২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বন্যার বিস্তৃতি ও স্থায়িত্ব বাড়ছে

নদ-নদীর পানি বাড়ছেই; ভাঙনে নিঃস্ব লাখ লাখ মানুষ; আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্ভোগ আর আতঙ্ক
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ায় রৌমারীর অনেক এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে : নয়া দিগন্ত -

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। পদ্মা, যমুনা ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রংপুর, জামালপুর, মাদারীপুর, পাবনা ও কুড়িগ্রামে বন্যার বিস্তৃতি বেড়েছে, সেই সাথে বাড়ছে স্থায়িত্ব। এতে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের দিন কাটছে সীমাহীন দুর্ভোগ আর আতঙ্কে। বিভিন্ন এলাকায় তীব্র নদীভাঙনে রাতারাতি নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঢাকার নিম্নাঞ্চলসহ বড় তিন নদী ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী ১৩ জেলায় আজ বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অপর দিকে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানের ২৩ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এসব নদীর পানি কোথাও কোথাও বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়েও বয়ে যাচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বড় বড় প্রায় সব নদীতে এবং আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। যুমনার আরিচা পয়েন্টে আজ বুধবার বন্যার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
গঙ্গাচড়ায় তিস্তার বাঁধ ঝুঁকিতে : কয়েক দিনের বর্ষণ আর উজানের ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। উপজেলার নোহালী এলাকায় অবস্থিত তিস্তার ডান তীর রক্ষা বাঁধটি (মূল বাঁধ) নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তার ব্যাপক ভাঙনে নোহালী ইউনিয়নের ১৫০টি পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। আরো শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে।
ভাঙন রোধে ও বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী নদীতীরবর্তী এলাকায় বালুর বস্তা ফেলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, নোহালী ইউনিয়নের তিনটি এলাকায় ৬৪০ মিটার এলাকাজুড়ে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই তিন স্থানের মধ্যে একটি স্থানে নদীর ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৮০০ বালুর বস্তা ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। আর একটি স্থানে ১০ হাজার বস্তা ফেলা হবে। ভাঙনকবলিত লোকজন জানান, এ গ্রামের অনেকেই আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তারা ঘরবাড়ি সরাতে পারলেও তাদের বসতভিটা, বাঁশঝাড়, গাছগাছালি, আবাদি জমিÑ সবই চলে গেছে নদীতে। নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ, অন্যের ভিটেমাটিসহ বিভিন্ন স্থানে কোনোরকমে ঠাঁই নিয়েছেন তারা।
কুমারপাড়া এলাকার কৃষক দীনেশ চন্দ্র রায়ের গত বছর কিছু আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কয় দিন আগোত অল্প কিছু আবাদি জমিও নদী খায়া ফেলাইল। আর কিছুই থাকিল না।’
নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভাঙনকবলিত এলাকা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াছ আলী বলেন, যেভাবে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে এবার মূল বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে।
পাবনায় ব্যাপক হারে নদীভাঙন : পাবনা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় আবার বাড়তে শুরু করেছে পদ্মা-যমুনার পানি। সাথে নতুন করে ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। দুর্ভোগ বেড়েছে নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষের। এক দিকে করোনাভাইরাসের ছোবল অপর দিকে নদীভাঙনে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে ভুক্তভোগীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও জেলার পদ্মা-যমুনার বাম তীরের মানুষ জানায়, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে জেলার বেড়া, সুজানগর, সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার নিচু এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ায় শত শত বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। প্রতি বছর পানি বৃদ্ধির সময় এবং পানি নেমে যাওয়ার সময় এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ এলাকা জেলার বেড়া উপজেলায় এবং তার পরই রয়েছে সুজানগর উপজেলা। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এবার পাবনা সদর ও ঈশ্বরদীতে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
বেড়া উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ জানায়, এ বছর বেড়া উপজেলার নগরবাড়ীঘাট এলাকার নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, রূপপুর, ঢালারচর ইউনিয়নের কয়েক শ’ গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া রাকশা, প্যাঁচাকোলা, চরপ্যাঁচাকোলা, পাইকান্দা, মোহনপুর, নটাখোলা, মধুপুর, ঘোপসিলিন্দা গ্রামে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঐতিহাসিক নগরবাড়ী ঘাট এলাকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ-মাদরাসা, হাট-বাজারসহ কয়েক শ’ স্থাপনা এবং হাজার হাজার বিঘা জমি ও জনপদ নদীতে চলে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় নগরবাড়ী ঘাট অন্তত ১০ কিলোমিটার বাম তীরে চলে এসেছে। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে মুজিব বাঁধ এবং সরকারি উঁচু ও খাস জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। এলাকাবাসী জানান, গেল দু’বছর ভাঙন একটু কম ছিল। পাশাপাশি বন্যাও তেমন আঘাত হানেনি এসব এলাকায়; কিন্তু এবার পদ্মা-যমুনা তার চির আগ্রাসীরূপ নিচ্ছে। ফুলে-ফেঁপে উঠছে এ বড় দু’টি নদীর পানি। নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে নগরবাড়ী এলাকায় সদ্য স্থাপিত মেরিন একাডেমি, নগরবাড়ী নদীবন্দর, নির্মাণাধীন বাফার গোডাউন হুমকির মুখে পড়বে।
শেরপুরের পাহাড়ি ঢলে ২০ গ্রাম প্লাবিত
শেরপুর সংবাদদাতা জানান, গত চার দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার চারটি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পাঁচ শ’ পরিবার। কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি, শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মহারশী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্দা ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার ও নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর বাঁধ ভেঙে মরিচপুরান ইউনিয়নের আটটি গ্রামের একহাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পোলট্রি খামারি ও গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দী খামারমালিক এবং পরিবারগুলো। বাড়িতে পানি ওঠায় চুলা জ্বালাতে পারছে না প্লাবিত এলাকার মানুষ। শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করছেন তারা। বৃষ্টিúাত না কমলে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ আরো চরমে পৌঁছবে।
দিনাজপুরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে মানুষ
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দেড় হাজারের বেশি মানুষ। পানিবন্দী এসব মানুষ উঁচু এলাকা ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলার প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে একটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা নদীর পানি ৩২ দশমিক ৭৮০ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীর বিপদসীমা ৩৩ দশমিক ৫০০ মিটার। জেলার আত্রাই নদীর ৩৯ দশমিক ৬৫০মিটার বিপদসীমার বিপরীতে বর্তমানে ৩৯ দশমিক ৯৮০ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ছোট যমুনা নদীর ২৯ দশমিক ৯৫০ মিটার বিপদসীমার বিপরীতে বর্তমানে ২৮ দমশমিক ৯৮০ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঙ্গীবেচা ব্রিজ এলাকা, বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া, লালবাগ, রাজাপাড়ার ঘাট, নতুনপাড়া, বিরল মাঝাডাঙ্গা, মাটিয়ান, দুপ্তর, ফরক্কাবাদ ইউনিয়েনের কিছু অংশের দেড় হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব।
কুড়িগ্রামে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ দিকে ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামে সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাচ্ছে।
পাউবো অফিস সূত্র জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৮৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ৯৩ সেন্টিমিটার, বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররূপ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, ৪ লাখ টাকা জি আর ক্যাশ, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা, পশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এ ছাড়াও শুকনো খাবার জেলার সব ক’টি উপজেলার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
রৌমারীতে পানিবন্দী ৩ লাখ মানুষ
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজিবপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার তিন লাখ মানুষ। গত কয়েক দিনের টানা ভারীবর্ষণে ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও জিঞ্জিরাম নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলার মানকারচর থানাধীন কালো নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢল বাংলাদেশ অভ্যন্তরে রৌমারীর বড়াইবাড়ী সীমান্ত ঘেঁষা জিঞ্জিরাম নদীতে মিলিত হয়ে নিম্নাঅঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কৃষকের আউশ ধান, পাট, সবজি ক্ষেতসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রচণ্ড চাপে উপজেলা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ ও ঢাকার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে সড়কটি ভেঙে বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, আগের বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় রোপা আমন বীজতলা করেছিলেন। কিন্তু আবারো নতুন করে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নামের তালিকা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, নতুন করে বন্যার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এলাকার অনেক ক্ষতি হবে। দিনমজুর ও কৃষকরা আগের বন্যার ধকল থেকে না উঠতেই আবারো বন্যা শুরু হলো। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিয়নে ২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য প্রায় ৩০০টি খাদ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে এবং যাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
