারে না। এটা তার (প্রদীপের) রং কনফিডেন্স গ্রো করেছে, বিকজ (কারণ) তার বিচার হয়নি। তাকে পুলিশ মেডেল দেয়া হয়েছে। সে যে একটার পর একটা আকাম-কুকাম করে যাচ্ছে, এটা নজরে কেউ আনেননি। কেন নজরে আনেনি আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।


আরো সংবাদ



premium cement