২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বান্দরবানে সংস্কার নেতাসহ নিহত ৬

বান্দরবানে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত একজনের লাশ দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা : নয়া দিগন্ত -

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী গ্রুপের (এমএন লারমা) কোনো তৎপরতা না থাকলেও গত মার্চ মাসে নতুন কমিটি করে যাত্রা শুরু করে এ সংগঠন। রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা রতন তঞ্চঙ্গ্যাকে সভাপতি করে ২১ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের চার মাসের মাথায় প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গ্রুপের হাতে এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় তিন নেতাসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন সংগঠনের আরো দুই সদস্যসহ ৩ জন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ৫-৭ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ বাঘমারা বাজারপাড়ায় সংস্কারপন্থী গ্রুপের জেলা কমিটির সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায় অতর্কিত হামলা চালালে এ ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন সংস্কারপন্থী গ্রুপের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রগতি চাকমা প্রকাশ প্রদীপ (৬৫), কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বিমল কান্তি চাকমা প্রকাশ বিন্দু (৬৩), কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ডেবিট মারমা (৫০), বান্দরবান জেলা কমিটির আহ্বায়ক রতন তঞ্চঙ্গ্যা (৬০), সদস্য জয় ত্রিপুরা (৪০) ও দিবেন ত্রিপুরা (৪২)। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপের সদস্য বিদ্যুৎ চাকমা (৩৮), নিহার চাকমা (৫০) এবং ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা চট্টগ্রাম প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লাউয়াং চিং মারমা (২৫)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, নিহতরাসহ ১০-১৫ জন সদস্য রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায় একত্র হয়ে সকালে খাওয়ার আয়োজন করেছিল। এরই মধ্যে অতর্কিতভাবে হামলা চালায় সশস্ত্র গ্রুপটি। বাগমারা বাজারপাড়ার পশ্চিম দিক থেকে সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে আবার ধানি জমি দিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। তবে হামলাকারীরা কারা ছিল তা এখনো কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য সেম্প্রু মারমা জানান, তারা হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে পার্শ^বর্তী ক্যাম্প থেকে সেনা সদস্যরা এগিয়ে এলে লোকজন ঘর থেকে বাহির হয়। তবে ঘটনার পর আতঙ্কে বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতে।
ঘটনার পর ওই এলাকায় থাকা জনসংহতি সমিতি ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় সরে পড়েন। সেনাবাহিনী ওই এলাকাটি ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ দিকে আহতদের মধ্যে সংস্কারপন্থী গ্রুপের দুই সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শিক্ষার্থীকে মালুমঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লেগেছে। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বাগমারা ও আশপাশের এলাকায়।
এ ঘটনার জন্য সংস্কারপন্থী গ্রুপ জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপকে দায়ী করেছে। সংস্কারপন্থী গ্রুপের বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন থেকে জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপ তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এদের সশস্ত্র সদস্যরা এই হামলা চালিয়েছে। তবে এ বিষয়ে জনসংহতি সমিতির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে আপাতত একটি পক্ষ হামলা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে। সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কারা কী কারণে এ হামলা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ সুপার জেরিন আখতার জানিয়েছেন ঘটনার পরপরই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনা তদন্তে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। তদন্তের পরই পুলিশ ব্যবস্থা নিবে বলে তিনি জানান।
এ দিকে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ভাব। হামলার সময় সংস্কারপন্থী গ্রুপের অনেক সদস্য পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাদেরকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দু’জনের লাশ ঘটনাস্থলের কিছু দূরে পড়ে ছিল। স্থানীয়রা জানান, গত ১৩ জুন রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় কোনো হতাহত না হলেও গতকাল সকালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা হামলাকারীরা হঠাৎ করে আক্রমণ চালায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ৬ জন। গত দেড় মাস আগে বাগমারা বাজারের পাশে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায় সংস্কারপন্থী গ্রুপের বেশ কিছু সদস্য অবস্থান নেয়। তারা বাঘমারা বাজারে একটি অফিস নিয়ে সেখানে থাকত। খাবার খেতো রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাসায়। সংস্কারপন্থী গ্রুপের কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রায় সময় সেখানে আসা-যাওয়া করতেন।
এই গ্রুপটি বাগমারায় অবস্থানের পর থেকেই জনসংহতি সমিতির সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জনসংহতি সমিতি সন্তু লারমা গ্রুপের সাথে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। বান্দরবানে জনসংহতি সমিতির সাথে মগ লিবারেশন পার্টির দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসলেও এই প্রথম জনসংহতি সমিতির বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল