২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তিনবার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পর বাড়ছে সুস্থতার হার

-

করোনা রোগীর সুস্থতার সংজ্ঞা তিনবার পরিবর্তনের পরই বাংলাদেশে সুস্থতার হার বেড়েছে। এর আগে দৈনিক মোট মৃত্যুর হারের চেয়ে সুস্থতার হার কম ছিল। ‘মোট মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার কম’ এ বিষয়ে মিডিয়ায় রিপোর্ট হওয়ায় কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হয়।
গতকাল সোমবার দৈনিক বুলেটিনে মোট মৃত্যু দেখানো হয়েছে ৩৯ জন। এর বিপরীতে ২৪ ঘণ্টায় মোট সুস্থ হয়েছে চার হাজার ৭০৩ জন। করোনায় সুস্থতার নতুন এবং সর্বশেষ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী পরপর তিন দিন করোনা উপসর্গবিহীন থাকলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর রোগী নিজ নিজ পরিবারের কাছে গিয়ে পরপর ১০ দিন উপসর্গবিহীন থাকলে রোগীকে করোনাভাইরাসমুক্ত ধরে নেয়া হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে গত ২৮ জুন উপজেলা হাসপাতালসহ প্রতিটি হাসপাতালে নতুন এ গাইডলাইন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুসারে, গত ১৩ এপ্রিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৪২ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৯ জন। এ দিন মোট ৭২২ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরের দিন ১৪ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৬ জন এবং সুস্থ রোগীর সংখ্যা আগের দিনের মতো ৪২ জনই ছিল।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথমবারের মতো একজন মারা যায়। ৮ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মোট মৃত্যুবরণ করেছে ১৪০ জন। কিন্তু ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১১৩ জন। সে দিন পর্যন্ত সারা দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল চার হাজার ৭৪৫ জন রোগী। এসব নিয়ে রিপোর্টিং হওয়ার পরই সুস্থতার গাইডলাইন পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং সুস্থতার পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। যেমন ১০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে করোনা রোগীর সুস্থতার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৮৯৯ জন এবং ওই দিন পর্যন্ত সারা দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছিল এক হাজার ১২ জন। ১০ জুন এক দিনে সারা দেশে মৃত্যুবরণ করে ৩৭ জন কিন্তু এর বিপরীতে সারা দেশে সুস্থ হন ৫৬৩ জন। ১৯ জুন সারা দেশে এক দিনেই সুস্থ হয়েছে দুই হাজার ৭৮১ জন এবং সে দিন এক দিনে মৃত্যুবরণ করে ৪৫ জন। ১৯ জন পর্যন্ত সারা দেশে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে ৪২ হাজার ৯৪৫ জন এবং ১৯ জুন পর্যন্ত সারা দেশে মৃত্যুবরণকারী ছিল এক হাজার ৩৮৮ জন। ৪ জুলাই সারা দেশে এক দিনেই সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৬৭৩ জন এবং সারা দেশে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৯ জন। এই দিন (৪ জুলাই) পর্যন্ত সারা দেশে সুস্থতার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৭২১ জন এবং সারা দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৯৭।
নতুন গাইড লাইন সুস্থতার সংখ্যা অনেক বাড়ছে। গাইডলাইন অনুসারে, পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার আগেই রোগীকে হাসপাতাল ত্যাগ করতে হচ্ছে। তরুণ রোগীদের খুব বেশি সমস্যা না থাকলেও নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করতে গিয়ে বয়স্ক রোগীদের নানা সমস্যা হচ্ছে। বয়স্করা করোনা আক্রান্ত হলেও তাদের অন্যান্য রোগ থাকে। করোনার কারণে ওই সব উপসর্গগুলো সামনে চলে আসে। বয়স্ক রোগীদের কিডনি জটিলতা, ফুসফুস জটিলতা বেশি দেখা দেয়। ফলে রোগীকে বাড়িতে না রেখে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট না থাকলে সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই সহজে রোগীরা ভর্তি হতে পারছে না।
গত মার্চ মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাইডলাইন অনুসারে, সুস্থতার প্রথম সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘কারো দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে প্রথম পজিটিভ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পরীক্ষা করা হবে। দ্বিতীয়বার ফলাফল নেগেটিভ এলে পরবর্তী ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরেক দফা পরীক্ষা করানো হবে। তৃতীয়বারেও ফলাফল নেগেটিভ এলে রোগীকে সুস্থ ঘোষণা করা হবে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সময় রোগীকে আরো ১৪ দিন বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এরপর রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফায় গত ৫ মে সুস্থতার সংজ্ঞায় দ্বিতীয়বার পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৫ মে গাইডলাইনে করোনা রোগীকে ছাড়পত্র দিতে পাঁচটি মাপকাঠির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়াই জ্বর কমে গেলে কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে এবং ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দু’টি আরটি পিসিআর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে রোগীকে ছাড়পত্র দেয়া যাবে। তবে কোনো কারণে পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে পরপর তিন দিন প্রথম দু’টি শর্ত পূরণসাপেক্ষে হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়া পাবে। এ ছাড়া রোগীকে বাড়িতে বা সরকার নির্ধারিত স্থানে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে। আর সম্ভব হলে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে, যা আগে হাসপাতালে রেখে করা হতো।
করোনা আক্রান্ত একাধিক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, গাইডলাইনে সুস্থতার মানদণ্ড নির্ধারিত হলেও অনেকেই ২০ দিনেও ভাইরাসমুক্ত হচ্ছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হলেও অন্যান্য অসুখ রয়েছে (কোমরবিডিটি) এমন রোগীদের সুস্থ হতে আরো বেশি সময় লাগছে। ফলে করোনামুক্ত হিসেবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর অন্যান্য রোগব্যাধি দেখা দিলে আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেন, সংক্রমণ ও সুস্থতা বিবেচনায় এমন পরিবর্তন হতে পারে। তবে করোনা থেকে মুক্ত হলেও কোমরবিডিটি রয়েছে রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি থাকায় তাদের মধ্যে অনেকের দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য নতুন কোমরবিডিটিযুক্ত রোগীরা যেন সহজেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের দ্রুত করোনামুক্ত সার্টিফিকেট দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল