২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনা দেশে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু : ৩৭; শনাক্ত : ২,৯৪৯

পুরুষই মারা যাচ্ছে বেশি

মোট মৃত্যু : ২,২৭৫; শনাক্ত : ১,৭৮,৪৪৩
-

এক দিনে আরো দুই হাজার ৯৪৯ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ জনে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ২৭৫ জন। আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো এক হাজার ৮৬২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৮৬ হাজার ৪০৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৭ শতাংশ।
গতকাল শুক্রবার অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ। তা দেড় লাখ পেরিয়ে যায় গত ২ জুলাই। সেদিন চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ। আর ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৫ জুলাই তা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৭টি, আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৮৮টি। এ নিয়ে মোট পরীক্ষা হলো ৯ লাখ ১৮ হাজার ২৭২টি নমুনা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৪৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ২৯ জন এবং নারী আটজন। মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৭৯৯ জন এবং নারী ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৯ দশমিক শূন্য আট শতাংশ এবং নারী ২০ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ জন হাসপাতালে এবং ১৪ জন বাড়িতে মারা গেছেন।
অঞ্চল বিবেচনায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে দুইজন করে এবং বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে রয়েছেন।
বয়স বিবেচনায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন এবং ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে চারজন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বয়স বিবেচনায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এক দশমিক ১৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিন দশমিক ২৫ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাত দশমিক ৩০ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার ৪৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮৯৩ জন, আর ৭৬৮ জন আইসোলশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন। ৩৪ হাজার ৯১৫ জন এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে গিয়েছেন এবং ১৭ হাজার ৭২৩ জন ছাড়া পেয়েছেন। বর্তমানে আেইসোলেশনে রয়েছেন ১৭ হাজার ১৯২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬০০ জন, আর তিন লাখ ৮৯ হাজার ১৯১ জন এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৬৯ জন, আর তিন লাখ ২৫ হাজার ৬৪৪ জন মুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৫৩৭ জন।
করোনায় ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান মাস্টারের মৃত্যু
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন মৃধা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পারিবারিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, গত ২২ জুন জ¦র ও শ^াসকষ্ট নিয়ে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন লোকমান হোসেন। পরের দিন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর তার করোনাভাইরাসে সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। শহরের ২ নম্বর হাবেলী গোপালপুর মহল্লার মাস্টার কলোনিতে বসবাস করতেন তিনি। তিনি ফরিদপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি লোকমান মাস্টার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে ফরিদপুরের রাজনীতিবীদসহ বিভিন্ন মহল শোক প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রামে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ১৬২ জন
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত এক দিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬২ জন। এর মধ্যে নগরীর ১১৭ জন ও বিভিন্ন উপজেলার ৪৫ জন বাসিন্দা রয়েছেন। এই সময়ে সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুইজন নগরের ও একজন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত ১১ হাজার ১৯৩ জন। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি এসব তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দিনে বিআইটিআইডিতে ১৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জন, সিভাসুতে ৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ১৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৬২টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৩ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ১৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জন, শেভরণ ল্যাবে ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।
এ দিকে উপজেলা পর্যায়ে নতুন শনাক্ত ৪৫ জনের মধ্যে বাঁশখালীর চার, আনোয়ারার এক, চন্দনাইশের এক, পটিয়ার এক, রাঙ্গুনিয়ার দুই, রাউজানের সাত, ফটিকছড়ির চার, হাটহাজারীর ১৪, সন্দ্বীপের দুই, মিরসরাইয়ের ছয় ও সীতাকু-ের তিনজন আছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামবাসীর জন্য সুখবর হচ্ছে, করোনার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার দিন দিন কমছে। আমরা করোনা প্রতিরোধে আস্তে আস্তে সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এখন দরকার আরো বেশি সচেতনতা অবলম্বন করে একে অন্যকে সহযোগিতা করা। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২১৩ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট এক হাজার ৩৪০ জন।
রাজশাহী বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়াল
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজার ছাড়াল। বিভাগের আটটি জেলায় এখন আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ২৫ জন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাজশাহী বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬০৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন বগুড়া জেলায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা রাজশাহীতে এক হাজার ৪৬৯ জন। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫৭, নওগাঁয় ৬২৬, নাটোরে ২৬৪, জয়পুরহাটে ৫১৬, সিরাজগঞ্জে ৭৮৬ এবং পাবনায় ৫৯৯ জন শনাক্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নতুন করে ২৩৯ জন শনাক্ত হন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৫৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৫, নওগাঁয় ৩৯, নাটোরে সাত, জয়পুরহাটে পাঁচ, বগুড়ায় ৫৭ এবং সিরাজগঞ্জে ৪২ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন বিভাগের বগুড়া ও নওগাঁ জেলায় একজন করে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। বিভাগে এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০৭ জন। এর মধ্যে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। এ ছাড়া রাজশাহীতে ১৩, নাটোরে এক এবং নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ৯ জন করে মারা গেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটে এখনো কারো মৃত্যু হয়নি।
বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়েছেন ১৮৮ জন। এদের মধ্যে ৯২ জনেরই বাড়ি বগুড়া। এ দিন রাজশাহীর ৬৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই, নওগাঁর ২৫ এবং পাবনার পাঁচ জন সুস্থ হয়েছেন। পুরো বিভাগে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ৬১ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩২১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯৩ জন, নওগাঁর ৪৫৫ জন, নাটোরের ৯৭ জন, জয়পুরহাটের ১৬৪ জন, বগুড়ার এক হাজার ৬১৭ জন, সিরাজগঞ্জের ১১৪ জন এবং পাবনার ২০০ জন করোনামুক্ত হয়েছেন।
ঝালকাঠিতে উপসর্গ নিয়ে ইউপি সদস্যের মৃত্যু
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৮) নামে এক ইউপি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গুরুতর অবস্থায় কাঠিপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বর, বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। আনোয়ার হোসেন রাজাপুরের শুক্তাগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। মৃতের পরিবার জানায়, সকালে আনোয়ার হোসেনের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। দুপুরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে ঝালকাঠি জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৪ জনের এবং করোনা পজিটিভ হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হলো।
টাঙ্গাইলে তিনজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৩১
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর ও ধনবাড়ি উপজেলায়। এ নিয়ে জেলায় মারা গেলেন ২০ জন। টাঙ্গাইলে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ জন। শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৮৩ জনে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৭৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৮৮ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, নতুন আক্রান্ত ৩১ জনের মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে সর্বোচ্চ ১৪ জন, সখিপুরে পাঁচজন, মির্জাপুর, মধুপুর ও দেলদুয়ারে তিনজন করে, গোপালপুরে দুইজন এবং ধনবাড়িতে রয়েছেন একজন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর ও ধনবাড়িতে একজন করে মারা গেছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সখিপুর পৌর মেয়রের স্ত্রী, পুত্রবধূ (চিকিৎসক) ও তার চার বছরের ছেলে এবং মেয়রের গাড়িচালক রয়েছেন। সখিপুর পৌরসভার মেয়র করোনায় আক্রান্ত হয়ে আগে থেকেই ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স, ইসলামী ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখার চারজন ও মধুপুর শাখার একজন কর্মকর্তা এবং দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন নতুন আক্রান্তদের তালিকায়।
করোনায় বগুড়ায় ব্যবসায়ীসহ দুইজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩৬ শ’
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। তিনি শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কস্থ (প্রজাবাহিনী প্রেস গলি) সেনেটারি দোকানের মালিক ও বগুড়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আকাশ তারার বাসিন্দা। মৃত ব্যবসায়ীর পারিবারিক সূত্র জানায়, আব্দুর রাজ্জাক গত কয়েকদিন ধরে জ্বর, শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন। পরে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার তার শাসকষ্ট বেড়ে গেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাত ১টার দিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত ২টায় মারা যান।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়া জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো একজন মারা গেছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৬৭ জন। শুক্রবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ জন। এ নিয়ে জেলায় সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্ত সংখ্যা তিন হাজার ৬০৮ জন, সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬১৭ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন।
সাতক্ষীরা করোনা ও উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় একজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন করে আরো ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখা বেড়ে দাঁড়াল ৩২৪ জন। শুক্রবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়রে (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে পাওয়া নমুনা রিপোর্ট এই ৩১ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সাতক্ষীরার স্বাস্থ্য বিভাগ। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া মাঠপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে করোনাক্রান্ত মাহমুদ হোসেন (৩৮) ও সদর উপজেলার বাঁকাল শেখ পাড়া এলাকার মৃত গোলাম মোক্তাদির ছেলে আব্দুস সাত্তার (৭৮)। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
কুমিল্লায় দুইজনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৮৬
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, নগরীতে ৩১ জনসহ গতকাল শুক্রবার নতুন করে কুমিল্লা জেলায় ৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ দিন মারা গেছেন দুইজন। এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ২৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ফল এসেছে ২০ হাজার ৯০৯টি নমুনার। জেলায় সর্বমোট করোনা শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ৩১০ জনের। কুমিল্লার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। শুক্রবার নতুুন করে করোনা আক্রান্তরা হলেন- কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ৩১ জন, চৌদ্দগ্রামের ১১ জন, লাকসামের ১০ জন, নাঙ্গলকোট ও ব্রাক্ষণপাড়ার ছয়জন, বরুড়ায় আটজন, লালমাইতে ছয়জন, আদর্শ সদরে পাঁচজন ও হোমনায় তিনজন। কুমিল্লায় এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২১৭ জন। এ দিন চৌদ্দগ্রাম ও আদর্শ সদরে দুইজনসহ মোট মারা গেছেন ১২১ জন।
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর হাসানুজ্জামানসহ নতুন আরো ১২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে আসা ফলাফলের ৪৯ ফলাফলের মধ্যে ১২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭৮ জন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম এ সব তথ্য জানিয়েছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের করোনা সেলের মুখপাত্র ডা: প্রসেনজিত বিশ^াস জানান, আক্রান্তরা সদরের পাগলাকানাই, আদর্শপাড়া, দুখিমাহমুদ সড়ক, র্যাব ক্যাম্প ও নেভি অফিস, শৈলকুপার দুধসর, ত্রিপুরা, গোসাইডাঙ্গা, কাতলাগাড়ি, কালিগঞ্জের বাজারপাড়া, চাপরাইল, বলিদাপাড়া এবং মহেশপুরের পুরুন্দপুরের বাসিন্দা।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে ৬ ও ৭ জুলাই-এর নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন জানান এ নিয়ে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭৫ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে উত্তরা ইপিজেডের ২৩ জন শ্রমিকসহ জেলা সদরে ৪২ জন, সৈয়দপুর উপজেলায় দুইজন, জলঢাকায় চারজন ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় একজন রয়েছেন। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে এ পর্যন্ত সাহজন চীনা নাগরিকসহ ৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। আক্রান্ত চীনা নাগরিকরা বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় নতুন করে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাতেই শনাক্ত হয়েছেন ১৭ জন। গত বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে এই রেজাল্ট আসে। এ নিয়ে জেলায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক হাজার ৬৯৮ জনে। অন্যদিকে জেলার তিন উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৫৪ জন। মারা গেছেন ২৯ জন। শুক্রবার সকালে নয়া দিগন্তকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা: মুজিবুর রহমান। নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ১৭ জন ছাড়া তাড়াইল, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া ও ইটনা উপজেলায় একজন করে রয়েছেন।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ী জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ২৭ জন রোগী করোনা পজিটিভ হয়েছে। এ নিয়ে রাজবাড়ী জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ৬৬৬ জনে। এর মধ্যে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন শ’ জন। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন চারজন। জেলা প্রশাসন রাজবাড়ী পৌর এলাকার সজ্জনকান্দা, বেড়াডাংগা, দক্ষিণ ভবানীপুর ও বিসিক এলাকায় সাতটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে।
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে নতুন করে আরো ১৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪ জন, সরিষাবাড়ী উপজেলায় একজন ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় একজন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৮৫ জন। অন্যদিকে সর্বশেষ তিনজনসহ মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৪১ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতজন এবং মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে চারজনের। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে জামালপুর স্বাস্থ্য বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনামুক্ত হওয়ার দেড় মাস পর পুনরায় জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন পুরুষ মেডিক্যাল অফিসার পুনরায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
নোয়াখালীতে একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৪০
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এক দিনে আরো ৪০ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছে ১১৪ জন। এ নিয়ে নোয়াখালী জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪০ জনে দাঁড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪৪৩ জন। এ পর্যন্ত নোয়াখালী থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য মোট পাঠানো হয়েছে ১২ হাজার ২৪২ জনের, রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১২ হাজার ১২৩ জনের। গতকাল শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাসুম ইফতেখার।
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের প্রাপ্ত রিপোর্টে সোনালী ব্যাংক চৌগাছা শাখার ম্যানেজারসহ আরো তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: লুৎফুন্নাহার লাকি। এ নিয়ে চৌগাছায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫ জন। যাদের মধ্যে ৩০ জন সুস্থ হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement