২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক লাখ কোটি টাকা আমানত অতিক্রম ইসলামী ব্যাংকের

অন্তর্নিহিত শক্তিই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা : এমডি
-

ব্যাংকিং খাতে আমানতের দিক দিয়ে সোনালী ব্যাংকের পরেই এখন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের অবস্থান। ব্যাংকটি গত ৩০ জুন এক লাখ কোটি টাকা আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সাধারণ গ্রাহকের আমানতে আর কোনো সরকারি বা বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ মাইলফলক অতিক্রম করতে পারেনি। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: মাহবুব উল আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংকের অন্তর্নিহিত শক্তিই তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বড় প্রেরণা জুগিয়েছে। সেই সাথে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতা, শেয়ারহোল্ডার, গ্রাহকের আস্থা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তাদের সফলতার অগ্রযাত্রায় অন্যতম ভূমিকা রেখেছে। গতকাল নয়া দিগন্তের প্রতিনিধির সাথে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম।
মাহবুব আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শুরু থেকেই এর একটি অন্তর্নিহিত শক্তি কাজ করেছে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। শুরুর সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম লক্ষ্য হলো মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করা। এই সুন্দর ব্যবস্থা ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে সবাই গ্রহণ করেছেন। এর ফলে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুধু দেশেই প্রসার লাভ করেনি, দেশের পরিমণ্ডল পেরিয়ে সারা বিশ্বেই এর ব্যাপ্তি প্রসারিত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অনুকরণে দেশে আরো কয়েকটি এ ধারার ব্যাংক গড়ে উঠেছে। নতুনভাবে আরো কয়েকটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আমদানি, রফতানি, বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আহরণ সবদিক থেকেই সামনের কাতারে রয়েছে এ ব্যাংকটি। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পের প্রসার করছে। ফলে ইসলামী ব্যাংকের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এক লাখ কোটি টাকার আমানতের মাইলফলক : ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, ব্যাংকিং খাতে আমানতের দিক থেকে সোনালী ব্যাংকের পরেই এখন ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। তবে, সরকারি আমানত বাদ দিলে শীর্ষে থাকবে ইসলামী ব্যাংক। কারণ, শরিয়া ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ায় ইসলামী ব্যাংক সরকারি আমানত গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে সরকারি আমানত ছাড়াই শুধু গ্রাহকের আমানত দিয়ে ১ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করায় দেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংকই শীর্ষে থাকবে। গত চার বছরের আমানতের পরিসংখ্যানের চিত্র পরিবেশন করে তিনি জানান, ব্যাংকটির ২০১৬ সালে যেখানে আমানত ছিল ৬৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ শেষে তা বেড়ে হয় ৭৫ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল শেষে আমানত আরো বেড়ে হয় ৮২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল শেষে তা বেড়ে ৯৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। আর গত ৩০ জুনে তা এক লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করে। এ হিসাবে দেখা যায়, গত চার বছরে ইসলামী ব্যাংকের আমানত বেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশের ইতিহাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স : শুধু আমানত সংগ্রহই নয়, প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে বরাবরই রেমিট্যান্স আহরণেও শীর্ষ অবস্থান করে ইসলামী ব্যাংক। কিন্তু গত দুই মাস ধরে প্রতি মাসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ হয় তা একক মাস হিসেবে দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে কোনো ব্যাংকই এর আগে আহরণ করতে পারেনি।
ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, আমানতের মতো এটাও একটি মাইলফলক। কারণ, ইতঃপূর্বে এক মাসে কোনো ব্যাংকই ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারেনি। সেখানে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গত মে মাসে ৪৬ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার আহরণ করে। পরের মাসে অর্থাৎ গত জুনে আগের রেকর্ড ভেঙে একক মাস হিসেবে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করার গৌরব অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক, যা ব্যাংকটির গত বছরের জুনের তুলনায় ১১৬ শতাংশ বেশি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এ রেকর্ড রেমিট্যান্স আহরণের কারণ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের এমডি বলেন, মূলত দু’টি কারণে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ রেকর্ড অর্জন করেছে। দু’টি কারণের মধ্যে একটি হলো বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে হুন্ডি তৎপরতা কমে যাওয়া। হুন্ডি কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা করোনার কারণে থাকতে পারবেন কি না সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে তাদের কাছে থাকা জমানো অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এ দু’টি কারণেই ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্সপ্রবাহ রেকর্ড অর্জন করেছে। আর সেই সাথে বেড়েছে জাতীয়ভাবে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার আরো একটি কারণ হলো, ইসলামী ব্যাংকের সেবার মান অন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে আলাদা। দেশে এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বিদেশ থেকে কোনো ভাই বা বোন রেমিট্যান্স পাঠালে আমরা ঝুঁকি নিয়ে হলেও একই দিনেই তাদের সুবিধাভোগীদের হাতে রেমিট্যান্সের অর্থ পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের টিমও সেভাবেই কাজ করছে। পাশাপাশি আমরা গত বছর সারা দেশে ১ হাজার ১০০টি এজেন্ট ব্যাংকের অফিস খুলেছি। আমাদের মোট রেমিট্যান্সের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অবদান রেখেছে ওইসব এজেন্ট ব্যাংকিং অফিস। সবমিলেই ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রেমিট্যান্স আহরণে ইসলামী ব্যাংকের মার্কেট শেয়ার ৩২ শতাংশ। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন।
ইসলামী ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মো: মাহবুব উল আলম বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের সুষম উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সার্বিক অবদানের পাশাপাশি অনগ্রসর ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়তে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিপালনের সংস্কৃতি লালন করা ও যথাযথ পেশাদারিত্বের সাথে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের সঞ্চয়ের বিশ্বস্ত আমানতদার হিসেবে কাজ করছে এই ব্যাংক। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের অগ্রপথিক ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে ৩৫৭টি শাখা, ৪৩টি উপশাখা, ১২০০ এজেন্ট আউটলেট ৬৬০টি নিজস্ব ও প্রায় ১১ হাজার শেয়ারড এটিএম ও সিআরএম বুথের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ ও আন্তরিক গ্রাহকসেবার মাধ্যমে এই ব্যাংক শ্রেণী-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরে ব্যাংকটির গ্রাহকসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা দেড় কোটি।
আর্থিক সেবাবঞ্চিত মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে ইসলামী ব্যাংক ২০১৭ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটগুলোর গ্রাহকসংখ্যা ৭ লাখ ৫৩ হাজার এবং আমানতের পরিমাণ দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সর্বোচ্চ ২৬০০ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকের সফল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব উল আলম বলেন, ব্যাংকের এ সাফল্যের কৃতিত্ব দেশ ও প্রবাসের সব গ্রাহক, শুভাকাক্সক্ষী ও ইসলামী ব্যাংক পরিবারের সব সদস্যের। স্থানীয় মালিকানা পরিবর্তনের কারণে ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন

সকল