চিলমারীতে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতে আবারো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদ্য ঘরে ফেরা মানুষজন আবারো বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে। দুই দুইবার বন্যায় আক্রান্ত হলেও মেলেনি তাদের ভাগ্যে একমুঠো ত্রাণের চাল। ত্রাণের বিতরণেও উঠেছে নানা অভিযোগ।
জানা গেছে, আবারো টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৩ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সদ্য ঘরে ফেরা মানুষজন বাড়িতে ফিরতে না ফিরতে আবারো ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করে। আর সাথে সাথে দ্রুত তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন শুরু করেছে। বাড়িতে পানি, ঘরে পানি, ওপর থেকে পড়ছে পানি ফলে বিপাকে পড়েছেন বানভাসীরা। কষ্টের ওপর কষ্টে ঝরছে চোখের পানি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় বৃষ্টিতে ভিজে রমনা খামার এলাকায় বাঁধে অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করতে ব্যস্ত রওশনারা, আ: খালেকসহ অনেকে। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই গো হামার কি আর কেউ আছে প্রায় ১০ দিন ঘরবাড়ি ছাড়ি বাঁধের রাস্তা থাকার পর বাড়ি ফিরেও থাকা হলো না আবারো পানি বাড়িয়ে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেল, কি আর করার ফের আসা লাগল রাস্তায়। এ সময় সাজু, আছিয়া, রওশনারাসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন দুই-দুইবার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবল। থাকতে হচ্ছে বাঁধের রাস্তায়, কিন্তু কেউ আমাদের খবর নিলো না। এমনকি ভাগ্যে একমুঠো ত্রাণের চালও জুটল না। ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, ত্রাণ পরিমাণে অনেক কম তাই সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ্ বলেন, ধারাবাহিকভাবে বানভাসীদের ত্রাণ দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, ত্রাণে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জামালপুরে পানিবন্দী চার লক্ষাধিক মানুষ
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ফসলি ক্ষেত, বসতভিটা, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার লক্ষাধিক বন্যার্ত মানুষ। এ দিকে পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জেলার ইসলামপুুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের কাশারীডোবা, চরশিশুয়া, প্রজাপতি, মণ্ডলপাড়া, জোরডোবা, চেঙ্গানিয়া, বিশরশি ও আকন্দপাড়া গ্রামগুলোর বন্যার্ত মানুষ।
শিবচরের ৪ ইউনিয়নের ফসল ডুবে গেছে
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে বন্যা হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো চরাঞ্চলের ধান, পাট, বাদাম ও সবজি চাষের ফসলি জমি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকের তালিকা করে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককরা জানান, চলাতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত বন্দরখোলা, মাদবরেরচর, চরজানাজাত ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন বন্যায় তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির আমন ও আউশ ধান, পাট, বাদাম ও সবজি বিনষ্ট হয়েছে। অতি দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেরিতে চাষ করা বাদাম ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অপরিপক্ব পাট কাটতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ।
মাদারীপুর কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, এ চার ইউনিয়নের দুই হাজার ১০ হেক্টর জমির পাট, ১৯৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৫৪ হেক্টর জমির আমন ধান, ১৫ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা ও ১৪৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অতি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াবে সরকার। এ ছাড়াও গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে আকস্মিক এ বর্ষায়। মাদবরচর শেখ জামাল সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের দু’টি স্থান ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অযোগ্য হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচলও। স্থানীয়ভাবে কোনোমতে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করেছেন স্থানীয়রা।
দেওয়ানগঞ্জে প্রধান প্রধান সড়ক নিমজ্জিত
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১০৬ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। হু হু করে বাড়ছে পানি। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, প্রবল বর্ষণ এবং নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ বাজার-বেলতলী বাজার-মলমগঞ্জ বাজার- জিলবাংলা সুগার মিলস্-উপজেলা পরিষদ-সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-রেলস্টেশন সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পৌরসভাসহ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ, চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙা, পাররামপুর, চর আমখাওয়া ও ডাংধরা ইউনিয়নের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীপাড় ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে রয়েছে। বাসাবাড়ি, পথঘাট, ফসলাদির মধ্যে আখ,পাট, ধান, বীজতলা, সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী সড়কের মণ্ডল বাজার এলাকার সড়ক সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে, সেখানে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে পাউবো। দেওয়ানগঞ্জ সদর থেকে উত্তরে বাহাদুরাবাদ তারাটিয়া রোডে সবুজপুর এলাকা, চিকাজানী ইউনিয়নের মণ্ডল বাজার, পৌরসভা চুনিয়াপাড়া গুলুরঘাট সড়ক ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার বেশ ক’টি আশ্রয়নকেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলস্টেশন, সরকারি বাঁধ-রাস্তা, পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর শুধু বাঁচার আকুতি
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সপ্তাহব্যাপী ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাওরে বিছিন্নœ দ্বীপ সদৃশ্য গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশপাশের উঁচু স্থানে থাকা অত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও অশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। কর্মজীবী মানুষেরা এখন কর্মহীন হয়ে চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। অশ্রয়কেন্দ্রে ও হাওরে পানিবন্দী অসংখ্য পরিবার ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। নারী-শিশু, বয়স্ক মানুষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে সব চেয়ে বেশী শঙ্কিত তারা। বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলই বাঁচার আকুতি।
সরেজমিন হাওরের অনেক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দুর্গম গ্রামগুলোতে দুর্গত মানুষেরা ত্রাণ পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করছে। ট্রলার-নৌকা দেখলেই তারা ত্রাণের জন্য জড়ো হয়ে ভিড় জমান। বন্যার কারণে হাওর এলাকার বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ডুবে যাওয়ার কারণে ঘরবন্দী নারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে লাখো কাঁচা ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমন, পুকুরের মাছ নদীর পানিতে ভেসে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্যসঙ্কট, পয়ঃনিষ্কাশনে চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা শহরের সাথে জামালগঞ্জ-সাচনাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর-তাহিপুর, দিরাই, শাল্লার একমাত্র সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা শহরের পানি কিছুটা কমলেও হাওরের পানি এখনো বাড়ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: শরিফুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জেলা সদরের পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ৬৫০টি পরিবারের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করেন। সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বন্যার্তদের খাদ্য বিতরণ করছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া বন্যার্তদের মাঝে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শুকনো খাবার চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রদান করা হচ্ছে। দুর্গম হাওর এলাকাতেও আমাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আত্রাইয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী
আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে পানির প্রবল তোড়ে উপজেলার জগদাস নামক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ওই গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই মাছবাজার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আত্রাই-সিংড়া সড়কের মালিপুকুর নামক স্থানে ভাঙন দেখা দেয়ায় সড়ক রক্ষার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ দিকে নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার উদনপৈ, জাতপাড়া, জাতআমরুল জিয়ানীপাড়া, মালিপুকুর, জগদাস, শিকারপুর, পারমোহনঘোষসহ নদী এলাকার বেশ কয়েক গ্রামের হাজার হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জগদাস গ্রামের রহিমা বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। ইউপি চেয়ারম্যান আফছার আলী প্রাং বলেন, মালিপুকুর নামক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে ভেঙে গেলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। এ ছাড়াও আত্রাই-সিংড়ার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ত্বরিত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সরকারিভাবে এর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি।
১৩টি জেলাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে
বাসস জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৩টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও রংপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে।
কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতলে হ্রাস পেতে পারে। অপর দিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সকল