চান্দিনায় করোনা উপেক্ষা করে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে কুমিল্লার চান্দিনায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছে দুইটি মিলের সহস্রাধিক শ্রমিক।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার পশ্চিম বেলাশহর-হাঁড়িখোলা এলাকায় ওই অবরোধ করে তারা।
পুলিশের তৎপরতায় পরে অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা। করোনাভাইরাস সতর্কতায় মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও টানা তিন ঘণ্টা অবরোধে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
যানজটে আটকা পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যানসহ যাত্রীবাহী অনেক যানবাহনও। পরে চান্দিনা থানা পুলিশ, দেবীদ্বার থানা পুলিশ ও ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে চান্দিনা ও দেবীদ্বার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সানানগরে ঊষা জুট মিল ও নূরীতলার আশা জুট মিলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। সরকারি বন্ধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মিল দুইটি ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার পর ৫ এপ্রিল খোলার কথা ছিল। পরবর্তীতে মিলের ওই ছুটি ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। গতকাল সকাল ৮টায় শ্রমিকরা মিলে এসে মিল বন্ধ দেখে তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে।
শ্রমিক রাবেয়া বেগম জানান, গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা কাজ করার পর আমাদের তিন সপ্তাহের বেতন বাকি থাকে। তখন আমাদেরকে বলেছিল ৫ তারিখ মিল খোলার পর আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু আজ (রোববার) মিলে এসে দেখি মিল বন্ধ। এদিকে সরকার থেকে নাকি প্রতি শ্রমিকের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এসেছে। ভাইরাসের কারণে মিল বন্ধ থাকলেও আমরা সরকারি পাঁচ হাজার টাকা ও আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি করি। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথাই পাত্তা দেয় নাই।
একাধিক শ্রমিক জানায়, টানা ১০ দিন মিল বন্ধ থাকায় আমরা না খেয়ে আছি। অন্যান্য মিলে শ্রমিদের বেতন পরিশোধ করার পাশাপাশি সরকারি পাঁচ হাজার টাকাও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ঊষা ও আশা জুট মিলে আমাদের পাওনা বেতনও দিচ্ছে না।
মিলের সিবিএ সভাপতি সুজন মুন্সি জানান, মিলের অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকায় পাট কেনার জন্য গত দুই মাস পূর্বে মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে তিন সপ্তাহের বেতন বকেয়া রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। হঠাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় গত ২৫ মার্চ শ্রমিকদের এক সপ্তাহের বেতন প্রদান করে মিল বন্ধ ঘোষণা এবং মিল খোলার পর তাদের বকেয়া দুই সপ্তাহের বিল প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু শ্রমিকরা একটি গুজব রটিয়েছে যে, সরকার শ্রমিকদের পাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছে সেটা মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিচ্ছে না। এমন গুজবকে পুঁজি করে অযথা আন্দোলন শুরু করে। আমি মিলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।
ঊষা জুট মিলের সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে কথা বলবেন।
চান্দিনা থানার ওসি মো: আবুল ফয়সল জানান, সরকারি পাঁচ হাজার টাকার অনুদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এমন একটি গুজব ছড়িয়ে মিলের শ্রমিকদের সাথে স্থানীয় কিছু অতি উৎসাহী লোক এক হয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যা বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ বিস্তারে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা মিল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব উপেক্ষা করে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘন করে সহস্রাধিক শ্রমিকের গাদাগাদিতে ওই আন্দোলনের বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা: আহসানুল হক জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বে দাউদকান্দিতে একটি আন্দোলনের পর দাউদকান্দিতে করোনা সন্দেহে একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এসব আন্দোলনে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।