২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমফানে বড় ক্ষতির মুখে উপকূলীয় এলাকাগুলো

বাঁধ-সড়ক ভেঙে ভোগান্তিতে স্থানীয়রা
-

সুপার সাইক্লোন আমফান গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ ও ভারতে আঘাত হানে। এতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জেলায় প্রবল ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাস, বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা ইত্যাদি কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্য দিকে ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিতে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি এসব জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মৌসুমী ফল আম ও লিচু বাগানগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব চাষি। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেক এলাকায় রাস্তা ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষজন।
আমতলী ও তালতলীতে দুই সহস্রাধিক ঘর বিধ্বস্ত : আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, আমফানের তাণ্ডবে উপকূলীয় জেলা বরগুনার আমতলী ও তালতলীতে দুই সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের অন্তত সহস্রাধিক মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। তলিয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির ফসল। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছপালা। দুই উপজেলায় ৩৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন মুঠোফোনে বলেন, কয়েকটি স্পটে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকার সংবাদ পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত বাঁধগুলো মেরামত করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আর ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হবে।
লণ্ডভণ্ড কলাপাড়া : কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, আমফানের প্রভাবে উপজেলায় উঠতি বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে। অনেক গাছের শাখা-প্রশাখা ভেঙে পড়েছে। আউটার বেড়িবাঁধের বাড়িঘরে জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কলাপাড়ায় বাঁধ ভাঙ্গা লালুয়ার ১৭ গ্রাম এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে। বাড়িঘরগুলো এখন আর বাসের উপযোগী নেই। ৩৭৮টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ দিকে আমফান তাণ্ডব থামলেও অমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারে ওই এখন পর্যন্ত ভাসছে লোনা পানিতে। রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। এ ছাড়া চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের রাবনাবাদ পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার রিং বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
রামপালে ব্যাপক ক্ষতি
রামপাল (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, ঝড়ে রামপালে ঘরবাড়ি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মৎস্যঘের ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ১৭৫টি মৎস্য খামার ভেসে গেছে। ঝড়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশ ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪৬২টি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল জানান, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনো নিরূপণ চলছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
পাইকগাছায় শিশুর মৃত্যু, আহত ৯৩
পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, আমফানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সুন্দরবন ঘেঁষা উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলা। চাঁদখালী ইউপির কৃষ্ণনগর গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ঝড়ে দেয়ালচাপা পড়ে মিরাজ (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে আরো ৯৩ ব্যক্তি। ঝড়ের প্রভাবে ও অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে একাধিক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকার শত শত মৎস্যঘের, হাজারো বিঘার কৃষিক্ষেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, প্লাবিত হয়েছে ৯টি গ্রাম। পরে বৃহস্পতিবার সকালে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে অনেক স্থানে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে উপজেলায় গত তিন দিন যাবৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement