২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
৪১১ পদে ৭৪৮ কর্মকর্তা

যুগ্মসচিব পদে ১৩২ কর্মকর্তার পদোন্নতি

-

করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের মধ্যেও প্রশাসনের যুগ্ম সচিব পদে ১৩২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে ১২৩ জনের নামে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বাকি ৯ জন লিয়েনে থাকায় তাদের নামে প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। যুগ্ম সচিবের ৪১১ পদে ৬১৬ জন কর্মকর্তা থাকার পরেও নতুন করে ১৩২ জনকে পদোন্নতি দেয়া হলো। স্থায়ী পদ না থাকায় অনেক যুগ্ম সচিবকে উপসচিবের ডেস্কেই কাজ করতে হচ্ছে। সে হিসাবে নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বেশির ভাগকেই ইনসিটু (আগের পদেই দায়িত্বপালন) থাকতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ নিয়মিত ব্যাচের যোগ্য ৮৩ জন, পদোন্নতি বঞ্চিতসহ (লেফটআউট) ১৬৬ জন ও অন্যান্য ক্যাডার থেকে আসা ১৩৬ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় ছিলেন। এর মধ্যে ১৮ ব্যাচের ৭৬ জন, লেফটআউট ১২ জন (৯ম ব্যাচ-১, ১০ম ব্যাচ-২, ১১তম ব্যাচ-১, ১৩তম ব্যাচ-৪, ১৫তম ব্যাচ-১, ১৭তম ব্যাচ-৪) এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ৪৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিটি পদেই অনেক বেশি কর্মকর্তা রয়েছেন। তারপরও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ছাড়া আর কোনো ক্যাডারে এভাবে ঢালাও পদোন্নতি দেয়া হয় না।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৭ ও ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। এরপর গত ১৬ জুন শুধু ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এবার ১৮তম ব্যাচকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাচে ১০০ জন কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে যোগদান করে। এর মধ্যে কাজ করছেন ৯২ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৮৯ জন কর্মকর্তা উপসচিব হয়েছেন। এর মধ্যে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৮৩ জন কর্মকর্তা। আগের ব্যাচের পদোন্নতি বঞ্চিত (লেফটআউট) আরো ৮৩ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য কাড্যার থেকে আসা ১৩৬ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিবেচনায় রয়েছেন। সর্বশেষ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয় গত বছর ১৬ জুন। এ দিন নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৭ ব্যাচকে বিবেচনায় নিয়ে মোট ১৩৬ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জনপ্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নে রাজনৈতিক পরিচয় প্রাধান্য পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন পদোন্নতি বঞ্চিতরা। রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসনের উপসচিব থেকে ওপরের পদে শূন্য পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘিত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সে বিষয়ে জানার কোনো সুযোগ নেই। আবার কর্মকর্তারা পদোন্নতির আশায় রাজনৈতিক আনুগত্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০০২ সালের পদোন্নতি বিধিমালায় উল্লেখ না থাকলেও পদোন্নতিতে ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ ছিল আলোচিত বিষয়। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা হয় না। ফলে পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় মেধা, যোগ্যতা ও প্রতিযোগিতা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসনে কয়েক দফা পদোন্নতি দেয়া হলেও শুধু রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিতদের তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। কথিত তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নেগেটিভ’ উল্লেখ থাকায় পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অনেকেই বিষণœতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। দীর্ঘ চাকরি জীবনে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি জোটেনি। গত প্রায় ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় তাদের ওএসডি থাকতে হয়েছে অথবা ডাম্পিং স্টেশনে ফেলে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে অনেককে বাড়িও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের অধীনে কাজ করছেন অনেকেই। দফায় দফায় পদোন্নতির সময় বিভিন্ন ব্যাচ পর্যায়ক্রমে ধরা হলেও কর্মকর্তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বঞ্চিতই রয়ে গেছেন। অঘোষিতভাবে ‘ভিন্নমতের’ বলে বঞ্চিত রাখার নীতির কারণে সৎ, যোগ্য, দক্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই গত ১০ বছরে কোনো পদোন্নতি পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদোন্নতি বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী যেসব যোগ্যতা-দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হয়, তা যদি তাদের থাকে তাহলে তাদেরকে যেন বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়। বর্তমানে ইতিবাচক ধারায় অগ্রসরমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে এটাই তাদের প্রত্যাশা।


আরো সংবাদ



premium cement