২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও স্বাস্থ্যবিধি উধাও

-

সীমিত পরীক্ষা সত্ত্বেও দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বলছে, ঝুঁকি এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সংক্রমণ রোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামাজিক দূরত্বের ধারণাটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানছে না ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ। রাজধানীর চিত্র দেখলে মনে হয়, স্বাস্থ্যবিধি এখানে পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর নির্দেশনা মতে, ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া বা অন্যকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে মানুষ একে অন্যের থেকে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
মহামারী চলাকালীন বিশ্বজুড়ে এটিই হচ্ছে প্রমিত অনুশীলন। তবে কিছু দেশ যারা তাদের স্থানীয় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে, তারা এখন এ ধরনের পদক্ষেপগুলো ধীরে ধীরে শিথিল করে নিতে পারছে।
বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা জারি করলেও এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন খুব কমই হয়েছে এবং লকডাউন প্রত্যাহার করার পর থেকে বেশির ভাগ মানুষই এই নির্দেশনা অমান্য করে চলেছে। মাস্ক না পরলে জরিমানা করার যে বিধান প্রয়োগের কথা বলা হয়েছিল, তা বাস্তবে দেখা মিলছে না।
বাজার, চায়ের দোকান, সেলুন, গণপরিবহনে অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, পরছেন না মাস্ক। এমনকি হাসপাতালেও মিলেছে এমন চিত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়া কোনোভাবেই করোনা প্রশমন সম্ভব নয়।
করোনার মধ্যে গণপরিবহন চালু হলেও রাজধানীর শনির আখড়ার প্রতিদিনের চিত্র দেখে মনে হবে নির্দিষ্ট সময়ে অফিস কিংবা গন্তব্যে পৌঁছার প্রতিযোগিতা সেটি। যাত্রাপথে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দূরে থাক, মানছেন না সামাজিক দূরত্বটুকুও। বাস, লেগুনাসহ তিন চাকার যানে গা ঘেঁষে বসে নিত্য চলাচল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই স্পটে একজন যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যেভাবে উঠছি সেটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। কিন্তু আমি উঠতে পারছি না। কাজে যেতে হলে এটা আমাকে করতেই হচ্ছে।
গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না ইজিবাইকেও। তুলনামূলক ছোট আকারের এই গণপরিবহনটির বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে ছুটে চলা এবং অপরিপক্ব চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। খিলগাঁও রেলগেট থেকে চলা প্রতিটি লেগুনায় দেখা যায়, চালকের পাশের আসনে বসেন দুইজন। পেছনের দিকে দুই পাশে ছয়জন করে বসেন ১২ জন। সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রী পরিবহন করতে বলা হলে প্রতি ৬ জনের জায়গায় যাত্রী নেয়া হচ্ছে ৪ জন করে। এতে প্রতিজনের মধ্যে এক ফুটেরও কম দূরত্ব থাকছে। আবার দুই পাশের যাত্রীরা বসছেন মুখোমুখি। ফলে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্বের কিছুই মানা হচ্ছে না।
লেগুনার একজন চালককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘আমরাও জানি সামাজিক দূরত্ব মানা হয় না। কিন্তু কী করার আছে। লেগুনার বডিই ছয় ফুটের। এর মধ্যে তিন ফুট দূরে দূরে লোক বসায় কেমনে? ওই হিসাবে যাত্রী নিতে গেলে এক ট্রিপে দুইজন নিয়া চলতে হবে।’ যাত্রীদের অসাবধানতার কথা তুলে ধরে ওই চালক বলেন, ‘আমরা কি যাত্রীরে মাস্ক কিনা দিমু? এরা ভয় পায় না, মানে না। সকাল থেকেই দেখতাছি, বহুত লোক মাস্ক পরে নাই। এইখানে আমাগো কী করার আছে?’
যাত্রাবাড়ীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে গেলেই দেখা যায় শত শত মানুষের ভিড়। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি। বাজারগুলোর দৃশ্য দেখে কেউ বলবে না এই এলাকায় করোনা সংক্রমণ শত শত। রাজধানীর অলিগলির প্রতিটি বাজারের দৃশ্যও এমনি। সাধারণ মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করছেন না অনেকে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও অনেকেই যাচ্ছেন নরসুন্দরের কাছে। সেখানেও বসার আসন আর সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত না করেই চলে চুলদাড়ি কাটা। একই অবস্থা পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানেও। পাশাপাশি বসে আড্ডা, নামকাওয়াস্তে পানিতে ধুয়ে অন্যের চুমুক দেয়া কাপেই তুলে দেয়া হচ্ছে চা। এর থেকেও ভয়াবহ রাজধানীর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়ানো। মানছেন না সামাজিক দূরত্বও। মুগদা হাসপাতালের সামনে লোকমান নামে একজন রোগী বলেন, এখন আসছি, মাস্ক কিনে তারপর ডাক্তার দেখাতে যাব। স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মেনে লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব উধাও হয়ে গেছে। ডেকে চিহ্ন একে দেয়া হয়েছে কে কোথায় বসবে; কিন্তু যাত্রীরা এসে আগের মতোই চাদর বিছিয়ে বসে পড়েন। যেখানে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব রাখার কথা, সেখানে এক ফুটও ফাঁক থাকছে না। এ দিকে সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। ঈদে আবারো গ্রামমুখী হবে শহরের মানুষ। লঞ্চ, ট্রেন, বাস কিংবা ফেরিতে সেই গাদাগাদির দৃশ্য হয়তো আবারো দেখা যেতে পারে। রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটের সংখ্যা সীমিত করা হলেও, এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধির যে কোনো বালাই থাকবে না, তা অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকানো খুবই কঠিন। আর এ ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, মানুষ বের হলেই আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে যাবে এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। তবে মানুষের সঙ্গে শারীরিক দূরত্বটা বজায় রাখলে সক্রমণের হার কমবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল