২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উন্নয়ন প্রকল্পের হালচাল (২)

প্রত্যেক ঠিকাদারের কব্জায় ২০ থেকে ২৫টি কাজ

সাড়ে ৫ বছরেও শুরু হয়নি ৩০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রের কাজ
-

সক্ষমতা না থাকলেও বিভিন্ন কারণে একই ঠিকাদার একাধিক কাজ পাচ্ছেন। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যেমন মানহীন হচ্ছে, তেমনি নির্ধারিত মেয়াদ ও অনুমোদিত ব্যয়ে সমাপ্ত হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। বছর গেলেই লাফিয়ে বাড়ছে খরচ। বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটিরও একই চিত্র। বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ গত সাড়ে পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি। একই ঠিকাদার প্রকল্পের ২০ থেকে ২৫টি কাজ পেয়েছেন। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করতে হলে ৭০ শতাংশ অগ্রগতির প্রয়োজন; কিন্তু বাস্তবে এই অগ্রগতি মাত্র ৪৮ শতাংশ বলে পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। আইএমইডির সরেজমিন তথ্য হলো- আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগ কাজই নি¤œমানের হয়েছে। ফলে দেয়াল ফাটা, ছাদ ফাটা, রড বের হয়ে থাকা, ঠিক মতো রঙ না হওয়া, প্লাস্টার উঁচু-নিচু ইত্যাদি ত্রুটি দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে সরকার দেশের ৯টি জেলার ৭৪ উপজেলায় ৫৫৬টি নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। প্রকল্পের অধীনে সাড়ে ৪ শ’ বিদ্যমান আশ্রয়কেন্দ্রের উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি ১৮২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ১৮২ মিটার কালভার্ট নির্মিত হবে একই প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে একনেক থেকে অনুমোদন পায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অর্থাৎ সাত বছরে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। কিন্তু এর মাঝেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তিন হাজার ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা করা হয়। এখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন তিন হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাকিটা সরকারের। যে গতিতে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে তাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হলো- ৫৫৬টি নতুন দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে গত পাঁচ বছরে ২৪৯টির কাজ হাতে নেয়া হয়। ৩৬টির কাজ শেষ হয়েছে। ২১৩টির কাজ চলমান আছে। অবশিষ্ট ৩০৭টির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য খরচ ধরা হয় দুই হাজার ৭৫৭ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে এক হাজার ২২ কোটি ৬৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। বিদ্যমান সাড়ে ৪ শ’ দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১০টির উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। ২৪০টির কাজ চলমান আছে। এখানে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা; যা প্রস্তাবিত ব্যয়ের ৫১.৫৩ শতাংশ। পরামর্শক খাতে ব্যয় ছিল ১৫৮ কোটি ৬৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা। এলজিইডি থেকে প্রস্তুতকৃত তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত ভৌত কাজের অগ্রগতি ৪৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৮.৩৩ শতাংশ। এতে বোঝা যাচ্ছে কাজটি ধীর গতিতে চলছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ডিপিপিতে উল্লিখিত নির্দিষ্ট প্যাকেজে কাজ করার জন্য প্রতিটি প্যাকেজে ৪০ থেকে ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রের কাজ করা ঠিকাদারের জন্য দুরূহ ব্যাপার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়মনীতি মেনে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কার্যাদেশ দিতে হয়। ডিপিপিতে ক্রয় পরিকল্পনায় চারটি প্যাকেজ ২০১৮ সালের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু উল্লিখিত প্যাকেজে চলতি ২০২০ সালে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
আইএমইডির তথ্য হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, মিরসরাই, সীতাকু-, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কক্সবাজার, উখিয়া, রামু, ফেনী, সোনাগাজী, কোম্পানিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশালসহ প্রকল্প এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর কাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। দেখা গেছে, প্লাস্টার ভেজা থাকে, ফ্লোর ফাটা, দরজা আঁকাবাঁকা, জানালার গ্রিলের রঙ ঠিকমতো করা হয়নি, ছাদের ঢাল ঠিকমতো করা হয়নি, ভবনের রঙ ঠিকমতো হয়নি, প্লাস্টার পড়ে যাচ্ছে, জানালাতে কাঁচ নেই, ছাদ ফাটা, প্লাস্টার উঁচু-নিচু, কোথাও কোথাও রড বের হয়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও রড মরিচা পড়া, সংযোগ সড়কে সারফেস অসমান, বিম ও কলামের কিউরিং কম, ইটের গাঁথুনি উঁচু-নিচু, জানালাগুলো ঠিকমতো বন্ধ হয় না, টয়লেটের অবস্থা খারাপ, গ্রাউন্ড ফেøারে প্লাস্টার নেই, পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই।
ধীরগতিতে নির্মাণকাজ হওয়া প্রসঙ্গে এলজিইডি বলছে, কোথাও কোথাও সাইট পেতে দেরি হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যা ছিল। একই ঠিকাদারকে ২০ থেকে ২৫টি পর্যন্ত কাজ দেয়া হয়েছে। তাই ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারছে না।
পর্যালোচনায় আইএমইডি বলছে,২০২১ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প শেষ করতে হলে বতর্মান সময় পর্যন্ত অগ্রগতির হার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অগ্রগতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। ২০টি জেলার আশ্রয়কেন্দ্রের তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে প্রকল্পের কাজ দেড় বছর পর শুরু করতে হয়েছে। তবে ডিপিপি অনুযায়ী যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল ততটুকু হয়নি। বাকি ৫২ শতাংশ কাজ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত করা কঠিন হবে। কারণ কাজগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়নি।
আইএমইডির পরামর্শ হলো- কাজটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে। সে অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করছে কিনা, এলজিইডিকে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে হবে। প্রকল্প পরিচালক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement