২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩২ লাখ পরিবারকে সহায়তা বিএনপির

আসনভিত্তিক নেতারাও সক্রিয়
-

করোনা সঙ্কটকালের ৫২ দিনে দেশের প্রায় ৩২ লাখ পরিবারের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সংসদীয় আসনভিত্তিক নেতারা। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল। গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে অসহায়, দিনমজুর, খেটে খাওয়া-কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন তারা।
বিএনপির পরিসংখ্যান মতে ১৭ মে পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রায় ৩২ লাখ পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। বিগত সময়ে ক্ষমতার ভাগিদার বা সুবিধাভোগী নয় এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি বড় অংশও এই দুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তরুণ নেতারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, কেউবা ফান্ড গঠন করে চালিয়ে যাচ্ছেন সহযোগিতার কাজ। বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র মতে, গত ২৬ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৩টি পরিবারের এক কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার ৭৭২ জন মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে এক লাখ ৪ হাজার ৪৩৭, রাজশাহীতে দুই লাখ ৫২ হাজার ৯০০, খুলনায় দুই লাখ ২৭ হাজার ২০০, ঢাকা পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ২৫০, ময়মনসিংহে এক লাখ ২৪ হাজার, ফরিদপুরে ২৭ হাজার ৬২৫, বরিশালে ৬৪ হাজার ৫০০, সিলেটে এক লাখ ২১ হাজার ২৫০, কুমিল্লা দুই লাখ ৯৭ হাজার ২৫০, চট্টগ্রামে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ১০০ পরিবারের হাতে বিএনপি খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছে। এ ছাড়া যুবদল সারা দেশে দুই লাখ ৩০ হাজার ৭০২টি পরিবারে, স্বেচ্ছাসেবক দল এক লাখ ৬৫ হাজার ৭৩০, ছাত্রদল তিন লাখ ৬৯ হাজার ৮৬২ এবং মৎস্যজীবী দল ৩১ হাজার ৮৮৭ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। এর বাইরে ছাত্রদল তিন লাখ ৫০ হাজার ২৩০টি মাস্ক, দুই লাখ ৭০ হাজার ৩২৫টি সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে।
করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। লিফলেট, মাস্ক-স্যানিটাইজার কিংবা ত্রাণসামাগ্রী সবই বিতরণ করছেন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে। অন্য নেতারা যখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তখন তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। রাজধানীতে এবার ত্রাণ বিতরণে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। শুরু থেকেই তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়, বস্তিবাসী, দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। বাবার নামে গঠিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও অর্থ সহায়তা নিয়ে দিন-রাত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। এজন্য ইতোমধ্যে মানুষ তাকে জনতার মেয়র হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীতে নিয়মিতই ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল, দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক। ঢাকা জেলায় ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায়, ঢাকা জেলার সভাপতি দেওয়ান মো: সালাউদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক।
ঢাকার বাইরে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যশোরের শার্শায় বিএনপি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি ৫ হাজার, নেত্রকোনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: আনোয়ারুল হক প্রায় ১০ হাজার, নাটোর-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু ৮ সহস্রাধিক এবং সিলেট-৬ আসনের বিএনপি নেতা মাওলানা রশিদ আহমেদ প্রায় বিশ হাজার মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে, ফেনী-৩ আসনে বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি প্রায় ২ সহস্রাধিক, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনা মহানগরের ১৫টি ওয়ার্ডে ছয় হাজার পরিবারে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী, কাঁচা সবজি পাঠিয়েছেন। ময়মনসিংহ-৯ আসনে (নান্দাইল) বিগত সময়ের ক্ষমতাভোগী নেতারা যখন এই দুঃসময়ে নীরব, নিশ্চুপ তখন মালয়েশিয়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মামুন বিন আব্দুল মান্নান পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার তুলে দিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের জানিয়ে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যেকোনো পরিবারের খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজন হলে তাকে জানানো মাত্রই পৌঁছে যাবে তা ঘরে ঘরে। লক্ষ্মীপুর সদর আসনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ১২ হাজার পরিবারে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। নরসিংদীর মনোহরদী-মাধবদীতে দেড় হাজার পরিবারে ত্রাণ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। অসচ্ছল দলীয় নেতাকর্মী ও কর্মহীন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ১ম সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের অসহায়, দরিদ্র পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন এই নেতা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ৯ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ হাজার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এবং তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ প্রদান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা উপকরণ প্রদান করেছেন তিনি। পঞ্চগড়ে জেলার সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ পাঁচ হাজার পরিবারে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। আমিরুল ইসলাম আলিম সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ত্রাণ বিতরণ করেন। বিএনপির সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন আড়াইহাজার উপজেলায় করোনার শুরু থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করে আসছেন। ঈদের আগে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে উপহার সামগ্রীও পাঠানো হয়েছে বলে তারা জানান। তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতেখায়রুজ্জামান শিমুলের উদ্যোগে ঝিনাইদহ-২ আসনের দুই শতাধিক দরিদ্র পরিবার ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপি নেতা ইকরামুল হক সহ¯্রাধিক, রাঙ্গামাটিতে স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম দুই শতাধিক পরিবারে ত্রাণ ও নগদ অর্থ বিতরণ করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার দলীয় লোকজন যখন ত্রাণ চুরি, অর্থ আত্মসাৎ করছে তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এটিও খুব স্বাভাবিকভাবে করতে দেয়া হচ্ছে না। নানাভাবে নেতাকর্মীদের বাধা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি। দলের সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে সারা দেশেই ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement