সারা দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করেছেন।
করোনার বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১ আগস্ট সারা দেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপ্রধান তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজ আদায় করেন। ওই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল কবীর।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও এবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের ৬টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের প্রধান জামাত এবার বায়তুল মোকাররম মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রত্যেকটি জামাতেই মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকাল ৭টা থেকে প্রতিটি জামাত চলার সময় বিপুল সংখ্যক মানুষকে মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মসজিদে জায়গা না পেয়ে দক্ষিণ গেটে বাইরে স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে অনেককে নামাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ দিন সকাল ৭টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম সচিব মো: নূরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো: ইমদাদুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামান ডিএসসিসি মেয়রের সাথে ঈদের প্রথম জামাতে নামাজ আদায় করেন।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। এ জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী।
তৃতীয় জামাত সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক।
চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। এ জামাতের ইমামতি করেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম।
পঞ্চম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। এ জামাতের ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান।
ষষ্ঠ ও সর্বশেষ জামাত বেলা ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া।
নামাজ শেষে খুতবা পেশ করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মুনাজাত। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নির্দেশনা মেনে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে মুনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়। পাশাপাশি সম্প্রতি বৈশ্বিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও নিহতদের জন্য দোয়া করা হয়। করোনা থেকে মুক্তির জন্য মুসল্লিরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত বন্যা থেকে মুক্তির জন্যও দোয়া করা হয়। তবে ঈদের নামাজ শেষে চির পরিচিত দৃশ্য মুসল্লিদের হাত মেলানো ও কোলাকুলির দৃশ্য এবার চোখে পড়েনি। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ থেকে বিরত থাকেন মুসল্লিরা। প্রত্যেকটি জামাতেই দক্ষিণ গেট দিয়ে মুসল্লিদের সারি ধরে আর্চওয়ে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল ৬টা, দ্বিতীয়টি ৮টায় এবং তৃতীয়টি ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, সামাজিক সুরক্ষা বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাধারণ মুসল্লিরাও অংশগ্রহণ করেন। মিরপুরের কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল ৭টা, দ্বিতীয়টি ৮টা এবং তৃতীয়টি ৮টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার মসজিদ এবং ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধীকেন্দ্র, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণকেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
চট্টগ্রামে ভিন্ন আমেজে ঈদুল আজহা উদযাপিত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভিন্ন পরিবেশ ও আমেজে চট্টগ্রাম নগরীতে এবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। ঈদগার পরিবর্তে মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ পড়েছেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে মুনাজাতে করোনামুক্তির আহাজারিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুসল্লিরা। চট্টগ্রামে ঈদের দিন সকাল পৌনে ৮টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রথম ও প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। একই মসজিদে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ৯টায়। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন জমিয়তুল ফালাহর পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আহমুদুল হক। তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা একত্র হননি। নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন তারা। নগরীতে এবার সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ১৬৮টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির উদ্যোগে নগরীর ৯৩টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদ জামাতে প্রবেশের সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কাতারে পরস্পরের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব রাখা হয়। মুসল্লিদের মুখে মাস্ক ছিল। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন থেকে বিরত থেকেছেন। তবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা