১১ জেলায় বন্যার অবনতি
প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়বে আরো তিন দিন : বানের দুর্ভোগ চলবে পুরো মাস : বাড়ছে পরিধি- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০
দেশের ১১ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে আজ সোমবার। এ ছাড়া আগামী তিন দিন পানি বৃদ্ধি পাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে যমুনা নদীর কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যে ১১ জেলায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে সেগুলো হলোÑ নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা। এ দিকে অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় দেশের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। দফায় দফায় বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। আবারো পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়, উজানের ভারী বৃষ্টি ও পর্বত থেকে বরফ গলা পানি নিচে নেমে আসার কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিপদসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে। কুড়িগ্রামে ধরলার পানি ইতোমধ্যেই বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদী ডালিয়ায় ১২ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়ায় বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দিকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তীব্র বেগে বৃষ্টির পানি নিচে নেমে আসার কারণে ওই অঞ্চলের সাঙ্গু, হালদা ও মাতামহুরী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোশলী মো: আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া পানি বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন, ৮ জুলাই থেকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে উজানে ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর বিস্তার লাভ করায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে ১৮ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উজানের বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে নদী অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি এ মাসের চতুর্থ সপ্তাহ অর্থাৎ এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি গত সপ্তাহ পর্যন্ত হ্রাস পেলেও গতকাল (১২ জুলাই) থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দুই নদীর অববাহিকায় পানি আরো ৭ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে বিপদসীমার উপরে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তা সত্ত্বেও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে ২১ জুলাই পর্যন্ত। এতে রাজবাড়ী, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় অঞ্চলে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মেঘনা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও আপার মেঘনা অববাহিকার অন্যান্য নদ-নদীর যেমন সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু, খোয়াই নদীর পানি কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়ায় ১৩ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার যথাক্রমে ২৯, ১৭ ও ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা নদী কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিপদসীমার ৮০, ৯ ও ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিরাইয়ে পুরনো সুরমা নদী বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী নদী কলমাকান্দাতে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে পানির সাথে যুদ্ধ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি উপচে জেলা শহরের নতুন নতুন এলাকাসহ জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার, তাহিরপর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা, ধর্মপাশাসহ সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ-লাখ মানুষ। পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ায় সদরে দুর্ভোগ আর ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে দিন কাটাচ্ছেন শঙ্কিত হাওরবাসী।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত শহরের ষোলঘর পয়েন্টস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ১২ সেন্টিমিটার কম। তবে শহরের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল কম। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও ছাতক পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি এখনো পানির নিচে রয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-ছাতক এবং ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে।
গতকাল রোববার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাটে পানি প্রবেশ করায় আবারো দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত শুক্রবার সকাল থেকে সুরমা নদীর পানি তীর উপচে শহরে ঢুকতে শুরু করে। গতকাল শহরের উকিলপাড়া, বড়পাড়া, মলিকপুর, ওয়েজখালী, কালিপুর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, হাসননগর, বড়পাড়া, উত্তর আরপিনগর, হাজীপাড়া, মধ্যবাজার, নবীনগর, ধোপাখালী, নতুনপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি দেখা গেছে। পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করছেন হাওরবাসী। জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর সংলগ্ন গ্রামের মানুষ কিছুটা চলাচল করতে পারলেও হাওর এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন চরম শঙ্কায়। কারো ঘরে, উঠানে পানি থাকায় যেন যুদ্ধ করে বাড়ি টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ২৫ জুন প্রথম দফা বন্যা হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে আবার পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ হাজার ২৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ হাজার ৩২০টি পরিবার। উপজেলাগুলোতে ত্রাণ হিসাবে ৫১০ মেট্রিক টন চাল ও ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে পৌর শহরের কুরবান নগরসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৮ শতাধিক বন্যাকবলিত পরিবারে শুকনো খাবার চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, সাবান ও রান্না করা খিচুড়ি তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো: আবদুল আহাদ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সহিবুর রহমান জানান, রোববার বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জে আরো পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং গতকাল বিকেল থেকে জেলা শহরের সরকারি কলেজে ও কুরবান নগর ইউনিয়নে ও বিভিন্ন উপজেলার অশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন।
ছাতকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় উপজেলায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের অন্তত তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দী হয়ে পড়া অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে প্রবল বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ছাতক-সুনামগঞ্জে ১৮৬ মিমি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ছাতক-সিলেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ছাতকের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়ক বিলীনের পথে
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মইয়ার হাওরের পানির প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হতে চলছে এলজিইডির নির্মিত জগন্নাথপুর-চিলাউড়া সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কপথ। ঢেউয়ের কবল থেকে সড়কটি রক্ষায় বৃহস্পতিবার থেকে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন। এলজিইডির জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাইবান্ধায় নতুন ৩০ গ্রাম প্লাবিত
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গত চার দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবক’টি নদীর পানি দ্রুত আবারো বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ২৭ সেমি. এবং তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সাথে ঘাঘট, কাটাখালি, বাঙালী ও করোতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দ্বিতীয় দফায় আবার অবনতি হয়েছে। সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতবাড়ি আবারো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে এবং ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। আকস্মিক বন্যার তীব্র স্রোতে গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধসহ ফুলছড়ি ও সাঘাটা বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রমের ফলে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী, ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এ দিকে ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল বলেন, চরের মানুষ নৌ ডাকাতের আতঙ্কে ভুগছে। তিনি পুলিশের নৌটহল জোরদারের দাবি জানান।
ভাঙনে দিশেহারা চরমোনাই ইউনিয়নবাসী
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে আড়িয়াল খাঁ নদের কোলঘেঁষে বয়ে গেছে আটহাজার, ইছাগুড়া ও বুখাইনগর গ্রাম। অতি বৃষ্টি ও পানির স্রোতে এই জনপদে নদী পাড়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে প্রায় ২৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসী নিঃস্ব হয়ে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ নদীভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে নিজেদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নদীতে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি, মসজিদ, রাস্তাঘাট,গাছপালাসহ ফসলি জমি। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানুষগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদী পাড়ে বসবাসরত লোকজনের দাবিÑ দ্রুত নদী পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে তারা নিশ্চিন্তে বাপ-দাদার বসত ভিটায় বসবাস করে জীবনযাপন করতে পারবেন। স্থানীয় চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল খায়ের ইসহাক বলেন, গত বছর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম নদী ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করেন এবং তার তদারকিতে তখন বালুর বস্তা ফেলে জায়গাটি কিছুটা রক্ষা করা গেলেও এ বছর আরো বেশি করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
নীলফামারীর ১০ হাজার লোক পানিবন্দী
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি গত তিন দিন ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সকালে ৪ সেন্টিমিটার কমে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার রাতে আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তার পানি আবারো কমে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত তিন দিন তিস্তার পানি এভাবে উঠা-নামা করছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলার তিস্তা নদী সংলগ্ন ৫টি ও জলঢাকার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা। ৮টি ইউনিয়নে ব্যাপক আমনের বীজতলা ও রোপিত আমন চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। কোনো কোনো এলাকায় কোমর পরিমাণ পানি উঠেছে। পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে লাল সঙ্কেত ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষণিক বন্যাকবলিত এলাকাগুলো মনিটরিং করছি।
দেওয়ানগঞ্জে দিশেহারা এলাকাবাসী
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে ফের যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল, প্রবল বর্ষণ এবং নদ-নদীতে পানি বেড়ে আবারো বন্যার আফঙ্কায় দিশেহারা নি¤œাঞ্চলের মানুষ। পাউবো সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুর পর্যন্ত যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপরে পানি প্রবাহিত হয়। শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিপদ সীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। রোববার সকাল থেকে প্রবল বর্ষণ ও বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার আট ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের মণ্ডল বাজার এলাকার সড়ক সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হলে সেখানে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে পাউবো। উপজেলা পরিষদ-দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন-দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল রোড কয়দিন আগে পানি থেকে জেগে উঠে চলাচল শুরু হলেও রোববার ফের ডুবে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
হোসেনপুরে বিলীন হচ্ছে সাহেবেরচর গ্রাম
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের অব্যাহত ভাঙনে হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামটি বিলীন হতে চলেছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে মসজিদ, স্কুল, মাজার, গাছপালা ও ফসলি জমি। জানা যায়, সাহেবেরচর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েও কাজ শুরু না করায় ইতোমধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হয় গত ২৫ জুন। ফলে নদের পানি বাড়ার সাথে সাথে বিলীন হচ্ছে সাহেবেরচর গ্রামের বাড়ি-ঘর ও চার ফসলি জমি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিনে পরিদর্শন করে এর সত্যতা পেয়ে গতকাল রোববার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে জরুরি প্রতিকার চেয়েছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনায় এখনো কাজ শুরু না হওয়ার অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভাঙনের কারণে গ্রামটি অনেকটাই ছোট হয়ে আসছে। নদের ভাঙনের কবল থেকে গ্রামবাসীকে ও উর্বর জমি রক্ষা করতে সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে সাহেবেরচর গ্রামের পশ্চিম দিকের হাজিবাড়ি থেকে পূর্ব দিকের অংশ ও ভাটিপাড়া পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০ মিটার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধের অনুমোদন হয় গত বছর। এ ব্যাপারে পাউবো কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, প্রকল্পটি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। এটি একটি প্যাকেজের আওতায় রয়েছে, তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় ১৫ সদস্যের স্ট্্িরয়ারিং কমিটির মিটিং শেষে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা