১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিকের কুয়েত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ছুটিতে দেশে এসে আকামা জটিলতায় ৫০ হাজার কর্মী

-

বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিককে কুয়েতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার। ঈদুল আজহার এক দিন আগে এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে দেশে এসে করোনাভাইরাসের কারণে আটকা পড়া প্রায় ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক।
কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কথা বলে কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিক কুয়েতে প্রবেশ করতে পারবেন না। যারা দেশে গিয়ে ছুটি শেষে কুয়েতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের সবাইকে ভিসা জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা। তবে এ থেকে উত্তরণের পথ বের করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মো: আনিসুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, কুয়েতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার মধ্যে ঈদের সম্ভবত এক দিন আগেই কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিককে কুয়েত প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে যারা দেশে ছুটিতে গেছেন এবং যারা কুয়েতে অবস্থান করছেন সবার আকামার মেয়াদ নিয়েই জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সেলর বলেন, কুয়েত সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সার্কুলারে বলা হয়েছে, যারা কুয়েতে আছেন তাদের আকামার (ভিসা) মেয়াদ আগস্ট-২০২০ পর্যন্ত বাড়বে। আর যারা ছুটিতে দেশে গিয়ে করোনার কারণে ফ্লাইট না থাকায় আটকা পড়েছেন তাদের আকামার মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অটোমেটিকলি বাড়বে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ছুটিতে দেশে যাওয়া এমন শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ হাজারের কম হবে না। তবে আটকে পড়া শ্রমিকদের যাতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আকামার মেয়াদ বাড়ানো যায় এবং তারা যাতে নির্ধারিত সময়ের আগে আবার কুয়েতে আসতে পারেন সে ব্যাপারে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা অচিরেই ইতিবাচক সাড়া পাবো।
বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিককে কুয়েতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সেলর আনিসুজ্জামান বলেন, কুয়েত সরকার এখন কারণ হিসেবে বলতে চাচ্ছেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, ইরান, শ্রীলঙ্কা, মিডলইস্ট, দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে করোানাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি। তাই তারা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এসব দেশের নাগরিকের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে আমার মনে হচ্ছে এটা বেশি দিন থাকবে না। যদি কোনো কারণে বলবৎ থাকে তাহলে অনেক শ্রমিকের প্রবলেম হবে।
এ দিকে গত ৩০ জুলাই কুয়েতের দৈনিক আল রাই ও আল কাবাবসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন কুয়েতের বাইরে থাকা অবস্থায় যাদের আকামার মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাদের কোম্পানিগুলো আর নতুন করে আকামার মেয়াদ নবায়ন করছে না। এমন এক হাজার প্রবাসীর আকামার মেয়াদ বাতিল হচ্ছে প্রতিদিন। এ ছাড়া ছুটিতে থাকা ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রবাসীদেরও আকামার মেয়াদ নবায়ন করা হচ্ছে না। তবে এসব বয়সের মধ্যে যারা শিক্ষক, চিকিৎসক ও প্রকৌশলী তারা ভিজিট ভিসায় এসে আকামার মেয়াদ নবায়ন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর ইচ্ছা থাকতে হবে। যেসব প্রবাসী দেশে থাকা অবস্থায় আকামার মেয়াদ শেষ হচ্ছে তারা নতুন ভিসা ছাড়া আর কুয়েত যেতে পারবেন না বলেও ওই সব গণমাধ্যমে উল্লেøখ করা হয়েছে। আর যাদের আকামার মেয়াদ আছে তাদের ছুটি ৬ মাসের পরিবর্তে ১২ মাস করা হয়েছে। ফ্লাইট চালু হলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়েত যেতে পারবেন।
অপর দিকে তৃতীয় দেশে ১৪ দিন অবস্থান করে যারা কুয়েত প্রবেশ করতে চান তাদের পৃথক পৃথকভাবে দুই দেশেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক কুয়েত টাইমস এর খবরে জানানো হয়েছে এ তথ্য। উল্লেখ্য, ১ আগস্ট বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হলেও সাত দেশের প্রবাসীদের কুয়েত প্রবেশে প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কুয়েত সিভিল এভিয়েশন। পরে গত রোববার সিভিল এভিয়েশনের মহাপরিচালক কর্তৃক বাংলাদেশসহ ৩১ দেশের নাগরিককে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কুয়েত প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার ফলে গতকাল থেকেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতি মঙ্গলবার একটি করে শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার করে থাকলেও সেটি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায় বলে বিমানের বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement