২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঋণ পুনর্গঠনে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে

-

ঋণ পুনর্গঠনে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধির সময়সীমা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে অবশিষ্ট মেয়াদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারত। এখন তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সঙ্কটে রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঋণ আদায় কমে গেছে। এতে বেড়ে গেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ। একে তো ঋণ আদায় কমে গেছে। পাশাপাশি কমে গেছে আমানতের পরিমাণ। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উভয় সঙ্কটের মুখে পড়েছে। এ সঙ্কট কাটাতেই ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যান ও আইআইডিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান সঙ্কট কাটাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে তাদের বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে ছয়টি দাবি জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে একটি দাবি ছিল ঋণ পুনর্গঠনের মেয়াদ বাড়ানো। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অবস্থার কিছুটা হলেও কাটানো সম্ভব হবে।
জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে ১ বা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চলমান খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন করতে পারত। যেমন, আগে এক বছরের ঋণ বকেয়া থাকলে ২৫ শতাংশ সময় অর্থাৎ তিন মাস বাড়িয়ে এক বছর তিন মাস করা যেত। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় তা ৫০ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এক বছরের ঋণ বকেয়া থাকলে আরো ৬ মাস সময় বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহক এক বছরের বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে দেড় বছর পর্যন্ত সময় পাবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চরম দুর্দিন বিরাজ করছে। বিশেষ করে করোনাকালীন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগও করতে পারছে না। অবশ্য করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই সঙ্কট শুরু হয়। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় পিপলস লিজিং অবসায়ন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারি ও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে না পারার প্রভাব পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ে। এ কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত প্রত্যাহারের বাড়তি চাপ ছিল আগ থেকেই। এর ওপর মার্চ থেকে নতুন করে যুক্ত হয় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। একই সাথে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জুন পর্যন্ত, পরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের ওপর ব্যবসায়ীদের ছাড় দেয়া হয়।
বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে কেউ ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে ঋণখেলাপি বলা যাবে না। এতে ঋণ পরিশোধ বলা চলে বন্ধ করে দেন উদ্যোক্তারা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ আদায়ের ওপর। এক দিকে নগদ আদায় কমে যাওয়া, অপর দিকে আমানত প্রত্যাহারের চাপÑ সবমিলে উভয় সঙ্কটে পড়ে যায় দেশের ব্যাংকবহির্ভূত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা চেয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। একই সাথে নগদ জমার হার (সিআরআর) হার কমানোর দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিআরআর হার এক শতাংশ কমিয়ে প্রতিদিন ১ শতাংশ এবং ২ সপ্তাহ অন্তে দেড় শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্দিন কাটছে না শিগগিরই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রয়োজন তারল্য সহায়তা দেয়া। কিন্তু সেই তারল্য সহায়তার আশ্বাস কোথাও থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ একদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য বলা চলে বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের আপদকালীন ব্যয় মেটাতে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা স্থায়ী আমানত উত্তোলন করতে চাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার কারণে কেউ ঋণ পরিশোধ করছে না। এতে তারা এখন উভয় সঙ্কটে পড়ে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ায় জন্য তারল্যসহায়তার বিকল্প নেই।
বলা হচ্ছে, ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে কোনো ব্যাংকই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যারান্টার হতে চাইবে না। তাহলে কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে? তিনি বলেন, হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিসহায়তা দেয়া হোক, অন্যথায় তারল্য সহায়তা দেয়া হোক। এ দুয়ের কোনো বিকল্প নেই বলে ওই এমডি মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement