২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় মৃত্যুহার কমাতে আরো তৎপর হতে হবে বাংলাদেশকে

চীনা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের অভিমত
-

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশি উল্লেখ করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস পরিস্থিতি সফলভাবে সামাল দেয়া চীনের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর জেং উনহোং বলেছেন, মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে কেবল জটিল রোগী নয়, করোনাভাইরাসের অল্প উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিদেরও চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। একই সাথে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সবাইকে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। করোনার পরীক্ষা যথাসম্ভব বিস্তৃত করতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।
চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইয়ের হুসাং হাসপাতাল সংক্রামক রোগ কেন্দ্রের প্রধান প্রফেসর জেং উনহোং গতকাল বুধবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময়ে এই অভিমত দেন। এতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব মেডিক্যাল সার্ভিসেসের মহাপরিচালক এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা যোগ দেন। ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ফেসবুকে ভিডিও কনফারেন্সিংটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কোভিড-১৯ পরীক্ষার হার বাড়িয়েছি। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছি। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ও জটিল রোগীদের জন্য আরো ভেন্টিলেশন মেশিন প্রয়োজন। এ জন্য চীনের সহযোগিতা চাই।
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ চালাতে হবে। এই ভাইরাস সীমান্ত মানে না। এ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে চীন। বাংলাদেশ অবশ্যই কোভিড-১৯ বিরোধী যুদ্ধে জয়ী হবে।
প্রফেসর উনহোং বলেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও সাংহাইতে প্রায় একই সময়ে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে। কিন্তু আজ সাংহাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পেরেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এখনই সর্বশক্তি নিয়োগ করার উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, সাংহাইয়ে প্রথম থেকেই আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটি ঘটনাও অবহেলা করিনি। কারো মধ্যে করোনার সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেলে তার সংস্পর্শে আসা সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ক্ষেত্র বিশেষে একজন করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা এক হাজার ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখন আমরা বিদেশ থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে নজর দিয়েছি।
প্রফেসর উনহোং বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে আমরা ব্যস্ত সাংহাইয়ের জীবনধারা ধীর করে দিয়েছি। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব বন্ধ রেখেছি। মানুষকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করেছি। প্রয়োজনের তাগিদে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি। সাংহাইয়ের মানুষ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এসব নিদের্শনা মেনে চলেছে।
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বাংলাদেশও বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকা এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কঠোর নীতি অনুসরণ করেনি। অন্য দিকে হংকং ও সিঙ্গাপুর এই নীতি অনুসরণ করে তুলনামূলকভাবে ভালো রয়েছে। জার্মানি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং আইসিইউ নিশ্চিত করার মাধ্যমে মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখতে পেরেছে। কিন্তু ইতালিতে মৃত্যুহার ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মৃত্যুহার প্রায় ১০ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement