২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ডিএনসিসির ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান

দফায় দফায় অভিযানের পরও জনসচেতনতা বাড়ছে না

-

বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলায় এডিস মশা দমনে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এরপরও জনসচেতনতা বাড়ছে না। এখনো ঘরে ঘরে মিলছে এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ। পাওয়া যাচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। এ কারণে অসচেতন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোবাইল কোর্ট জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
গত বছর রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এতে প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া লক্ষাধিক মানুষ অসুস্থতার শিকার হয়েছিলেন। এজন্য এ বছর আগেভাগেই সচেতন হয়েছে ঢাকার দুই সিটি। মশা নিধনে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়ররা। দক্ষিণ সিটি ডোবা-নালা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ওষুধ প্রযোগও বাড়িয়েছে। একইভাবে উত্তর সিটি করপোরেশনের উদোগে গত ৬ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের মোট এক লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫টি বাড়ি, স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে ডিএনসিসির টিম। অভিযানকালে তারা মোট ১ হাজার ৬০১ স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পায় এবং ৮৯ হাজার ৬২৬টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ কারণে মোট ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে ডিএনসিসি।
নগর কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল এরপর মানুষ সচেতন হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেভাবে জনসচেতনতা বাড়েনি। গত শনিবার থেকে ডিএনসিসি আবারো দ্বিতীয় দফা চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। এতে প্রথম দিনেই ১২ হাজার ৬১৯টি বাড়ি, স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে ডিএনসিসির টিম। এ সময় ৯১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৮ হাজার ৭৬৪টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ কারণে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। দ্বিতীয় দিনের অভিযানেও একই রকম চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল ১৩ হাজার ২৯৯টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করে ৯৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৭ হাজার ৭৯৪টি স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ কারণে ১৮টি মামলায় মোট দুই লাখ ৯৭ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো হচ্ছেÑ পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফুলের টব, বোতল, পানির মিটার, গ্যারেজ, পানির হাউজ, মাটির পাত্র, ভাঙ্গা মগ, বাড়ির মেঝে, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের পাত্র, ছাদের ড্রেন, দইয়ের পাত্র, পরিত্যক্ত কমোড, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা পাতিল, বেইজমেন্ট, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি। এসব স্থানে তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকার চিত্র অহরহ।
অভিযানকালে উত্তরা অঞ্চলে (অঞ্চল-১) মোট ১ হাজার ১৩১টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৯২৫টি স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মিরপুর অঞ্চলে (অঞ্চল-২) মোট ২ হাজার ৮৫৪টি স্থাপনা পরিদর্শন করে ছয়টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৪২১টি স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) মোট ১ হাজার ৪৯৮টি স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৯৯২টি স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মিরপুর-১০ অঞ্চলে (অঞ্চল-৪) ১ হাজার ৫৭২টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৭২৫টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। অঞ্চল-৫ এলাকায় মোট ২ হাজার ৯৪টি বাড়ি, স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৫টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১ হাজার ৬১১টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। হরিরামপুর অঞ্চলে (অঞ্চল-৬) মোট ১ হাজার ৩৫৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৮টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১ হাজার ৯৪টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। দক্ষিণখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৭) মোট ৯৪৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে তিনটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদের সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া ৭০৫টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। উত্তরখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৮) মোট ৭৩৩টি বাড়ি, স্থাপনা পরিদর্শন করে তিনটি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। তবে ৫১০টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। ভাটারা অঞ্চলে (অঞ্চল-৯) মোট ৪৯৮টি বাড়ি, স্থাপনা পরিদর্শন করে সাতটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৩০৭টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। সাঁতারকুল অঞ্চলে (অঞ্চল-১০) মোট ৬১৮টি বাড়ি, স্থাপনা পরিদর্শন করে চারটিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৫০৪টি বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা লে. কর্নেল গোলাম মোস্তফা সরোয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম রয়েছে। এ সময় পর্যন্ত আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এজন্য প্রতি মাসে ১০ দিন করে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। চিরুনি অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে জানিয়ে গোলাম সরোয়ার বলেন, এ ব্যাপারে আমরা তাদের সতর্ক করেছি। তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। তারা যদি সচেতন না হন তাহলে আরো কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জনসচেতনতা আশানুরূপ না বাড়ায় মেয়র আতিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে মোবাইল কোর্ট জোরদারের করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব ক্ষেত্রে ভবন বা স্থাপনার মালিক পাওয়া যাবে না, সেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement