২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিদায় মাহে রমজান

-

মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ঊনত্রিশ তারিখ। আগামীকাল বা পরের দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ বিদায় মাহে রমজান। মাহে রমজানের পর আসে মুসলিম মিল্লাতের বার্ষিক প্রধান দু’টি আনন্দ উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া উদ্দেশ্য।
হাদিসের গ্রন্থগুলোয় বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদিনায় এসে দেখলেন এখানকার বাসিন্দারা বছরের দু’টি দিন আনন্দ উৎসবে কাটায়। যদিও এর আগে এখানকার অনেকে মুসলমান হয়েছিল, কিন্তু প্রথাটি চালু ছিল। যেহেতু এতে পৌত্তলিকতার ছাপ ছিল এ জন্য মুসলমানদের তাতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জানালেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের আরো উন্নত ও উত্তম দু’টি উপলক্ষ দান করেছেন আনন্দ উৎসবের জন্য। একটি রমজান মাসের শেষে শাওয়ালের প্রথম তারিখে। আরেকটি জিলহজ মাসের দশম তারিখে বা হজের পরের দিন। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারার জন্য দু’টি ঈদ নির্ধারিত হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগের মাধ্যমে তাকওয়ার স্তর উন্নত করা এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একান্ত সান্নিধ্য ও অসাধারণ অনুগ্রহের উপযোগী হতে পারা নিঃসন্দেহে খুশির বিষয়। তেমনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ও শ্রম দিয়ে দীর্ঘ সফরের পর সম্পন্ন হয় হজ। ৯ তারিখ আরাফার ময়দানে অবস্থানের মাধ্যমে হজ আদায়ে সক্ষমতা প্রমাণ হয়, যা আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতেই সম্ভব। তাই পরের দিন আনন্দ প্রকাশ যুক্তিসঙ্গত। যারা হজে যান না, তারা হাজীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য নিজ বাড়িতে থেকেও খুশি উদযাপন করেন, যার নাম ঈদুল আজহা।
প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নির্দিষ্ট দিনে আনন্দ করে থাকে। সাধারণত দেখা যায় যারা ধনী, তারা আনন্দ-ফুর্তি করে, গরিব-অসহায়রা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু ইসলামে ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়, বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে। মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ঈদুল ফিতর। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্য ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে।
ঈদের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবাই হাতে হাত মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মেলানো অর্থাৎ সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আনন্দ।
রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে; দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার মাবুদ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। (বুখারি)। রোজাদার প্রতিদিন ইফতার করে; আবার পরের দিন রোজা রাখে। এটি হলো ছোট ইফতার; কারণ এটির পর আবারো রোজা আসে। ইফতার বা ফিতর হলো রোজা পূর্ণ করার পর আহার গ্রহণ করা; পূর্ণ রমজান মাস রোজা পালন শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন সকালে যখন রোজাদার মিষ্টিমুখ করে তখন সে এক বছরের জন্য প্রকৃত অর্থে ইফতার করে বা সিয়াম সাধনা সম্পূর্ণ করে আজ প্রথম সকালের আহার গ্রহণ করে; তাই এটি এক বছরের জন্য বড় ইফতার; সুতরাং ঈদুল ফিতর রোজাদার মুমিন মুসলমানের জন্য পরম আনন্দের দিন।
ঈদের দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, মিসওয়াক করা, মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়া, গোসল করা, সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, আতর ব্যবহার করা, নামাজের আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদুল ফিতর নামাজের আগে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া, তিন, পাঁচ বা বেজোড়সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, সকাল সকাল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, আস্তে আস্তে এই তাকবির পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়াÑ আল্লাহু আকবার, আল্লøাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ, ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা প্রভৃতি ঈদের সুন্নত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সুসংবাদের অধিকারী করুন। প্রকৃত খুশি ও উভয় জগতের কল্যাণ আমাদের নসিব করুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।


আরো সংবাদ



premium cement