২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

চীন-ভারত দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

-

সীমান্ত নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে না বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, দুটি বড় উন্নয়নশীল দেশকে প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। দুই দেশই বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের টেলিফোনকে ‘প্রথাসিদ্ধ কূটনৈতিক আচরণ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই ফোনকলকে কেন্দ্র করে অযথা কাশ্মির ইস্যুকে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে।
একটি টিভি চ্যানেলকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়েছে। ড. মোমেন বলেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে আমরা সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাসী। চীন ও ভারত উভয়ই বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দু’টি দেশই বাংলাদেশের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দুই দেশ স্থলসীমানা, সমুদ্রসীমাসহ অন্যান্য ইস্যু আপসে মীমাংসা করেছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যুটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তবে তা সঠিক পথেই এগোচ্ছে।
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণে বিরক্তি প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর বাংলাদেশে পাকিস্তানের কোনো হাইকমিশনার ছিলেন না। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার রাষ্ট্রপতিকে পরিচয়পত্র দিয়েছেন। এরপর করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন শুরু হলে পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের সাথে আমার সৌজন্য সাক্ষাৎটি পিছিয়ে যায়। গত ১ জুলাই তিনি সাক্ষাৎ করতে এলে আমি বলেছি, বাংলাদেশের সাথে বন্ধন সুদৃঢ় করতে হলে পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কেননা এ সব ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গভীর বেদনার কারণ হয়ে রয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। সেই সহানুভূতির ভিত্তিতেই মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত অধিবাসী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সাথেও বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দেশটির সাথে আমাদের তিনটি চুক্তি সই হয়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা ভারত ও চীন উভয়ের কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছি। ভারতও মনে করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুতই শুরু হওয়া উচিত।
রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে সম্পর্কে ক্ষতি চাই না : ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের উদ্যোগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত একটি ঐতিহাসিক এবং অভিন্ন ধমনীর সম্পর্কের উত্তরাধিকার। আমরা রামমন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেই সম্পর্কের ক্ষতি করতে দেবো না। তবে আমি অনুরোধ করব, ভারতের এমন কোনো কর্মকাণ্ডের অনুমতি দেয়া উচিত নয়, যা আমাদের সুন্দর এবং গভীর সম্পর্ককে ভাঙতে পারে। উভয় পক্ষের এমনভাবে কাজ করা উচিত যাতে এ জাতীয় বাধাগুলো প্রতিহত করা যায়। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিটি স্তর থেকেই দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের সাথে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারতীয় সমাজেরও একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেবল সরকার একা এ জাতীয় সম্পর্ক গড়তে বা ধরে রাখতে পারে না।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও সংলাপকে সমর্থন করে আসছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপ ছিল সৌজন্যমূলক। তারা যদি একটি টেলিফোন কল করে তাহলে সমস্যা হবে কেন? আমরা তো একই বিশ্বে বাস করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement