২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ড্রেন নির্মাণখরচ সড়কের দ্বিগুণ

গাড়ি না কিনলেও জ্বালানি ও মেরামত ব্যয়

প্রতি কিমি নির্মাণব্যয় ৭০.৪৫ লাখ; প্রতি কিমি ড্রেন নির্মাণখরচ ১ কোটি ৭৪ লাখ; রাজধানীতে ড্রেনে; গড় ব্যয় কিলোমিটারে ৫২ লাখ
-

খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে। পৌরসভার সড়ক নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে যে পরিমাণ খরচ হবে তার দ্বিগুণেরও বেশি খরচ হবে প্রতি কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণে। এমনকি রাজধানী ঢাকা সিটির চেয়ে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ খরচ দ্বিগুণের বেশি। ঢাকা শহরে সমাপ্ত একটি প্রকল্পে ড্রেন নির্মাণে গড় ব্যয় কিলোমিটারে ৫২ লাখ টাকা। ঘটনাটি ফেনী পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে। এখানে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৭০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর ড্রেন নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে এক কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। অন্য দিকে সম্ভাব্যতা যাচাই ও মাস্টার প্ল্যান ছাড়াই পৌরসভার প্রায় ৩৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের দেয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ফেনী পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পিইসি করার জন্য পাঠানো হয়েছে। দু’টি অর্থবছরে অর্থাৎ ২৪ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এখানে প্রকল্প ব্যয়ের ৯৭ শতাংশই খরচ হবে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণে। বিসি, সিসি, আরসিসিতে ৩২ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, নগর এলাকার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে নবাগত এবং বসবাসরত নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা প্রদান করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই রূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকার প্রধান প্রধান নগরের সার্বিক ছোট ছোট শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই প্রক্রিয়া চলমান আছে। ঘোষিত পৌরসভার সংখ্যা ৩২৮টি। এসব পৌরসভা মূলত পৌরবাসীর সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এর পরও অপর্র্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা এবং তার চেয়েও অপর্যাপ্ত সম্পদের কারণে নগরবাসীর ন্যূনতম অবকাঠামো চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই পৌরসভায় মোট ৩২ দশমিক ৮৯ কিলেমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে ৭০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর ৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায় একই পৌরসভায়। প্রতি কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণে খরচ হবে এক কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। যা প্রকল্পে সড়ক নির্মাণের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি খরচ হবে প্রতি কিলোমিটারে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় কোনো গাড়ি ক্রয়ের সংস্থান না থাকলেও পেট্রল বা তেল বাবদ ২৪ মাসে আড়াই লাখ টাকা এবং গ্যাস ও জ্বালানি বাবদ দেড় লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, যা বাদ দেয়া প্রয়োজন। প্রকল্পে মোটরযান কেনা না হলেও তা মেরামত বাবদ দুই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। দু’বছর মেয়াদি প্রকল্পে চার লাখ টাকার কম্ডিউটার কেনা হবে। আর তার জন্য মেরামত খরচ এক লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
আইএমইডির এক প্রতিবেদনে তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে ড্রেন নির্মাণের খরচ ফেনী পৌরসভাতে দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকা দক্ষিণে নর্দমা বা ড্রেন নির্মাণে ৬৭ দশমিক ৫৬ কিলোমিটারে খরচ হয় ৪১ কোটি ২৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
ঢাকা উত্তরে ৪৬ দশমিক ০২২ কিলোমিটারে ২১ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ৪৬ লাখ ১২ হাজার টাকা। সেনাবাহিনী যে অংশ করেছে, তাতে ৩৭ দশমিক ১১৫ কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে। যেখানে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ছিল ৫৩ লাখ দুই হাজার টাকা। আর স্থানীয় সসরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলডিইডি) ১৬ দশমিক ১৬৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছে ছয় কোটি ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে। এখানে কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৪২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এখানে ডিপিপিতে তুলনামূলক ব্যয়ে দেখানো হয়েছে চলমান প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার পাকা ড্রেনে খরচ এক কোটি টাকা ও সমজাতীয় প্রকল্পে ৯৫ লাখ টাকা। একটি পৌরসভায় ড্রেনের খরচ সেটার তুলনাও অনেক বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো: সেলিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেহেতু প্রকল্পটি ২৫ কোটি টাকার বেশি, সুতরাং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা প্রয়োজন। পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া প্রায় ৩২ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার সড়ক ও ৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজ টেকসই হবে কি না? সড়ক ও ড্রেনের একটি তালিকা যুক্ত করা হলেও সড়ক ও ড্রেনগুলো কি প্রস্থে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় কোনো গাড়ি ক্রয়ের সংস্থান না থাকলেও পেট্রল বা তেল বাবদ ২৪ মাসে আড়াই লাখ টাকা এবং গ্যাস ও জ্বালানি বাবদ দেড় লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটা অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, যা বাদ দেয়া প্রয়োজন। প্রকল্পে মোটরযান কেনা না হলেও তা মেরামত বাবদ দুই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। দু’বছর মেয়াদি প্রকল্পে চার লাখ টাকার কম্পিউটার কেনা হবে। আর তার জন্য মেরামত খরচ এক লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এই ব্যয়ের যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। এতটা হেরফেরের কোনো যৌক্তিকতা পাচ্ছি না। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনো ব্যাখ্যা থাকলেÑ সেটা আমার কাছে নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল