২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের বিরোধী বর্তমান ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী

-

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের হুমকির পর এর বিরোধিতা করেছেন বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। তেমনি ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। গত বুধবার এসপার বলেছেন, বর্ণবাদী অন্যায়, অবিচার এবং ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অস্থিরতা প্রশমনে সেনা মোতায়েন করাকে তিনি সমর্থন করেন না। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের বিভাজনের চেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন জেমস ম্যাটিস।
পেন্টাগনে এক বক্তব্যে এসপার বলেন, ‘একমাত্র শেষ উপায় হিসেবেই সক্রিয় দায়িত্বে থাকা সামরিক বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ভূমিকায় নামানোর বিকল্প পথ অবলম্বন করা উচিত। পরিস্থিতি খুবই গুরুতর এবং ভয়াবহ হলেই কেবল তা করা যেতে পারে। এখন আমরা সে রকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়িনি।’ ফলে ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ (যে ফেডারেল আইনে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা রাখেন)-এর শরণাপন্ন হওয়াটা সমর্থন করেন না বলেই জানিয়েছেন এসপার। ফ্লয়েড হত্যাকে তিনি এক ‘ভয়ঙ্কর অপরাধ’ বলেও বর্ণনা করেছেন। এসপার বলেন, ‘তাকে (ফ্লয়েড) খুন করার জন্য ওই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কর্মকর্তাদেরকে জবাবহিদিতার মুখে দাঁড় করানো উচিত। এ এক মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা বহুবারই এর পুনরাবৃত্তি দেখে আসছি।’
তেমনি ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিকদের বিভাজনের চেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন তিনি। ট্রাম্প পরিণত নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের জেরে শুরু বিক্ষোভ ট্রাম্প যেভাবে সামাল দিচ্ছেন তাতে ক্ষুব্ধ ও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন বলে জানান ম্যাটিস। এসব সমালোচনার জেরে ম্যাটিসকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘ওভাররেটেড’ জেনারেল আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প।
গত সপ্তাহে মিনেসোটার মিনেপোলিসে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে দমবন্ধ হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা উত্তাল সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এসপার এ মন্তব্য করলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দিন আগেই বিক্ষোভ দমনে সেনা নামানোর হুমকি দিয়েছিলেন। বড় শহরগুলোতে লাগাতার সহিংস বিক্ষোভ ও লুটপাট ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে রাজি না হলে ট্রাম্প নিজেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কোনো শহর বা অঙ্গরাজ্য বাসিন্দাদের জানমালের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আমিই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তাদের হয়ে দ্রুত সমাধান এনে দেব।’ এর বিপরীতে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার দেশের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই অধিকার এবং স্বাধীনতাই আমাদের দেশের বিশেষত্ব। আমেরিকার সেনাসদস্যরা এই অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে মরতেও ইচ্ছুক।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলে পদত্যাগ করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। তারপর থেকেই মূলত নীরব ছিলেন তিনি। তবে গত বুধবার সেই নীরবতা ভাঙেন তিনি। এ দিন আটলান্টিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে লেখা ম্যাটিসের নিবন্ধ।
আটলান্টিকের নিবন্ধে ম্যাটিস লিখেছেন, ‘আমার জীবদ্দশায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি আমেরিকান জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেননিÑ এমনকি রক্ষা করার ভানও করেননি। এর পরিবর্তে তিনি আমাদের বিভক্ত করার চেষ্টা করেছেন।’ তিনি লেখেন, ‘তিন বছর ধরে এই অনবরত চেষ্টার পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা তিন বছর ধরে অপরিণত নেতৃত্বের পরিণাম দেখতে পাচ্ছি।’ চলমান বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীর ব্যবহার নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। ম্যাটিস লেখেন, ‘আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি যে নিজ দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হরণের নির্দেশ সেনাবাহিনীকে দেয়া হবে’।
জেমস ম্যাটিসের ওই নিবন্ধ প্রকাশের পরই তার বিরুদ্ধে পাল্টা সমালোচনা মুখর হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ধারাবাহিক টুইট বার্তায় ম্যাটিস সম্পর্কে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি তার নেতৃত্ব দেয়ার ধরন বা অন্য বেশি কিছু পছন্দ করতাম না আর অনেকেই আমার সাথে একমত ছিলেন। চলে যাওয়ায় খুশি হয়েছিলাম।’
যুক্তরাষ্ট্রে গত মঙ্গলবার সহিংসতা কিছুটা কমে এলেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীরা কারফিউও ভঙ্গ করেছে। ফ্লয়েডের বাড়ি টেক্সাসের হিউস্টোনে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। তাতে অংশ নেয় ফ্লয়েডের স্বজনরাও। টানা ৮ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। কোথাও কোথাও বিক্ষোভে সহিংসতা হওয়ায় বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়। গত বুধবার কিছু কিছু শহরে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে। ফ্লয়েডের ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তবে তার মৃত্যুতে ভাইরাসের কোনো প্রভাব ছিল না। এর আগে আরও দু’টি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ফ্লয়েডের মৃত্যুকে হত্যাকান্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাঙ্কার পরীক্ষা করার জন্য সেখানে ঢুকেছিলাম : ট্রাম্প : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নিজের নিরাপত্তার জন্য নয়, হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা বাঙ্কার পরীক্ষা করতে সেখানে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। গত বুধবার ফক্স নিউজের রেডিও শোতে উপস্থাপক ব্রায়ান কিলমায়াডের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প দাবি করেন, দিনের বেলাতেই বাঙ্কার পরিদর্শনে যান তিনি। ওই সময়ে হোয়াইট হাউজের বাইরে বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।
গত বুধবার রেডিও শোতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি খুব অল্পসময়, খুব কম সময়ই সেখানে ছিলাম।’ ট্রাম্প দাবি করেন, পরিদর্শনের কাজে এর আগেও দু-তিনবার সেখানে গেছেন তিনি। সিক্রেট সার্ভিস তাকে সেখানে যেতে বলেছিল কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘না, তারা আমাকে কোনো কিছুই বলেনি। তবে তারা আমাকে বলেছিল নিচে নামার জন্য এটা ভালো সময়, দেখে আসার জন্য ভালো সময়। কারণ, কোনো না কোনো সময় সেখানে যাওয়ার হয়তো দরকার পড়তে পারে...আমি দেখতে গেলাম, নিচে গেলাম খুব, খুব অল্পসময়ের জন্য...আমার সাথে আমার পুরো দলটি গেল...পরিদর্শনের জন্য।’
বরখাস্তকৃত ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ গঠন : জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্লয়েডকে চেপে ধরা পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া অপর তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও পৃৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার নতুন অভিযোগ আনা হয়। চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ ঘোষণা করে মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কেইথ এলিসন বলেছেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই অভিযোগ ঘোষণা করা হয়েছে। ডেরেক চাওভিনের সাথে বরখাস্ত হওয়া অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেনÑ থমাস লেন, জে অ্যালেক্সান্ডার কুয়েন ও তো থাও। কেইথ এলিসন বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা কঠিন হবে। তিনি বলেন, ‘বিচারে জয় পাওয়া কঠিন হবে। ইতিহাস বলছে এতে চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট।’
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত মিনেসোটায় বেসামরিক নাগরিক হত্যার দায়ে কেবলমাত্র একজন পুলিশ কর্মকর্তাই দণ্ডিত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে ট্রাম্প-কন্যা টিফানি ও তার মা : জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে এবার সরব হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছোট মেয়ে টিফানি ট্রাম্প। ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ ও সামাজিক সাম্যের দাবিতে দেশটিতে সপ্তম দিনের মতো চলা বিক্ষোভ-আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। শুধু টিফানি নন, তার মা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসও বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কালো স্ক্রিনের ছবি পোস্ট করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধান বিরোধী নয় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের

সকল