১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা

চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে সিলগালা করা উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড : নয়া দিগন্ত -

লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকা, ভুয়া করোনা টেস্ট ও অন্যান্য অভিযোগে রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের অফিস সিলগালা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাব এই হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। একই সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে র্যাব। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, হাসপাতালটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ দিকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষায় নানা ধরনের অনিয়ম-প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রমের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় আর কোনো ধরনের কার্যক্রম চলতে পারবে না। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, আমরা হাসপাতালটির মিরপুর ও উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়েছি। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে হাসপাতালটির কাছের একটি ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলায় তাদের অফিস। আমরা সেখান থেকে ডকুমেন্টস উদ্ধার করেছি। তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। এ ছাড়া টেস্ট না করে করোনা রোগীদের পজিটিভ ও নেগেটিভ রেজাল্ট দেয়া হতো এখানে। এসব কারণে হাসপাতালটির অফিস সিলগালা করা হয়েছে। তবে হাসপাতালে রোগী রয়েছে। তাই আমরা হাসপাতাল বন্ধ করিনি। অনিয়ম ও প্রতারণার জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ দিকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষায় নানা ধরনের অনিয়ম-প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে উত্তরা ও মিরপুর শাখায় আর কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে না এই হাসপাতাল। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা: আমিনুল হাসান বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালটি কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না। গত সোমবার বিকেল থেকে র্যাব রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সেখান থেকে আটজনকে আটক করা হয়। অভিযানে র্যাব জাল সনদ দেয়ার প্রমাণ পায়। এ ছাড়া হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ ছয় মাস আগেই শেষ হয়ে যায় বলে প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার নির্দেশ না থাকলেও রিজেন্টে করোনা টেস্ট এবং ভর্তি রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযানকালে গত সোমবার রাতে সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ওই গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার ব্যবহার করতেন সাহেদ।
এ দিকে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে প্রতারণা, করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাতে র্যাব বাদি হয়ে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সারওয়ার বিন কাশেম জানান, করোনা রোগীদের সাথে প্রতারণা ও করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করা হয়েছে। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ জড়িতদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ দিকে বিনামূল্যে করোনা টেস্টের অনুমতি নিয়ে স্যাম্পল-প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা আদায় করেছে রিজেন্ট হাসপাতাল। এমনকি সংগ্রহ করা করোনার স্যাম্পলের অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা না করেই অনুমাননির্ভর রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালটি করোনা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে জানিয়ে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও রোগীপ্রতি দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা আদায় করেছে। গত সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালিয়ে এমন অপকর্মের প্রমাণ পেয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব জানায়, অনিয়ম, অপরাধ ও প্রতারণার সাথে সংশ্লিøষ্ট বিষয়গুলো রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ নিজেই দেখভাল করেছেন। এর সাথে হাসপাতালের অন্য কয়েকজন কর্মীও জড়িত ছিলেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় চেয়ারম্যানকে তলব করা হলেও তিনি পলাতক রয়েছেন।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কয়েকটি অনিয়ম ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে। করোনা টেস্টের জন্য আসা রোগীদের বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করানোর কথা ছিল রিজেন্টের; কিন্তু তারা প্রায় ১০ হাজার জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আর এসব নমুনার অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা না করেই মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে। করোনা রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে বলে তারা সরকারের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। অথচ প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে তারা দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা বিল করে আদায় করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টকে করোনা চিকিৎসার অনুমতি দেয়ার আগে শর্ত ছিলÑ এখানে যারা ভর্তি হবেন, শুধু তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে বিনামূল্যে পরীক্ষা করাবে। অথচ রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ বাসায় বাসায় গিয়ে ১০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই স্যাম্পলের মধ্যে চার হাজার ২৬৪ জনের আইইডিসিআরসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করিয়েছে। বাকি নমুনাগুলো পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা আইইডিসিআরে রিপোর্ট ক্রসচেক করে দেখেছি, রিজেন্ট স্যাম্পলগুলো তাদেরকে পাঠায়নি। আর ভুয়া রিপোর্টের জন্য গড়ে প্রতিজনের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। সে হিসাবে করোনা পরীক্ষার নামে অন্তত তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট।


আরো সংবাদ



premium cement