১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানি কমলেও নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা

ভাঙনের কবলে পড়লেও বসতভিটা ছাড়ার মায়া কাটাতে পারেনি নাগরপুরের অনেক পরিবার : নয়া দিগন্ত -

বিভিন্ন স্থানে বানের পানি কমলেও নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। সড়ক, বসতবাড়ি, মসজিদ, উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও ফসলিজমি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। ফলে ওই সব নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আবার পানি নেমে গেলেও বানভাসিরা ভিটায় ফিরে যেতে পারছে না। নানা পানিবাহিত রোগের আশঙ্কায় তারা এখনো বিভিন্ন বাঁধ ও আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বন্যার সার্বিক উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানিতে আসা কাদা, ময়লা ও পানিবাহী রোগের সংক্রমণের ভয়ে এখনো অনেক বানভাসি বাড়ি ফিরছে না। জেলায় ১৬টি নদ-নদীর পানি এখন বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ কয়েকটি নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ধরলা নদীর ভাঙনে সদরের হলোখানায় সারডোব বাঁধে ৮০ ভাগ অংশই নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের মুখে আছে জয়কুমার, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালিহাটসহ উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বেশকিছু এলাকা।
ধরলা নদী পাড়ের বাহারের চরের বানভাসি ওসমান আলী, দুলালী বেগম, রেশমা খাতুনসহ অনেকে জানান, বাড়ি হতে বন্যার পানি নেমে গেছে, কিন্তু চলাচলের রাস্তা ও বাড়িতে কাদায় ভরপুর তাই এখনও বাড়িতে ফিরতে পারছি না। দেখা দিয়ছে গো-খাদ্যের সঙ্কট। সেই সাথে করোনা মোকাবেলায় কর্মহীন থাকায় বর্তমানে নিজেদের পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, বন্যার পানি নেমে গেছে। আমাদের মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও বানভাসিদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সায়হান আলী জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ওই এলাকাগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি কমলেও আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। বিশেষ করে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাইরের অংশে ভাঙন তীব্রতা বেড়েছে।
গতকাল কাজিপুর সদর ইউনিয়নের কাঁটাতলা নৌকাঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের প্রায় ১০০ মিটারের মধ্যে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘাট এলাকার ৫০টির মতো ঘরবাড়ি ও মহল্লার ছোট কয়েকটি দোকান অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ভাঙন ঠেকাতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জিও ব্যাগে বালু ভরে ড্যাম্পিং শুরু করেছে। তবে এ কাজে একটিমাত্র নৌকা ব্যবহারের ফলে কাজের ধীরগতিতে স্থানীয়রা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এই ভাঙন এলাকার মাত্র ৩০০ মিটার উজানে বুধবার দুপুর থেকে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বেশকিছু আবাদি জমিসহ কয়েকটি বাগান নদীর পেটে চলে গেছে। স্থানীয় লোকজন এখানেও ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, ভাঙন ঠেকাতে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাউবোর সাথে কথা বলেছি। আশা করছি তারা কাজের গতি দ্রুত করবেন।
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ধলেশ^রীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হলেও গত কয়েক দিনে এর তীব্রতা বেড়েছে। এ সময় ভাঙনে বেশকিছু পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলিজমি। অপর দিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পারের সবজি চাষিরা। ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় নদী পারের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ ছাড়াও চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজ।
জানা যায়, গত কয়েক বছরে উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগ দীঘলীয়া এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে বাপ-দাদা ও স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র বসতবাড়ি ও ফসলিজমি হারিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। নতুন করে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির ও ডাকঘরসহ আরোও অর্ধশতাধিক বসতভিটা ভাঙনের কবলে রয়েছে। তাদের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বললেও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে আগ দীঘলীয়া এলাকার রতনচন্দ্র মণ্ডল বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই ধলেশ^রীর ভাঙন দেখছি। কিন্তু এভাবে আমার বাড়িও গ্রাস করবে ভাবিনি। নতুন করে মন্দির, ঘরসহ ভিটাবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভাঙন রোধে সরকার পদক্ষেপ অচিরেই না নিলে একেবারে নিস্ব করে ফেলবে সর্বগ্রাসী এ ধলেশ^রী। এখন ভাঙনের শব্দে ঘুম আসে না। করোনা নয় আমরা ধলেশ^রীর ভাঙন থেকে রক্ষা চাই।
আগ দীঘলীয়ার মনির হোসেন (২৬) বলেন, গত কয়েক বছর আগে নদীগর্ভে বসতভিটা বিলীন হওয়ায় নতুন করে নদী পারের চরে ঘরবাড়ি তুলে এবার ৮০ শতাংশ জায়গায় বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। সবজি চাষে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আগাম বন্যায় গাছের গোড়ায় পানি আসায় গাছ হলদে হয়ে যাচ্ছে। হয়তো গাছগুলো এবার মারা যাবে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে সপরিবারে পথে বসতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙন রোধে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওই নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। হাসপাতাল ভাঙনের কবলে রয়েছে বিধায় জরুরি ভিত্তিতে ওই ভাঙন রোধে বরাদ্দের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement