১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাদা পোশাকধারী লোকজন উঠিয়ে নিয়েছে সিফাতকে

পুলিশের মামলার তদন্ত র্যাবে ন্যস্ত

মেজর সিনহা হত্যা
-

কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের তথ্যচিত্র নির্মাণের সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। গতকাল সোমবার দুপুরের আগেই জামিন আদেশ জেলা কারাগারে পৌঁছায়। বেলা সোয়া ২টায় তিনি কারাগারের প্রধান ফটকে পৌঁছালে সাদা পোশাকধারী লোকজন তাকে নম্বরবিহীন একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যান। যার কারণে তিনি কারা ফটকে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতে পারেননি। তবে সিফাতের সাথে থাকা তার মামা মাসুম বিল্লাহ মুঠোফোনে, ‘সিফাত আমার সাথেই আছে।’ ঢাকায় ফিরতে কয়েক দিন বিলম্ব হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
টেকনাফের শাপলাপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সহকর্মী সায়েদুল ইসলাম সিফাতকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গতকাল বেলা ১১টার দিকে জামিনের আদেশ দেন। একই সাথে পুলিশের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তনের আবেদন মঞ্জুর করে র্যাবের কাছে মামলার তদন্ত ন্যস্ত করার আদেশ দেয়া হয়। ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। একটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়। এই মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও গুলিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলার আসামি করা হয় সিফাতকে। আর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় আসামি করা হয় শিপ্রা দেবনাথকে। গত রোববার দুপুরে জামিন পান সিনহার সাথে কাজ করা আরেক সদস্য শিপ্রা দেবনাথ। সিফাত ও শিপ্রা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
গত ৩ জুলাই সিনহার সাথে শিপ্রা, সিফাতসহ তিনজন কক্সবাজার আসেন ভ্রমণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ধারণ করতে। গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিষবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শাপলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব:) সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সাথে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেই থেকে তিনি কক্সবাজার কারাগারে বন্দী ছিলেন। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে সিফাতের জামিন আবেদন করেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। একই সাথে পুলিশের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন করে র্যাবের হাতে ন্যস্ত করার আবেদনও মঞ্জুর করেন আদালত। ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন বাদি হয়ে একই আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দলাল রতিসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত, এসআই নন্দলাল রতিসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একই আদালত র্যাবের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দলাল রতিকে সাত দিনের রিমান্ড এবং অপর চার আসামি কনস্টেবল সাফনুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এসআই লিটনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও মোহাম্মদ মোস্তফা আদালতে হাজির হননি। পুলিশের দাবি, এই নামে জেলা পুলিশে কেউ নেই। র্যাব গত শনি ও রোববার কারাফটকে চার আসামির জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছে।
আদালত প্রাঙ্গণে সিফাতের আইনজীবী ও জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আমরা পুলিশের সাজানো মামলা থেকে সিফাতের মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালতের বিচারক পাঁচ হাজার টাকা জিম্মায় সিফাতকে জামিন দিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে র্যাবকে ন্যস্ত করেছেন। সিনহা হত্যা মামলার একমাত্র সাক্ষী সিফাতকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আইনি কোনো সমস্যা নেই।’ এ দিকে নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোনের দায়ের করা হত্যা মামলায় চার আসামির কারাফটকে রিমান্ড শেষে আরো ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ১২ আগস্ট এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, যে ৪ জন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের পুলিশ পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, ‘৪ আসামির আবার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে।’
তদন্তের মূল শক্তি সিফাত ও শিপ্রার সাক্ষ্য : এ দিকে কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, মেজর (অব:) সিনহা হত্যার ঘটনা তদন্তে মূল শক্তি বা অন্যতম সাক্ষী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন কারামুক্ত সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ দেব।
বিশেষ করে নিহত সিনহার গাড়িতে থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষকারী সিফাত কী তথ্য দিচ্ছে, সে তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের তদন্ত প্রক্রিয়া এগোবে। বের হবে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডটির আসল রহস্যÑ এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে কথা হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহর সাথে।
গতকাল মুঠোফোনে তিনি বলেন, মেজর (অব:) সিনহা হত্যায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে সিফাতের সাথে পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। পরে অন্যান্য আসামির সাথে আলাপ আলোচনা করবেন। তিনি মনে করেন, এ মামলার জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। শিপ্রা দেবনাথ বয়সে ছোট। তাই আপাতত পরিবার পরিজনের সাথে আছে। আমাদের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে।
আশিক বিল্লাহ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তদন্ত সংস্থার। সে হিসেবে বিষয়টি আমরা দেখভাল করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement