১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি

আমন বীজতলা নষ্ট; ব্রাহ্মপুত্রের ভাঙনে নিঃস্ব ৫০০ পরিবার; পানের বরজ প্লাবিত
রাজধানীর চার পাশে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল। খিলগাঁও ত্রিমোহনীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরার ছবিটি তুলেছেন আমাদের সিনিয়র আলোকচিত্রী নাসিম সিকদার -

বিভিন্ন স্থানে বন্যা পারিস্থিতির আবারো অবনতি হয়েছে। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে পাঁচ শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। আগৈলঝাড়ায় কৃষকের পানের বরজ প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পাইকগাছায় আমন বীজতালা নষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জের আশপাশে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
দোহার ও নবাবগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : ঢাকা জেলা প্রতিনিধি জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অন্য দিকে সাভারের বংশী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এতে দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধের নিম্নাঞ্চল বিস্তীর্ণ প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের তিতপালিদয়া, পানিকাউর, কঠুরি, আশয়পুর, রায়পুর, ঘোষাইল, কেদারপুর, আর ঘোষাইল, রাজাপুর, বালেঙ্গা, কান্তারটেক, খাটবাজার, নয়াডাঙ্গী, চারাখালী ও পশ্চিম সোনাবাজু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
অপর দিকে দোহার উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর, সুতারপাড়া, নারিশা ও মুকসুদপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। এ ছাড়া উপজেলার ধোয়াইর বাজারসহ পূর্ব ও পশ্চিম ধোয়াইর গ্রামের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা বাজার, বিলাসপুরের মধুরচর, রানীপুর, কৃষ্ণদেবপুর, রাধানগর, মাহমুদপুরের নারায়ণপুর, হরিচণ্ডি ও মুকসুদপুরের পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলের অনেক এলাকা পানির নিচে। ফলে পদ্মানদী তীরবর্তী এই মানুষগুলো প্রাণ বাঁচাতে ও জীবিকার তাগিদে অন্যত্র সরে যাচ্ছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে স্কুল, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। নৌকা না থাকায় অনেকেই কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করেও হাটবাজার করছে। সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। পদ্মার পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে এসব অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো। গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ দিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধি কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টির কারণে নবাবগঞ্জ উপজেলার কাশিয়াখালীর রক্ষা বেড়ি বাঁধটি হুমকিতে রয়েছে বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, প্রশাসনের উদ্যোগে বন্যাকবলিতদের মধ্যে সহায়তা করা হয়েছে। নতুন করে যদি কোনো চাহিদা থাকে তাহলে তালিকা করে সেটাও করা হবে বলে জানান তিনি।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, দোহারে পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে। এ ছাড়া মুকসুদ এলাকায় গাজী ইসলামিয়া মাদরাসায় আশ্রয় নেয়া পানিবন্দীদের মধ্যে ত্রাণ ও রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সাভারের বংশী নদের পানি : নিয়মিত বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে সাভারের বংশী নদের পানি। ফলে সাভারের বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দিন যাপন করছেন। হতদরিদ্র এসব বানভাসিদের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে সাভার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর।
গতকাল সকালে সাভার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর তার নিজ উদ্যোগে বানভাসিদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিলÑ চাল, তেল, আলু, মুড়ি, আটা ইত্যাদি। এ সময় তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ গণ্যমান্য অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আশুলিয়ায় বন্যাদুর্গতদের খাদ্যসহায়তা প্রদান
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, আশুলিয়ায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা প্রদান করেছেন শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ।
গতকাল সকাল থেকে বিকেলে পর্যন্ত শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন এলাকায় নৌকাযোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দকৃত বন্যাদুর্গতদের জন্য এ খাদ্যসামগ্রী ২০০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী, গাজীবাড়ী, শ্যামেরটেকী, নাল্লাপোল্লা, রাঙ্গামাটি, নৈহাটি, ছনটেকী, পাড়াগ্রাম, গনকপাড়া, বাউনিয়া, ভাটিয়াকান্দি, কালিকাপুর, লালারটেক, শিমুলিয়া বাজার, নরপাড়া, রায়পাড়া, নতুন বন্দর, চাঙ্গিরদিয়া, কাছৈর, রনস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনো খাবার পৌঁছে দেন। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিলÑ চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, চিঁড়া ও নুডুলস।
এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সোহরাফ হোসাইন, শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী আলমগীর হোসেন মধু, আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব পরামানিক, শিমুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নেওয়াজ পালোয়ান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থী ফারুক হোসেন, রতন সরকার, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নাসরিন ও সজিবসহ সব ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরা।
এ দিকে একই দিন বিকেলে আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে শিমুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোল্লা, আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শহীদুল্লাহ মুন্সীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন : বাড়িঘরের পর এবার বিলীনের পথে সড়ক
নিজের বাড়ির সামনে বসে আছেন ৭১ বছর বয়সী গিয়াস উদ্দিন। তার চোখ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রের খরস্রোতে। তীব্র বাতাসের ঝাপটায় নদের ঢেউ বাড়ির আঙিনায় উঠে পড়ছে। বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া পাকা সড়কটির অনেকটাই ভেঙে পড়েছে।
গিয়াস উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা মরিচারচর গ্রামে। তিনি জানান, ১৯৮৪ সাল থেকে নদীভাঙনের শিকার। তিনবার ভেঙেছে তার বসতবাড়ি। ভাঙনে তলিয় গেছে ফসলের জমি। সর্বশেষ ২০১১ সালে তৃতীয়বার নদীভাঙনে বাড়িটি বিলীন হয়ে গেলে বর্তমান বাড়িটি তৈরি করেন। এটিও এখন ভাঙনের মুখে।
গিয়াস উদ্দিনের মতো মরিচারচর গ্রামের আরো অনেক পরিবার গত ১০ বছরে নিজেদের বসতবাড়ি হারিয়েছেন। এ বছরও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ২৯টি বাড়ি বিলীন হয়েছে বলে গ্রামবাসী জাগ্রণ। বাড়িঘর বিলীন হওয়ার পর এবার ভাঙতে শুরু করে গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র পাকা সড়কটি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মরিচারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বটতলা মোড় থেকেই উত্তর মরিচারচর পর্যন্ত আনুমানিক চার কিলোমিটার পাকা সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশই নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। বটতলা মোড় থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার অংশজুড়েই অসংখ্য স্থানে পাকা সড়কের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ওই সব অংশে ঝুঁকি নিয়ে রিকশা, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নদের এ ভাঙন অন্তত ৩০ বছর আগে শুরু হয়। গত ৮ বছরে এ ভাঙন তীব্রতা পায়। এতে নদীর গতিপথই বদলে গেছে। গত ৩০ বছরে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো কেউ কেউ নিজেদের জমিতে আবার কেউ কেউ অন্যের জমিতে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন।
উত্তর মরিচারচর অংশে চলতি বছর বেশি ভেঙেছে বলে জানান গ্রামবাসী। সেখানে গিয়ে কয়েকটি পরিবারের সাথে কথা হলে তারা জানান, এ বছর নদীভাঙনে ২৯টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের শিকার আজিজুল হক বলেন, মাসখানেক আগে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যায় তার বাড়ি। বিলীন হওয়া বাড়ির পাশেই আপাতত একটি বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে তার পরিবার। সরকারিভাবে টিন ও বাড়ি নির্মাণের জন্য ছয় হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। কিছু চাল-ডাল পেলেও ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। তিনি নিজে ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করেন। জানা যায়, ভাঙনে বাড়িঘর বিলীনের পর গ্রামের একমাত্র সড়কটিও ভাঙনের কবলে পড়ায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। চর এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে চলাচল করে। নিজেদের উৎপাদিত বেগুন, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি তারা শহরে নিয়ে যান। গ্রামবাসী বলছেন, ওই এলাকায় সরকারিভাবে ব্রহ্মপুত্র নদে খননকাজ চলছে। খননকাজ নদের মূলধারায় হচ্ছে না। ওই খননকাজ নদের মূলধারায় হলে ভাঙন রোধ হতে পারে। এ দাবিতে সম্প্রতি মরিচারচর গ্রামের মানুষ মানববন্ধন করেছেন।
ভাঙনের কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে রিকশা ও ইজিবাইক। ভেঙে যাওয়া কয়েকটি স্থানে সরকারিভাবে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে তাতে ভাঙনের ঝুঁকি পুরোপুরি কমেনি। গ্রামবাসীর আশঙ্কা, পানি কমতে শুরু করলে এ ভাঙন আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেতে পারে।
ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পের পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, গ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খননের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। নকশা পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এতে ভাঙন ৮০ ভাগ কমে যেতে পারে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: জাকির হোসেন বলেন, এ বছর ওই এলাকার ২৭টি বাড়ি ও ২০ একর জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নদীভাঙন রোধে এবং সড়কটি টিকিয়ে রাখতে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডবিউটিএ) চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে মরিচারচরে নদীভাঙন রোধ হবে বলে তিনি মনে করেন।
আগৈলঝাড়ায় ডুবে গেছে পানবরজ
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উত্তরের নদ-নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে ডুবে যাচ্ছে পানচাষিদের পানের বরজ। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন দিশেহারা পানচাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ২ শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে পান চাষের সাথে ২২ শ’ ৫০ পরিবার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই ব্যবসার সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। এসব পরিবারের একমাত্র উপার্জন ছিল পানবরজ। অল্পদিনে পান বাজারজাত করা যায় বলে অনেকেই পানচাষে আগ্রহী হয়ে ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করে পানবরজ করেছিলেন। সচরাচর এত বেশি পানি না হওয়ায় কৃষিজমির অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে পান চাষ করায় কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ, উত্তরের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও এলাকার ওপর দিয়ে সাগরের পানি নামার কারণে উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিচু জমির পানবরজগুলো পানিতে ডুবে পানের লতা মরে গিয়ে পানবরজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়। ওই ইউনিয়নের বাশাইল, রাজিহার, রাংতা, কান্দিরপাড়, রামের বাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানবরজের ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়াও বাকাল ইউনিয়নেও পানবরজ তলিয়ে যাচ্ছে। পানের লতায় গোড়ায় একবার পানি জমলে লতাগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে মরে যায়। তাই পানবরজের চারদিকে বাঁধ দিয়ে মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে চাষিদের পানবরজ রক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি অফিস থেকে। এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ হেক্টর জমির পানবরজ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানায় কৃষি অফিস। এ দিকে বর্তমানে পানের বাজারমূল্য কম থাকায় হাটবাজারেও পান বিক্রি করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। চাষিরা তাদের শেষ সম্বল পানবরজ রক্ষায় মাটি ও পলিথিন ব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে পানবরজ রক্ষায় দিন-রাত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: নাসির উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের বিষয়ে চিন্তা করে কোনো সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করলে চাষিরা উপকৃত হবেন।
চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা
পাইকগাছায় বাঁধ ভেঙে ৩ গ্রাম প্লাবিত
পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের চক্রিবক্রি জলমহালের বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমন ধানের বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করে প্লাবিত এলাকা রক্ষার চেষ্টা করেন।
উপজেলার দ্বীপবেষ্টিত ৪ নম্বর দেলুটি ইউনিয়ন গত ঘূর্ণিঝড় আমফানে শিবসা নদীর গেওয়াবুনিয়া ও কালিনগরের ওয়াপদার বাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। এর ক্ষতির রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত বুধবার দুপুরে জোয়ারের পানির চাপে চক্রিবক্রি বদ্ধ জলমহালের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে গেওয়াবুনিয়া, পারমধুখালী ও চক্রিবক্রির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলা, মৎস্যঘের, ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, খুলনার আনাম চক্রিবক্রির ৩৭ একর জলমহালটিতে মাছ চাষ করে আসছেন। অথচ খালের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দু’টি বাঁধ মেরামত না করায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে জোয়ারের পানির চাপে উত্তর পাশের বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়। শুক্রবার সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডলের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি মেরামত করলেও বাঁধটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, জলমহালটির ইজারা বাতিল করা হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার রিপোর্ট প্রদানের জন্য কানুনগোকে পাঠানো হয়েছে। টেকসই বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তলিয়ে যেতে শুরু করে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী এলাকা। বন্যার সাথে সাথে নদীর তীরবর্তী অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মাজবাড়ি, ভাসারপাড়া, খদ্দবাসপাতারসহ কয়েকটি গ্রাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিলীন হয়ে যায় নদীতে। সাথে সাথে বন্যার তোড়ে ভেসে যায় বাড়িঘর, তছনছ হয়ে যায় শত শত পরিবারের সাজানো সংসার। বাড়িঘর হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নেয়া মাজবাড়ির মহিনুনেচ্ছা বলেন, বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে প্রবল স্রোতে নিমিশেই পুরো গ্রাম ভেঙে তলিয়ে যায়, ভেসে যায় বাড়িঘর অনেক চেষ্টা করে ঘরের কিছু জিনিস রক্ষা করতে পারলেও ঘরের টিনসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেসে গেছে। একই কথা জানালেও ভাসার পাড়া এলাকার মনতাজ আলী। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তাফা বলেন, নদীভাঙনের সাথে বন্যার পানির তোড়ে মাজবাড়ি ও ভাসারপাড়া কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ভেসে যায়। তিনি আরো জানান, প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার নিমিশেই তাদের সাজানো সংসার হারিয়ে ফেলেন, অনেকে ঘর ও ঘরের জিনিসপত্র কিছুটা রক্ষা করতে পারলেও অনেকে সব হারিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে যানা গেছে গৃহহীন মানুষগুলো সালিপাড়া, খদ্দ, মনতোলা, আমতলিসহ বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়ে অনেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মানবতের জীবন যাপন করলেও নতুন করে সংসার সাজানোর চিন্তা আর ভাবনায় দিশাহারা পরিবারগুলো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, বন্যার্ত ও ভাঙনকবলিত এলাকায় ত্রাণকার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং গৃহহারা মানুষের জন্য পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সকল