২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ডে বিএনপি

সাংগঠনিক কার্যক্রম জুন পর্যন্ত স্থগিত
-

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দুনিয়া থমকে গেছে। স্থবিরতা নেমে এসেছে সর্বত্র। তেমনি বাংলাদেশেও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে স্থবিরতা। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কিংবা স্লোগানের রাজনীতির চিরচেনা দৃশ্যপট বদলে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সাংগঠনিক প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখেছে। বরং করোনার কারণে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে বেশি মনোযোগী প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। করোনাভাইরাস রাজপথের রাজনীতিকে এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে গেছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে সারা দেশের তৃণমূলপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত তথা অসহায় গরিব মানুষকে সহায়তা করছে। দলটির নেতাকর্মীরা সাধ্যমতো নিরন্ন মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এদিকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের পাশাপাশি সব ধরনের কমিটি গঠন পুনর্গঠন আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছে বিএনপি। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত থেকে ভার্চুয়াল জগতে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। অথচ চলতি বছরের শুরুতেও বিভিন্ন পাবলিক ইস্যুতে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সোচ্চার থাকত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামতে আরো সময় লাগবে। কেননা মহামারী নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী মাস থেকে সীমিত পরিসরে শুরু হতে পারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এই সময় পর্যন্ত ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সীমিত পরিসরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে। আপাতত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা চালাবেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ঝুলে আছে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
জানা যায়, মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছে। দ্বিতীয় দফায় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। যা এর আগে ১৫ এপ্রিল ও ১৫ মে পর্যন্ত ছিল। দলীয় কর্মকাণ্ডও নেই আগের মতো। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে কয়েকবার স্থায়ী কমিটির সভাও করেছে। দলের মহামচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিভিন্ন ইস্যুতে অনলাইনে নিয়মিত ব্রিফিং করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নেতারা। দলীয় কর্মকাণ্ড না থাকলেও সারা দেশে অসহায় মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে করোনার মধ্যে ঈদের সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কয়েক নেতা। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে চেয়ারপারসনের বৈঠকের পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গাভাব লক্ষ করা গেছে। যা মাঠের রাজনীতি শুরু হলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তাদের ধারণা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ মে শনিবার ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকী। এবারই প্রথম দলের প্রতিষ্ঠাতার শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা করছে বিএনপি। অথচ অন্য বছরগুলোতে বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদ জিয়ার শাহাদতবার্ষিকী পালন করত দলটি। এতিম ও ছিন্নমূল মানুষকে দেয়া হতো রান্না করা খাবার। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে হতো স্মরণসভা। থাকত বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প। কিন্তু এবার করোনার ছোবলে সেসব নেই। তবে অনলাইন তথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ আলোচকদের সমন্বয়ে চলছে ভার্চুয়াল আলোচনা। গত শনিবার বিকেল থেকে বিএনপির উদ্যোগে দলীয় ফেসবুক পেইজে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে ১০ জুন পর্যন্ত চলবে। আলোচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ ও শহীদ জিয়া’, ‘গণতন্ত্র, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বিএনপি’, ‘শহীদ জিয়া, উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি,’ ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও অর্থনৈতিক সংস্কার’, ‘শহীদ জিয়া ও কৃষি বিপ্লব’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশু কল্যাণ’, ‘কর্মসংস্থান ও শ্রমিক কল্যাণ’, ‘শিক্ষা ও গণশিক্ষা’, ‘পল্লী বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন‘, ‘শহীদ জিয়ার বিদেশ নীতি’ ও ‘শহীদ জিয়ার যুব উন্নয়ন’। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়েছে। যেখানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ছাড়াও অন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের মতো মহামারীতে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে দেশের মানুষ। এ পরিস্থিতিতে মাঠে দলীয় রাজনীতি নেই- এটা সত্যি তবে আমরা বসে নেই। রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য। জনগণের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোই রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি সেই কাজটিই করছে। আপাতত আমরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখে অসহায় মানুষের পাশে সাধ্যমতো থাকার চেষ্টা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়া কঠিন। তবে এ কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা সীমিত পরিসরে কাজ করে যাচ্ছি। সংক্রমণের আশঙ্কায় আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আমাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।
তবে বিভিন্নপর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীর মতে- ভার্চুয়াল মাধ্যমে সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চালালেও সাংগঠনিক কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে দলটিতে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে তৃণমূল পুনর্গঠন। অঙ্গসংগঠনগুলোর বেশির ভাগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও করোনার কারণে পুনর্গঠন আটকে আছে। যেসব আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর মেয়াদ শেষ হলেও কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য অনেকেই ভার্চুয়াল আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে- প্রকাশ্যে সভায় কর্মীরা স্লোগান দিলে বক্তব্য শুনতে মনোযোগ থাকে না। কিন্তু অনলাইনে কোনো সমস্যা নেই। তবে এই ধারা যেন চিরস্থায়ী না হয় সেদিকে দলের হাইকমান্ডকে খেয়াল রাখতে বলেন তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এখনো এই কাজ অব্যাহত রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে এর চেয়ে বড় কাজ আর কী হতে পারে? এটাও তো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাজের মধ্যেই পড়ে। তবে মাঠের রাজনীতি বা সংগঠন গোছানোর যে কাজ, সেটা এখনই শুরু করা সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement