২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় মৃত্যু ৩৩৯৯ এক দিনে ৩৪ জন

-

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরো ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা গতকাল রোববার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য জানান।
রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ২৪৮৭ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ জন হলো। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ৩৪ জনকে নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৯ জনে দাঁড়াল। আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে গত একদিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ১ হাজার ৭৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭০ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা আড়াই লাখ পেরিয়ে যায় গত ৭ আগস্ট। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা তিন হাজার স্পর্শ করে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় বুলেটিনে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ দিকে বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৬ লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে ছাড়িয়ে বিশ্বে এখন পঞ্চদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম।
ড. নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের ৩১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী। ৩২ জন হাসপাতালে এবং ২ জন বাড়িতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১ জনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এ ছাড়া ৬ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, ৭ জন খুলনা বিভাগের, ৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ২ জন রংপুর বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের ছিলেন। নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৩ হাজার ৩৯৯ জনের মধ্যে ২ হাজার ৬৮৬ জন পুরুষ এবং ৭১৩ জন নারী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এ ছাড়া ৯৭১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪৭১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২১৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৮৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৩৩ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১৮ জনের বয়স ১০ বছরের কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৯ টি। এ পর্যন্ত সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৯টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ, মোট শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
চট্টগ্রামে আক্রান্ত ১৫ হাজার ছাড়াল
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় ৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরো ৭৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ হাজার ৬৪ জনে। এর মধ্যে নগরের ১০ হাজার ৬০৩ জন ও বিভিন্ন উপজেলার ৪ হাজার ৪৬১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে দুইজন ও উপজেলায় ১ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ২৪৩ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৬৯ জন। হাসপাতালের হিসাবে মোট সুস্থ ৩ হাজার ১৩০ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্ট মতে, নতুন আক্রান্ত ৭৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন নগরের ও ৮ জন বিভিন্ন উপজেলার। সংক্রমণের হার ১৭.৪৬ শতাংশ। ল্যাবভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দিন সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বেসরকারি ল্যাব শেভরনে। এখানে ১৫৩ জনের নমুনায় নগরের ৩১ জন পজিটিভ বলে চিহ্নিত হন। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে ১১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নগরের ৬ জন ও উপজেলার ১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
বগুড়ায় আ’লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীর মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ দু’জন। নতুন করে আক্রান্ত ৫৬ জন এবং সুস্থও ৫৬ জন। বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার খায়রুল বাশার মমিন জানান, বগুড়া সদরের নারুলী এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ রিবু (৬২) গত ৪ আগস্টে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং শনিবার বিকেলে আইসিইউতে মারা যান। তিনি সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত কিয়াম উদ্দিনের ছেলে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। অপর দিকে রোববার একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী বন্দরের ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন (৭০) মারা গেছেন।
বগুড়ায় গরিবের ডাক্তার শামীমের মৃত্যু
এদিকে বগুড়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার রেজওয়ানুল বারী শামীম (৪৯) মারা গেছেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বেলা সোয়া ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি গত ২০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু অবস্থা খারাপ হলে তিনি গত ২৯ জুলাই বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থা আরো অবনতি হলে রোববার সকালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেয়ার পর মারা যান। তিনি বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর আব্বাস উদ্দিনের ছেলে ও বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার বাসিন্দা। তিনি তার ডাক্তার স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন। তিনি নিজ এলাকায় গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কারণ প্রতি শুক্রবার ফ্রি রোগী দেখতেন। তিনি সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন।
বাগেরহাটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আক্রান্ত
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: শাহিনুজ্জামান ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ স্বপন দাশ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল খুলনা মেডিক্যাল কলেজের ল্যাব থেকে পাঠানো রিপোর্টে তাদের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। সিভিল সার্জন ডা: কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জেলায় ৭১৮ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে ৫৫০ জন সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
রাজবাড়ীতে আক্রান্ত আরো ১১৭
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে বেড়েই চলছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ৬ আগস্ট পাঠানো ২৪৩টি নমুনার রিপোর্ট গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসে পৌঁছায়। এতে দেখা গেছে আরো ১১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এটা এক দিনে রাজবাড়ীতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৯০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৮৮৩ জন এবং মারা গেছে ১৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে দৈনিক নয়া দিগন্তের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি এম মনিরুজ্জামান গতকাল করোনায় আক্রান্তের পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা: মো: নুরুল ইসলাম জানান, আক্রান্তদের মধ্যে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৬৬৩ জন, হসপিটালে ভর্তি ২৯ জন।
বাজিতপুরে আক্রান্ত আরো ৩
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, বাজিতপুরে আরো ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৬ আগস্ট পাঠানো নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে নতুন করে ৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বাজিতপুর পৌরসভা কার্যালয়ের দুইজন এবং অন্য এক নারী রয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলায় সর্বমোট ১৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
কুমিল্লায় নতুন আক্রান্ত ৪৪ জন
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় রোববার নতুন করে ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৬৭ জনের। জেলায় এ দিনে ৫৬ জনসহ সর্বমোট সুস্থ হয়েছে চার হাজার ৪১৪ জন। এ দিনে মৃত্যু নেই। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছে ১৫০জন। গতকাল সিভিল সার্জন অফিস এই তথ্য জানায়।
চৌগাছায় আক্রান্ত আরো ৬
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, চৌগাছায় স্বাস্থ্য সহকারীসহ আরো ছয়জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: লুৎফুন্নাহার লাকি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে উপজেলায় মোট করোনা রোগী সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১ জন।
আদমদীঘিতে ব্যাংকারসহ আক্রান্ত ৩
আদমদীঘি (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাসহ তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হলেন, আদমদীঘি সোনালী ব্যাংক শাখার সিনিয়র অফিসার মাহফুজার রহমান, কাল্লাগাড়ি গ্রামের আজিজার রহমান ও উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী সাখাওয়াত হোসেন। গত শনিবার রাতে তাদের পরীক্ষা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮ জন।
গোয়ালন্দের চিকিৎসকের মৃত্যু
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, গোয়ালন্দের বাসিন্দা বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: মো: গোলাম মোস্তফা (৭৫) গত শনিবার রাতে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন।
রাজশাহীতে আরো একজনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনায় রাজশাহীতে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের জানান, গোটা বিভাগে এখন মৃতের সংখ্যা ১৯৩ জন। এর মধ্যে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ২৯ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটজন, নওগাঁয় ১৪ জন, নাটোরে একজন, জয়পুরহাটে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১১ জন ও পাবনায় ৯ জন মারা গেছেন। শনিবার বিভাগে নতুন ১৬১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement