২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মৃত্যুহার কমানোর পদক্ষেপের সুফল মানুষ পাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

সংসদে সমাপনী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

করোনা থেকে যতদূর সম্ভব মানুষকে রক্ষা ও মৃত্যুহার কমানোর সরকারি পদক্ষেপের সুফল মানুষ পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ আরেকটু সচেতন হলে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনে চললে করোনা মোকাবেলায় আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যেতো বলেও মনে করছেন তিনি। গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
এ সময় তিনি দুর্নীতি দমনে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কে কোন দলের সেটি বড় কথা নয়, যে দুনীতির সাথে জড়িত, অনিয়মের সাথে জড়িত আমরা যেখানেই যাকে পাচ্ছি তাকে ধরছি। আর ধরছি বলেই চোর ধরেও যেন চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরাই ধরলাম, আবার আমাদের দোষারোপ করা হয়। স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ ছাড়া সমাপনী বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটা সময় এই সংসদ অধিবেশন হয়েছে যখন করোনার কারণে অর্থনীতির চাকা বন্ধ, সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ। জীবনের স্বাভাবিক সবই যেন একটা অদৃশ্য শক্তির বলে স্থবির হয়ে যায়। সেই অবস্থার মধ্যে আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিই। আমরা দেখেছি উন্নত দেশগুলোর মৃত্যুর হার, প্রতিনিয়ত সেখানে কি হারে মৃত্যুবরণ করছে। আমরা কিন্তু চেষ্টা করেছি যতদূর সম্ভব মানুষকে রক্ষা করার এবং মৃত্যুহার কমানোর। সেই দিকে লক্ষ্য করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছিলাম তার সুফল কিন্তু মানুষ পাচ্ছে। আর মানুষ যদি আরেকটু সচেতন হতো, স্বাস্থ্যবিধিমালা যদি আরো যথাযথ মেনে চলতো তাহলে হয়তো আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যেতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্থবির অবস্থার মধ্যেও বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি জানি হয়তো এটা করোনার কারণে সবটুকু আমরা অর্জন করতে পারব কি পারব না এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমি আশাবাদী, ঝড়ঝঞ্জা দুর্যোগ রোগ শোক-বালাই এগুলো থাকবেই। যদি কখনো সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয় তখন যেনো আমরা সেই সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি সেটা মাথায় রেখেই আমরা এই বাজেট দিয়েছি। যদি ভালো অবস্থা হয়, আমরা সেটা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আর যদি সারা বিশ্বে এই স্থবিরতা চলে হয়তো আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। কিন্তু চলমান থাকবে আমাদের অর্থনীতি, সেটিই হচ্ছে বড় কথা।
করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি নীতিমালাও নিয়েছি। সেখানে একটা আমরা ধরে নিয়েছি সরকারি ব্যয় যদি এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায় তবে পাবে। সেখানে মানুষ যেন আরো বেশি করোনা সচেতন হয়, মানুষ যেনো একেবারে ঘরে বসে না থাকে। আর্থিক সহায়তা প্রদান বৃদ্ধি করব। সামাজিক সহায়তার আওতাটা বৃদ্ধি করব। বাজার মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা সেটাও আমরা নিচ্ছি। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি অর্থাৎ জিনিসপত্রের দামটা যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিচ্ছি।
সরকারি কাজের পাশাপাশি দলীয়ভাবে কাজ চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে যারা অনেক সমালোচনা করে যাচ্ছে। এমনকি বহু এনজিও, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে তাদের বর্তমানে কতজনকে চোখে পড়ে, যারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছে? ঘরে সমালোচনা, বাজেটের খুঁত ধরা, কাজের খুঁত ধরা সেগুলো ধরতে পারেন। কিন্তু মাঠে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সেবা করা এ কাজগুলো কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধু আদর্শের সৈনিক যারা আমরাই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ৭৫ এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা শিখিয়েছে, ঋণ খেলাপি শিখিয়েছে। তারা সমাজকে কলুষিত করে দিয়ে গেছে। মানুষ যে আগে একটা আদর্শ নিয়ে চলতো, নীতি নিয়ে চলতো, দীর্ঘদিন এই দেশে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপরা মানুষের চরিত্রহনন করেছে। কারণ তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য। যেখানে এইভাবে বছরের পর বছর দুর্নীতির অনিয়মের বীজ বপন হয়েছে এটা মহীরূপ হয়ে গেছে। আপনি যতই কাটেন আবার কোথা থেকে গজিয়ে উঠে। তিনি পাটকল প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী স্থবিরতা, এক বছর ধরে পাটকলগুলোর শ্রমিকদের বেতন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দিয়ে দিতাম। এইভাবে তো একটা ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না। এই ইন্ডাস্ট্র্রি দিয়ে লাভ করা সম্ভব হবে না। সেজন্য আমরা চাচ্ছি যে নতুন করে শুরু করার। কারণ পাটের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমাদের কারখানাগুলোকে সময়োপোযোগী আধুনিক নতুন করতে হবে। সেজন্য শ্রমিকদের সব পাওনা পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যারা আগ্রহী তাদের ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করব। যাতে পাটের যে বিশ্ববাজারটা সেটা যেন আমরা ধরতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে আমরা বাজেট বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করি এই দুঃসময়টা থাকবে না। এখান থেকে বিশ্ববাসী মুক্তি পাবে আমরা মুক্তি পাব। আমি বলবো স্বাস্থ্যবিধিটা যেনে মেনে চলেন, তাহলে মুক্তি পেতে পারেন। মানুষের মধ্যে এমন আতঙ্ক, করোনা শুনলেই মৃত্য ভয় পেয়ে যাচ্ছে। ভয়কে জয় করতে হবে। মৃত্যু তো আছেই। মৃত্যুতো অবধারিত। জন্মিলে মরিতে হবে..। মরার আগে মরব না। মরণকে জয় করতে হবে। আতঙ্কিত হবো কেন? নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যা করণীয় সেটি করতে হবে। করোনা জয় করার জন্য সবার মধ্যে সাহস রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement