২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
উচ্চপর্যায়ের কমিটির তদন্ত শুরু : ১৬ পুলিশ প্রত্যাহার

পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনাকর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তোলপাড়

-

কক্সবাজারের টেকনাফ শাপলাপুর মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬) নিহতের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। টেকনাফ স্টেশন ও শাপলাপুরসহ সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সৃষ্টি হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। যেখানে মেজর সিনহাকে গুলি করা হয়েছে সেই স্থানসহ পুরো শাপলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্র এলাকাটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এক প্রকার ঘিরে রেখেছে। পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে পরিচিত পুলিশ কেউ নেই। সেনাসদস্যদের টহল চোখে পড়ার মতো। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সরকারি সংস্থাগুলোর তদন্ত দল কিংবা পদস্থ কর্মকর্তাদের একের পর এক আগমন চোখে পড়ার মতো। সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘটনাস্থলের এমন চিত্রই দেখা গেছে শাপলাপুরে।
৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনাকর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬)। এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজনসহ সব মহলকে স্তম্ভিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মেজর সিনহা প্রায় এক মাস যাবৎ শুটিংয়ের কাজ করছিলেন। তাই তার যাতায়াত সম্পর্কে পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানতেন। তিনি এক প্রকার পরিচিত হয়ে উঠছিলেন ওই এলাকায়। এ কারণে এই ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। সূত্র মতে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনা তদন্তে যায়। এ সময় এলাকার লোকজন সেনাবাহিনীর তদন্ত দলটিকে দেখে এগিয়ে আসেন। তদন্ত দলের কর্মকর্তারা স্থানীয়দের কাছে শুক্রবার রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী সেনাকর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেট কারের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা ছিল একটি নির্মম ঘটনা। তারা জানান, প্রাইভেট কারের ওই আরোহী (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের নির্দেশ মতে ওপরে দুই হাত তুলে ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে অহেতুক উত্তেজিত না হতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা তদন্ত দলের কাছে আরো বলেন, মেজর সিনহা এমন কথা বলার সাথে সাথেই অশ্রাব্য একটি গালি দিয়ে তার (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালিয়ে দেন পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন। সাথে সাথেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় শাপলাপুর বাজারের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সেনা দলের কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘আমাকে যেখানেই নিয়ে যান আমি সত্য কথা বলব। পুলিশ ক্রসফায়ারের মতো করে একজন জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, গাড়ি থেকে নামার পরপরই পুলিশ ইন্সপেক্টর গাড়ির আরোহীর (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালিয়ে দেয়।
তবে পুলিশ দাবি করেছে, পুলিশের একটি বহর মেজর (অব:) সিনহার গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অস্ত্র বের করেন। এ সময় আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি করে। এই ঘটনার পর টেকনাফ থানায় যে মামলা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘কমিউনিটি পুলিশের সদস্য নুরুল আমিন (২১) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফাঁড়ির ইনচার্জকে মুঠোফোনে জানান, কয়েকজন ডাকাত পাহাড়ে ছোট ছোট টর্চলাইট জ্বালিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। স্থানীয় মারিশবুনিয়া নতুন মসজিদের মাইকে পাহাড় থেকে ডাকাত নেমেছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। ডাকাত প্রতিহত করতে এলাকার সবাইকে একত্র হতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর দুই ব্যক্তি নেমে আসে। এজাহারে আরো বলা হয়, পাহাড় থেকে নেমে আসা দুইজনকে শনাক্ত করার জন্য তাদের দিকে মো: মাঈন উদ্দীন নামের (১৯) এক ব্যক্তি টর্চলাইটের আলো ফেললে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা একজন অস্ত্র উঁচিয়ে তাকে গালি দেন। পরে তারা দুইজন সিলভার রঙের প্রাইভেট কারে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা হয়। এ খবর নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জকে জানান। ইনচার্জ জানান টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে। ওসির নির্দেশে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে রাত সোয়া ৯টার দিকে শাপলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে যানবাহন তল্লাশি শুরু হয়। মামলার বাদি নন্দদুলাল রক্ষিত এজাহারে উল্লেখ করেন, মিনিট বিশেক পর তল্লাশি চৌকির সামনে থামার জন্য প্রাইভেট কারকে সঙ্কেত দেয় পুলিশ। কিন্তু গাড়িটি সঙ্কেত উপেক্ষা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ইনচার্জ লিয়াকত আলী তল্লাশি চৌকিতে থাকা ব্লক দিয়ে গাড়িটির গতিরোধ করেন এবং হাত উঁচিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিকে বের হতে বলেন। ওই সময় গাড়িচালকের আসনে থাকা ব্যক্তি তর্ক শুরু করেন। তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর বলে পরিচয় দেন। তার পাশে বসা ব্যক্তি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। ফাঁড়ির ইনচার্জ এ সময় গাড়িচালকের আসনে বসা ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নেমে হাত মাথার ওপর উঁচু করে ধরে দাঁড়াতে বলেন এবং বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। কিছুক্ষণ তর্ক করার পর সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেয়া ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন। লিয়াকত আলী নিজের ও সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সদের জানমাল রক্ষার্থে সাথে থাকা পিস্তল দিয়ে চারটি গুলি করেন।’ ঘটনার পর সিনহা যে গেস্টহাউজে উঠেছিলেন সেই গেস্টহাউজে সিনহার কক্ষে তল্লাশি করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখান থেকে বিদেশী মদ ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
তবে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এ বিষয়ে জানান, ঈদের সময় দেশে উগ্রবাদী হামলা হতে পারে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতরের সতর্ক বার্তা ছিল। এ নিয়ে বাড়তি সতর্কতায় ছিল জেলা পুলিশ। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এক প্রকার রেড এলার্টে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে শাপলাপুরের একটি পাহাড় থেকে নেমে আসা লোকজনের খবর শুনে পুলিশ হয়তোবা ডাকাত নতুবা উগ্রবাদী সন্দেহ করে ওই গাড়িটিকে টার্গেট করেছিল। পুলিশ সুপার আরো বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর।
এই ঘটনার বিষয়ে ইতোমধ্যে প্র্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) একটি গোপন তদন্ত প্রতিবেদন ভাইরাল হয়েছে। প্রতিবেদনে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন অপরাধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘হত্যার প্রতিযোগিতায়’ লিপ্ত থাকা পুলিশ একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যায়ও দ্বিধা করেনি। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মেজর (অব:) সিনহা তার অস্ত্র বের করেননি। যখন তাকে গাড়ি থেকে বের হতে বলা হয়, তখন তিনি হাত উঁচু করে বের হন। এরপর কোনো বাতচিত ব্যতিরেকেই তাকে গুলি করে হত্যা করেন পুলিশ বহরপ্রধান এসআই লিয়াকত। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ মেজর (অব:) সিনহাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখে পুলিশ, ‘পুলিশ কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃতদেহ হাসপাতালে আনা একটি পৈশাচিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। ‘প্রতিবেদনের মন্তব্য বিভাগে বলা হয়, টেকনাফ পুলিশের মধ্যে মাদক নির্মূলের নামে এক ধরনের ‘হত্যার প্রতিযোগিতা’ বিদ্যমান। এই ‘প্রতিযোগিতা’ অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো দিবে বলে ধারণা করা যায়।’ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের ‘প্রত্যক্ষ সাক্ষী নির্মূল করার প্রয়াসে’ গাড়িতে মেজর (অব:) সিনহার একমাত্র সঙ্গী সিফাত, যাকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর আটক করে নিয়ে যায়, তাকে ‘যেকোনো সময় অস্ত্র বা মাদক উদ্ধার অভিযানের নামে হত্যা করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’ সিনহার শরীরের ওপরের অংশ কর্দমাক্ত এবং বুক ও গলা গুলিবিদ্ধ ছিল এবং হাতকড়া লাগানোর দাগ ছিল বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। পাহাড় থেকে নেমে মেজর (অব:) সিনহা সিফাতকে নিয়ে নিজস্ব প্রাইভেট কারে ওঠেন। রাত ৯টার দিকে তারা পৌঁছান শাপলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে। সেখানে আগে থেকেই ডাকাত প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের সদস্যরা। পুলিশের সঙ্কেত পেয়ে মেজর (অব:) সিনহা গাড়ি থামান এবং নিজের পরিচয় দিলে প্রথমে তাদের চলে যাওয়ার সঙ্কেত দেয়া হয়। পরে পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাদের পুনরায় থামান এবং তাদের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। সিফাত হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পেছনের দিকে গিয়ে দাঁড়ান। মেজর (অব:) সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত তাকে তিনটি গুলি করেন। গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে ঘটনার এভাবে বর্ণনা আছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গুলি করার পরপরই রাত পৌনে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় জনগণ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাঠকর্মী সার্জন আইয়ূব আলী। তখন গুলিবিদ্ধ সেনাকর্মকর্তাকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পান তারা। সার্জন আলী ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করতে চাইলে পুলিশ আইয়ূবের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পর পুলিশ আইয়ূবের হাত থেকে মুঠোফোন সেট ও তার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে আনা হয় একটি মিনিট্রাক। ট্রাকে ওঠানোর সময়ও মেজর সিনহা জীবিত ছিলেন এবং ছটফট করছিলেন। এরপর সিনহাকে নিয়ে ট্রাকটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর। তখন হাসপাতালের চিকিৎসক সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ১ ঘণ্টার পথ। অতিরিক্ত ৪৫ মিনিট অতিবাহিত করা পুলিশের একটি অপকৌশল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনের শেষে ‘মাদক নির্মূল অভিযানের নাম করে সচরাচর হত্যা বন্ধ করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করারও’ সুপারিশ করেছে ডিজিএফআই।
শুটিং করতে কক্সবাজারে এসেছিলেন সিনহা : ৩ জুলাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসেন মেজর (অব:) সিনহা। তার নিজস্ব ‘জাস্ট গো’ নামে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন প্রাকৃতির দৃশ্য নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি। তার সাথে ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজনসহ মোট চারজন। ওঠেন মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি ঝরনা এলাকার নীলিমা রিসোর্টে। প্রায় এক মাস তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং সম্পন্ন করেন। ৩১ জুলাই বিকেলে সিফাতকে নিয়ে মেজর (অব:) সিনহা কক্সবাজার থেকে টেকনাফের শাপলাপুর পাহাড়ে যান। এ সময় সাবেক এই সেনাকর্মকর্তার পরনে ছিল সামরিক পোশাক (কম্ব্যাট টি-শার্ট, কম্ব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট)। নিহত সেনাকর্মকর্তা সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এরশাদ খান। সিনহা ৫১ বিএমএ লং কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব¡ পালন করেন। এ দিকে নীলিমা রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মো: সোলাইমান মনজুর জানান, দুই মাসের জন্য রিসোর্টটি ভাড়া নিয়েছিলেন মেজর (অব:) সিনহা। আলাদা আলাদা কক্ষে থাকতেন চারজন। ৩১ জুলাই বিকেলে সিনহা ও সিফাত প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ শুটিংয়ে যান। রিসোর্টে ছিলেন দুইজন। রাত ২টার দিকে রিসোর্টের একজন কর্মচারী মনজুরকে মুঠোফোনে জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ সিনহার রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে কিছু মদের বোতল ও গাঁজা উদ্ধার করেছে। এ সময় একজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, এই ঘটনায় টেকনাফ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সিনহার গাড়ি ও নীলিমা রিসোর্ট তল্লাশি করে জার্মানিতে তৈরি একটি পিস্তল, ৯টি গুলি, ৫০টি ইয়াবা, দু’টি বিদেশী মদের বোতল এবং চার পোটলা গাঁজা উদ্ধার করেছে।
১৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার ও তদন্ত শুরু : পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনাকর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় বাহারছড়া ফাঁড়ির ইনচার্জসহ ১৬ সদস্যকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার ওই পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় যুক্ত থাকায় ওই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকতসহ ১৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ দিকে সাবেক সেনাকর্মকর্তা সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার থেকে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ওই ঘটনার পর প্রথমে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা পুনর্গঠন করা হয়। ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্গঠন করা কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। পুনর্গঠিত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি, পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত দিতে বলা হয়েছে। এ দিকে ২ আগস্ট কক্সবাজারে আসেন পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো: জাকির হোসেন। সোমবার বিকেলে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ পরিদর্শন করেন ডিআইজি।
সিনহার মাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন, বিচারের আশ্বাস
ইউএনবি জানিয়েছে, টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক মেজর সিনহার পরিবারকে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিনহার মাকে টেলিফোনে সান্ত¡না দেন প্রধানমন্ত্রী, বলেন তার প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী সিনহার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। অন্য দিকে নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিনহার পরিবার। গত ৩১ জুলাই রাতে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা।


আরো সংবাদ



premium cement