২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনার হটস্পট রাজধানী ঢাকা

করোনায় আক্রান্ত ২০০ ছাড়াল, মৃত ২০; নতুন আক্রান্ত ৫৪ মৃত্যু ৩; উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ১৭; কক্সবাজার খুলনা নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ লকডাউন
-

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন তিনজন। সব মিলিয়ে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২১৮ জনে। মোট মারা গেছেন ২০ জন। গতকালের ৩৯ জনসহ মোট রোগীর ১২৪ জন রাজধানী ঢাকার। ঢাকা পরিণত হচ্ছে করোনার হটস্পটে। এ দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন জেলা লকডাউন করা হচ্ছে। গতকাল থেকে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে কক্সবাজার, খুলনা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলাকে। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন এলাকার যেখানে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে কিংবা করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেছে, সেখানেই লকডাউন করা হচ্ছে। ঝুঁকি এড়াতে বাড়ছে স্বেচ্ছা লকডাউনও। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, কাশি, গলাব্যথা কিংবা ডায়রিয়ায় গতকাল আরো ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, মানিকগঞ্জে একজন, নোয়াখালীতে একজন, গাজীপুরে দুইজন, রংপুরে দুইজন, বরিশালে দুইজন, নীলফামারীতে একজন, সুনামগঞ্জে একজন, জামালপুরে একজন, কুমিল্লায় দুইজন, পিরোজপুরে একজন, শরীয়তপুরে একজন ও পঞ্চগড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২০। এ ছাড়া নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮১টি পরীক্ষা হয়েছে। ৯৮১ পরীক্ষার ভিত্তিতে আমরা গত ২৪ ঘণ্টায় যতজনের মধ্যে সংক্রমণ পেয়েছি সেই সংখ্যা হচ্ছে ৫৪ জন। সর্বমোট কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ২১৮। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২০। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এ রকম কেউ নেই।
তিনি বলেন, ‘নতুন আক্রান্ত ৫৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও নারী ২১ জন। বয়সের হিসাবে ১১-২০ বছর বয়সের পাঁচজন, ২১-৩০ বছর বয়সের ১৫ জন, ৩১-৪০ বছর বয়সের ১০ জন, ৪১-৫০ বছর বয়সের সাতজন, ৫১-৬০ বছর বয়সের সাতজন এবং ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১০ জন। এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই, ৫৪ জনের মধ্যে ঢাকা শহরে রয়েছেন ৩৯ জন। ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকার অদূরে যেসব উপজেলা রয়েছে সেখানে একজন। আর বাকিরা সবাই ঢাকার বাইরে। সামনের দিনগুলোতে ঢাকা হতে যাচ্ছে করোনাভাইরাসের জন্য নতুন হটস্পট।’
গত ৭ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে গতকাল আক্রান্ত বেড়েছে ১৩ জন। তবে আগের দিনের চেয়ে গতকাল মৃত্যুর সংখ্যা দু’টি কম ছিল। গত মঙ্গলবার মৃত্যু হয় পাঁচজনের।
স্বাস্থ্য বুলেটিনে সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা।
অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা জানান, ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনকে করোনা সংক্রমিত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল মোট ৯৮৮টি। আটটি নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি কিছু সমস্যার কারণে। এগুলো পরে পরীক্ষা করা হবে। যে ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এর মধ্যে ঢাকা থেকে করা হয়েছে ৫৬৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৪২৩টি নমুনা।
অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা জানিয়েছেন, করোনা চিকিৎসায় ওষুধ দিয়ে দেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি আমাদের সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ইনসেপ্টা, এসিআই, ডেল্টা, বিকন, একমি অন্যতম। আবার অক্সিজেন লিমিটেড নামে অক্সিজেন উৎপাদনকারী একটি কোম্পানি গত এপ্রিল থেকে আগামী জুন পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে অক্সিজেন দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
করোনার হটস্পট রাজধানী ঢাকা : করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবার কবলে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। গত ৮ মার্চ থেকে আজ ৮ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাসে দেশে মোট ২১৮ জন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৪ জনই রাজধানী ঢাকার। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্তকৃত ৫৪ জন রোগীর ৩৯ জনই রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
গত এক মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত রোগীদের সিংহভাগই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। গতকাল ৭ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীর ৪২টি এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। এসব এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস ক্রমেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীর লাখ লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ আছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শপিংমলসহ মার্কেটও বন্ধ। সংক্রমণের আশঙ্কায় মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন ও শুক্রবার জুমার নামাজে ১০ জনের বেশি নিয়ে জামাত করা যাবে না বলে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সরকারি নানা উদ্যোগের পরও থেমে নেই সংক্রমণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মহাপরিচালকসহ খ্যাতনামা রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষকে অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করছেন। তবুও অনেকে নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগরবাসী নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রেখে পরিবারের সদস্য ও সর্বোপরি সমাজকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
শেরেবাংলানগরের মোতাহার বস্তি লকডাউন : রাজধানীর শেরেবাংলানগর এলাকার মোতাহার বস্তিতে একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ জন্য বস্তিটি লকডাউন করে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে আইইডিসিআরে নির্দেশে বস্তিটি লকডাউন করে দেয়া হয়। শেরেবাংলানগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝুঁকি এড়াতে স্বেচ্ছা লকডাউন : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নিজেরাই অঘোষিত লকডাউন শুরু করেছেন। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু এলাকার জনসাধারণ এই পথে হাঁটছেন। খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাসা বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। অতিথি, গৃহপরিচারিকাদের আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এসব এলাকায়। নিজ উদ্যোগে ‘লকডাউন’ করা লোকজন বলছেন, একজন করোনা আক্রান্ত হলে পুরো এলাকা বা ভবন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যাতে করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা যায়। কোথাও কোথাও এলাকার তরুণদের দিয়ে অনানুষ্ঠানিক কমিটি করে এসব কার্যক্রম পরিচালিত করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, শুরু থেকেই নানাভাবে মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে। একটু সময় লাগলেও এখন মানুষ সচেতন হয়ে ঘরে থাকছে এটা সবার সম্মিলিত চেষ্টার ফসল।
সুনামগঞ্জে যুবকের মৃত্যু, আশপাশের বাড়ি লকডাউন
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বখতারপুর গ্রামের মোহাম্মদ সালাম (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর লাশ দেখতে আসা দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের মাঝেরগাঁওয়ের দুই স্বজন পরিবার ও আশপাশের বাড়িগুলোকে লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। মৃত মোহাম্মদ সালাম সিলেটে ইটভাটায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে ইটভাটা বন্ধ থাকায় ১০ দিন আগে তিনি বাড়ি আসেন। কয়েক দিন ধরে তিনি জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। ওষুধ খাওয়ার পর তার জ্বর কমলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগের রাত ৮টায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
মেলান্দহে নারীর মৃত্যু, ২০ বাড়ি লকডাউন
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবানি পাকুরিয়া ইউনিয়নের ভাবকী গ্রামে গত মঙ্গলবার বিকেলে করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে এক নারীর (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। লাশের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রাত ১১টায় স্বামীর বাড়ি জেলার মেলান্দহ পৌরসভার আদিপৈত গ্রামে ওই নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে। সেখানে ২০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেলান্দহ থানার ওসি রেজাউল ইসলাম খান। অন্য দিকে জেলার মেলান্দহ উপজেলার চরবানি পাকুরিয়া ইউনিয়নের শিহাটা গ্রামে এক যুবক গত ৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকেই জ্বর ও গলা ব্যথায় ভুগছেন। এ নিয়ে পুরো ইউনিয়নজুড়ে করোনা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
চৌদ্দগ্রামে যুবকের মৃত্যু, তিন বাড়ি লকডাউন
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে করোনার উপসর্গ সর্দি, কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মহিন উদ্দিন (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ভোরে উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কৈয়ারধারী গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি ওই গ্রামের মৃত ছালেহ আহম্মদের ছেলে। উপজেলা প্রশাসন তিনটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে। মৃতের শরীর থেকে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তাকে দাফন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, মৃতের বাড়িসহ আশপাশের তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। নমুনার রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা লকডাউন
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, জেলায় করোনাভাইরাস ঠেকাতে পর্যটন শহর কক্সবাজারকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন গতকাল বুধবার বেলা ৩টার দিকে এই লকডাউনের ঘোষণা দেন। অবশ্য এর আগেই কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখন থেকে কেউ কক্সবাজারে প্রবেশ ও বের হতে পারবে না। এ আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। লকডাউন বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে হয়েছে। এটি হলো ‘জনস্বার্থে কক্সবাজারকে লকডাউন করা হলো। এখন থেকে এ জেলায় সব আগমন ও বহির্গমন নিষিদ্ধ। আদেশ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা।’
নাঙ্গলকোটে এক দিনের ব্যবধানে আরো একজনের মৃত্যু
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাজেরা বেগম (২৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে তিনি জ্বর, ডায়রিয়া ও গলাব্যথায় মারা যান। এক দিনের ব্যবধানে নাঙ্গলকোটে দু’জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কয়েক দিন আগে হাজেরা বেগম স্বামীর বাড়িতে জ্বর, ডায়রিয়া ও গলা ব্যথায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে মঙ্গলবার মধ্য রাতে বাবার বাড়িতে চাচাতো ভাই পল্লী চিকিৎসক রাশেদুল ইসলামের কাছে নেয়া হয়। চিকিৎসার আগেই গতকাল ভোরে হাজেরা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়ার পরপরই নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই দ্রুত তাকে স্বামীর বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে জ্বর, ডায়রিয়া ও গলা ব্যথা নিয়ে মোশাররফ হোসেন (৪০) নামে একজনের মৃত্যু হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবাসীসহ দুইজনের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রবাসীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণাবড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এক কৃষক ও রাতে নাসিরনগর উপজেলায় শ্বাসকষ্টে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যাওয়া কৃষকের বাড়ি উপজেলার আইয়ূবপুর ইউনিয়নের চরছাউনী গ্রামে। তবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না সেটি এখনো জানা যায়নি। তার সংস্পর্শে আসা ১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে সোমবার দুপুরে ৪৫ বছর বয়সী এই কৃষককে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অপর দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় শ্বাসকষ্টে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় উপজেলার জেঠাগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই প্রবাসীর শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী ওই প্রবাসী গত ১৮ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। সে সময়ে তিনি সুস্থ ছিলেন। গত ৪ এপ্রিল তিনি অসুস্থ হন। পরীক্ষায় তার টাইফয়েড ধরা পড়ে। মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে তিনি শ্বাসকষ্টে মারা যান। তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সাটুরিয়ায় বৃদ্ধের মৃত্যু, তিন বাড়ি লকডাউন
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোলড়া এলাকায় সর্দি-কাশি ও হাঁপানি রোগে আনোয়ার হোসেন (৬৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি ওই গ্রামের ছবেদ বরকান্দাজের ছেলে। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মামুন উর রশীদ জানান, মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, সতকর্তা অবলম্বনের জন্য ওই বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের তিন আক্রান্তকে ঢাকায় স্থানান্তর : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে করোনায় আক্রান্ত তাবলিগ জামাতের তিন ব্যক্তিকে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন থেকে ঢাকার কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনার চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকায় তাদের গতকাল দুপুরে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা লকডাউন
নরসিংদী সংবাদদাতা জানান, নরসিংদী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলা ও সুরক্ষার প্রয়োজনে জেলা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী নরসিংদী জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক ছাড়া জেলা ও উপজেলার অন্য সব রাস্তা ও সীমানা দিয়ে ভিন্ন জেলায় যাতায়াতে প্রবেশ ও প্রস্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণজমায়েত, গণপরিবহন, দিনরাতে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবা, খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, ওষুধ ও চিকিৎসা আওতাবহির্ভূত থাকবে। এ আদেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিন রোগী শনাক্ত : নরসিংদীতে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা হলেনÑ রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের একজন ও ডৌকারচর ইউনিয়নের ডৌকারচর গ্রামে একজন এবং পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকার একজন। গতকাল বুধবার নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা: ইব্রাহিম টিটন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রায়পুরার শাহপুর গ্রামের ও পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকার দু’জনই নারায়ণগঞ্জে চাকরি করতেন। এ ছাড়া নরসিংদী জেলা হাসপাতালের মালি (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) রায়পুরা উপজেলার ডৌকারচর গ্রামের বাসিন্দা।
রংপুরে দুই গৃহবধূর মৃত্যু, নমুনা পিসিআর ল্যাবরেটরিতে
রংপুর অফিস জানায়, রংপুরের হারাগাছ ও মিঠাপুকুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই গৃহবধূ মারা গেছেন। গতকাল বুধবার তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।
রংপুর সিভিল সার্জন হিরোম্ব কুমার রায় জানিয়েছেন, হারাগাছ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত ওই গৃহবধূর নাম মিনা রানী (৩৪)। তিনি হারাগাছ পৌরসভার মেনাজবাজার গোল্ডেন ঘাট এলাকার মদন কুমারের স্ত্রী এবং পেশায় সুইপার। ওই নারী কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছিলেন। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গলাব্যথা এবং বুধবার সকালে ডায়রিয়া শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, মিঠাপুকুরের ভাংনি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের এক গৃহবধূ জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের হাসপাতালে মারা গেছেন। এরপর নমুনা সংগ্রহের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। নুমনা নেয়ার পর লাশ ফের মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। লাশ নিয়ে আসার পর অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও এই নারীর স্বজনেরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, উভয় লাশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
শেবাচিমে নলছিটির শিশুর মৃত্যু
বরিশাল ব্যুরো জানায়, জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত মঙ্গলবার বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক শিশু মারা গেছে। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, শিশুটি দীর্ঘ দিন থেকে কিডনি সমস্যায় ভুগছিল। কিন্তু জ্বর-সর্দি ও কাশি শুরু হওয়ার পর তার মৃত্যু হওয়ায় এলাকাবাসীর আতঙ্কের কারণে শিশুটির বাড়ির ১২ জন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বলেন, শিশুটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল না। অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে।
বরিশালে আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু : কথরোনা পরীক্ষার জন্য শেরেবাংলা মেথডিক্যাল কথলেজে আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু করা হথয়েথছে। এখাথনে প্রথশিক্ষণের পাশাপাথশি প্রথমথ দিন পরীক্ষামূলকভাথবে একজন কথরোনা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হথয়। বুধবার বেলা ১১টায় শেরেবাংলা মেডিথক্যাল কথলেথজের মাইক্রোবাথয়োলথজি বিভাথগের দ্বিতীয় তলায় দোয়া-মুনাজাথতের মধ্যথদিথয়ে এ ল্যাথবের কার্যক্রম শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, হাসাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: বাসুদেব কুমার, সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগৈলঝাড়ায় যুবকের মৃত্যু, ১৬ বাড়ির ৬০ পরিবারকে লকডাউন
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার পূর্ব বাগধা গ্রামের সোহরাব হোসেন মিয়ার ছেলে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার আলী আকবর (৩৮) মঙ্গলবার ঢাকা থেকে জ্বর, কাশি ও সর্দি নিয়ে বাড়ি আসেন। গতকাল দুপুরে বাড়িতে তিনি মারা যান। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তার দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশান ইসলাম মৃতের বাড়িসহ ১৬টি বাড়ির প্রায় ৬০টি পরিবারকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন।
ডোমারে বৃদ্ধের মৃত্যু
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ি ইউনিয়নের দনি কেতকীবাড়ি খালপাড়া গ্রামে এক বৃদ্ধের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ডোমার থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এলাকাবাসী করোনা আতঙ্কে বৃদ্ধের দাফন করতে অনীহা জানালে পুলিশ বৃদ্ধের দাফনের ব্যবস্থা করে।
এ দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে থাকা চিকিৎসক, নার্সসহ উপজেলার ২৪৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু বসতবাড়িতে লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
নোয়াখালীতে বৃদ্ধের মৃত্যু
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামে গত মঙ্গলবার ভোরে নিজ বাড়িতে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আবদুল মালেক (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওই দিন সন্ধ্যায় লাশের নমুনা সংগ্রহ করে বিআইটিআইডি চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অসীম কুমার দাস বলেন, তিন-চার দিন আগে মৃত ব্যক্তি অসুস্থ হন। সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছাড়াও তার হার্টের সমস্যা ছিল।
নারায়ণগঞ্জ থেকে কাপাসিয়ায় ফেরা যুবকের মৃত্যু
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঠাণ্ডা, সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে এক যুবকের (২৮) মৃত্যু হয়েছে। সেলিম আকন নামের ওই যুবক কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের উলুসারা গ্রামের সুরুজ্জামানের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি ফার্মেসিতে কাজ করতেন। তিন সপ্তাহ আগে তিনি কর্মস্থল থেকে কাপাসিয়া আসেন। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। স্ট্রোকের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও স্থানীয়দের দাবি তার করোনাভাইরাসের লক্ষণ সর্দিজ্বর ছিল। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা সংক্রমণ ছিল কি না তা জানতে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এ সময় তারা মৃতের বাড়িতে লাল পতাকা টানিয়ে পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
চট্টগ্রামে ৩৯ জনের পরীক্ষায় কারো করোনাভাইরাস নেই
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারো দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) থেকে পাওয়া ফলাফলের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, গত মঙ্গলবার সংগ্রহ করা ৮৯ জনের মধ্যে ৪৮ জনের নেগেটিভ এসেছে মঙ্গলবার রাতে। বাকি ৪১ জনের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত বৃদ্ধের নমুনায় আবার পজেটিভ এসেছে। এর মানে তিনি সুস্থ হননি। আর আগে থেকে করোনায় আক্রান্ত বৃদ্ধের ছেলের দ্বিতীয় দফায় করা নমুনার রিপোর্ট সংগ্রহ ঢাকা থেকে আসবে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, নমুনা সংগ্রহ করা বাকি ৩৯ জনের কারোরই করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীতে আইসোলেশনে থাকা ৪ রোগী আক্রান্ত নন
রাজশাহী ব্যুরো জানান, জ্বর-সর্দি ও কাশি নিয়ে রাজশাহী সংক্রমণ ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা চারজন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। গতকাল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য গঠিত কমিটির নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা: আজিজুল হক আজাদ জানান, আইডি হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা চার রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রামেকের ল্যাবে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে চারজন রোগীরই রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। তাই দুইজন ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। তবে নতুন করে আরো দু’জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের একজনের বাড়ি রাজশাহী নগরীর অদূরে কাটাখালি এলাকায়। আরেকজনের বাড়ি নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়। এ দু’জনের মধ্যে একজন ঢাকার মিরপুরে থাকতেন। ছয় দিনের জ্বর-সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী এসে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন দুই রোগীরও করোনার পরীক্ষা করা হবে।
৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে : এ দিকে রামেক অধ্যক্ষ ডা: নওশাদ আলী সাংবাদিকদের জানান, রামেক হাসপাতালে করোনা ল্যাবে বুধবার ৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে নওগাঁ থেকে ২৭, বগুড়া থেকে ১৩, রাজশাহী, জয়পুরহাট ও নাটোর থেকে ৯ জন করে এবং সিরাজগঞ্জের ৩ জনের নমুনা রয়েছে। এ ছাড়া গত ১ এপ্রিল ল্যাব চালুর পর এ পর্যন্ত মোট ১৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছাড়া সবগুলোর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে এখনো রাজশাহী বিভাগের কারো করোনা শনাক্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
খুলনা জেলায় যানবাহনের প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ
খুলনা ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সামাজিক দূরত্ব আরো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খুলনা জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় দোকান, হাটবাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও যানবাহন চলাচলের সময়সীমার ব্যাপারে খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল হোসেন গতকাল জেলায় সব যানবাহনের প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। গণবিজ্ঞপ্তিতে ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান ও বাজার প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নগরীর রূপসা সান্ধ্যবাজার, কেসিসি সান্ধ্যবাজার ও সোনাডাঙ্গার কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময়সূচি বহাল থাকবে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত খুলনা জেলায় সকল ধরনের যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ থাকবে। তবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা যেমন খাদ্যদ্রব্য, কৃষিপণ্য, সেচ সরঞ্জাম ও জ্বালানি তেল বহনের গাড়ি এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। এ ছাড়া ব্যাংক, আর্থিকপ্রতিষ্ঠান, হিসাব রক্ষণ অফিস এবং জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট অফিস এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে। এসব নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
নাজিরপুরে তাবলিগফেরত বৃদ্ধের মৃত্যু, গ্রাম লকডাউন
নাজিরপুর (পিরাজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের নাজিরপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তাবলিগফেরত এক বৃদ্ধের (৭০) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো গ্রাম লাকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল বুধবার ভোররাতে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি উপজেলার শাঁখারিকাঠী ইউনিয়নের মাদুলিহারা গ্রামে। স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, ওই বৃদ্ধ গত ৪ মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাবলিগে ছিলেন। গত প্রায় ১০ দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন। ৬-৭ দিন ধরে তিনি জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত হন। বুধবার ভোরে তিনি মারা যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মাদ ওবায়দুর রহমান জানান, ওই বৃদ্ধের তার কন্যাও অসুস্থ রয়েছেন। পুরো গ্রামটি লকডাউন করা হয়েছে এবং তার কন্যাকে চিকিৎসায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বাঘায় তাবলিগফেরত ব্যাক্তির মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো ও বাঘা সংবাদদাতা জানান, তাবলিগ থেকে ফেরার তিন দিনের মাথায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় বাঘা পৌরসভার দক্ষিণ মিলিক বাঘা এলাকায় অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম (মহিলা) মাদরাসায় তিনি মারা যান। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম আজাদ। বয়স প্রায় ৬২ বছর। তিনি ৪০ দিনের জন্য তাবলিগে গিয়েছিলেন। তিন দিন আগে কুষ্টিয়া থেকে ফিরে তিনি ওই মাদরাসায় উঠেছিলেন। অবশ্য মাদরাসাটি এর আগেই ছুটি দেয়া হয়েছিল। আবুল কালাম আজাদের বাড়ি মাদরাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বাঘা উপজেলার উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামে। তবে কুষ্টিয়া থেকে ফিরে তিনি নিজ বাড়ি ঢুকেছিলেন কি না তা জানা যায়নি। বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আকতারুজ্জামান জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
টঙ্গীতে কিশোরের মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক
টঙ্গী (গাজীপুর) সংবাদদাতা জানান, টঙ্গীতে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ^াসকষ্ট নিয়ে ১৬ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় বাঁশের বেরিকেড দিয়ে বাড়িটি ঘেরাও দিয়ে রেখেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টঙ্গীর আউচপাড়া মোল্লা বাড়ি রোডের ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই কিশোর জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ^াসকষ্টে ভুগছিল। সোমবার সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রাতে তার মৃত্যু হয়। করোনা রোগী সন্দেহে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ওই বাড়িটি অস্থায়ীভাবে লকডাউন করে দেয় এলাকাবাসী।
নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুবকের মৃত্যু
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর স্বাস্থ্য কমপেক্সে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রায়হান (২০) নামে এক যুবক মারা গেছে। ওই যুবক গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসা নিতে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি না করে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গাড়িতে তোলার আগেই টেবিলে বসা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই যুবক পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর উপজেলার বলিঘর গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে।
পঞ্চগড়ে কিশোরীর মৃত্যু, এলাকায় আতঙ্ক
ইউএনবি জানায়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হওয়ায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত হাফেজা খাতুন (১৪) নামে রামগঞ্জ বিলাসী এলাকার আবুল হোসেনের নাতনী। ওই কিশোরীর পরিবার বলছে সে আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিল। তারপরও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা সংক্রমণ আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানান, গত সোমবার জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসী এলাকার আবুল হোসেন টাঙ্গাইল থেকে বাসায় ফিরেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে আবুল হোসেনের নাতনী হাফেজার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যায়। এর আগে টাঙ্গাইল থেকে ফেরা ওই কিশোরীর এক স্বজনকে ইতঃপূর্বে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে তার মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে নেননি এলাকাবাসী।
নারায়ণগঞ্জ পুরোপুরি লকডাউন : করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা নারায়ণগঞ্জকে ঝুঁকিপূর্ণ (হটস্পট) হিসেবে শনাক্ত করেছে আইইডিসিআর। করোনার ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার থেকে এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ৮ এপ্রিল (বুধবার) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন চিকিৎসা, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ইত্যাদি এর আওতাবহির্ভূত থাকবে। আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।
করিমগঞ্জে মারা যাওয়া ব্যবসায়ী করোনাক্রান্ত : ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে মারা যাওয়া ব্যবসায়ী (৪৫) করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা: মো: মুজিবুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি মুসলিমপাড়ায় সোমবার ভোর রাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। ফলে এই প্রথম কিশোরগঞ্জ জেলায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলো।’
টাঙ্গাইলে রোগী শনাক্ত : ৩০ বাড়ি লকডাউন
টাঙ্গাইল ও মির্জাপুর সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইল জেলায় এই প্রথম একজন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। করোনাক্রান্ত ব্যক্তি পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তার বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের বৈরাগীভাওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকায়। জরুরি ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, ওই গ্রামের একটি পাড়া লকডাউন করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩০টি পরিবার রয়েছে।
শরীয়তপুরে আইসোলেশনে থাকা যুবকের মৃত্যু
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, করোনা সন্দেহে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা ৩৪ বছরের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল পৌনে ৪টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক এলাকার বাসিন্দা ওই যুবক। শরীয়তপুর সদর হাসাপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুনির আহমেদ খান জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর, স্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে ওই যুবক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এলে করোনা সন্দেহে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। মঙ্গলবার দুপুরেই ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল ঢাকা পাঠানো হয়।
গত ৪ এপ্রিল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নড়িয়া উপজেলার ৩৫ পরিবারের ১৮৯ জনকে লকডাউন করে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি উপজেলার হাটবাজার লকডাউন করা হয়।
দিনাজপুরে স্বেচ্ছায় লকডাউনে ১৭০ পরিবার
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর শহরের এক পাড়ার ১৭০ পরিবার স্বেচ্ছায় লকডাউনে গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে শহরের সুইহারী আশ্রমপাড়ার ১৭০ পরিবার স্বেচ্ছায় লকডাউনে যায়। আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা চিরঞ্জিত সরকার জানান, বিশ্বজুড়ে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমরা এই লকডাউনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এই পাড়ার তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে দু’টি পথ বন্ধ করে দিয়েছি। একটি প্রবেশপথে হাতধোয়া ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাড়ায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া এই পাড়ার মানুষ বাইরে যাচ্ছেন না। এলাকায় প্রবেশের আগে হাত ভালো করে ধুয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে।
মুক্তাগাছায় এপিবিএন সদস্য আক্রান্ত, লকডাউনে ৪৩৪ সদস্য
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্যের কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় নগরীর এস কে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে ৪৩৪ সদস্যসহ মুক্তাগাছা এপিবিএন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, বুধবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মুক্তাগাছা এপিবিএনের এক সদস্যের কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ায় ৪৩৪ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে রেখে এপিবিএনসহ আশপাশের এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এপিবিএনের ওই সদস্য গত মাসের শেষ দিকে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যোগদান করেন। তাকে নগরীর এস কে হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বালিজুড়ী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর ও লোহচুড়া গ্রামের তিনটি পরিবারের ১৫ জনকে লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত ৫-৬ এপ্রিল ওই তিনটি পরিবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে গ্রামে আসে। তারা নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টে চাকরি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে এখন পর্যন্ত ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেছে মাত্র তিনজনের। এ তিনজনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: মো: হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জনসহ মোট ৬৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫৭ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে।
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে নারায়ণগঞ্জ থেকে করোনা উপসর্গ, জ্বর,সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে পালিয়ে আসা এক যুবকককে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সেই সাথে নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে এবং ওই ব্যক্তির বাড়ি ও আশপাশের তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন।
নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিট থেকে গতকাল একজন এবং শহরের কান্দিভিটা এলাকার বাড়ি থেকে একজনসহ মোট দুইজনের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। শহরের কান্দিভিটা এলাকার ওই বাড়িতে করোনা রোগী থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আসা ৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তারা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং সবাই সুস্থ আছেন।
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুরে চিকিৎসকসহ ৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা করোনা উপসর্গ ব্যক্তিরা উপজেলার সদর, ভাদ্রা, মামুদনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা। মেডিক্যাল টিম তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে।
দোহার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য এ পর্যন্ত ১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠছেন বলেও তথ্যে জানা জানা যায়।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, গলাচিপা পৌরসভার দু’টি বাড়ি গতকাল লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী মোহাম্মদ বাদলের ছেলে রাজন দীর্ঘদিন পর তাবলিগ থেকে ফিরেছে। তাবলিগে থাকা অবস্থায় তার সহযোগীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় বুধবার সে বাড়ি ফিরে আসে। তাই তার বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। অপর দিকে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের শুক্কুর মিয়ার বাসাও লকডাউন করা হয়েছে।
মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের মনিরামপুরে একজন নার্স, তার স্বামী এবং এক স্বাস্থ্য সহকারীসহ ছয়জনের করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। পরীক্ষায় তিনজনের করোনা নেগেটিভ এসেছে। অন্যদের রিপোর্ট আসেনি।
চিতলমারী (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের চিতলমারীর সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যসহ তার পরিবারের ৯ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়ার পর নতুন করে কলিগাতী ও বড়বাড়িয়া এলাকায় আরো ১৮ ব্যক্তির বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে তাদেরকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে গত ২ দিনে মোট ২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হলো।


আরো সংবাদ



premium cement