২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা অনুদান নয়, ঋণের প্যাকেজ : বিএনপি

-

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে অনুদান নয়, ঋণের প্যাকেজ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি।
দলটি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনায় দিন আনে দিন খায় মানুষজনকে অবহেলা করা হয়েছে।
গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে উত্তরার বাসায় সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রেন্সপন্ড করেছেন। এটা পজিটিভ তখনই বলতে পারতাম যদি আমরা দেখতাম, আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি উদ্যোগী হয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, খেটে খাওয়া মানুষের, ইনফরমাল সেক্টরের কৃষকদের, কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজ) নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। দিয়েছে তো ঋণ, পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ। খেটে খাওয়া মানুষের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের জন্য আমরা সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেয়ার কথা বলেছিলাম। সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলাম, এটা অনুদান দিতে হবে। আমরা বলেছি, ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। শুধু ঋণ নয়, অনুদান, ভাতা, বেতন বাড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরি, সেগুলো সম্পর্কে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেভাবে কথা বলেননি। ‘দিন আনে দিন খায়’Ñ এই শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আনফুরচুনেটলি সেই সেক্টরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সে ধরনের কিছু আমরা দেখতে পাইনি। রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের কোনো কথা এ প্রণোদনা প্যাকেজে নেই। গার্মেন্ট খাতের প্রণোদনা শ্রমিকদের কাছে যাবে কি না তা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে প্যাকেজে কোনো কথা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হেলথ সেক্টারটি একেবারেই অবহেলিত, কোনো কথাই বলা হয়নি এখানে। এখন দরকার করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা, ডব্লিউএইচও প্রধানও বলছেন এ কথা। অথচ বাংলাদেশে এখন পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই, পরীক্ষা নেই অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে। যেখানে যাবেন বলবে যে, এখানে হবে না। ভেন্টিলেটর কত আছে আপনারা জানেন? আরো বেশি সেটা তৈরি করার কোনো কথা এখানে (প্রণোদনা প্যাকেজে) নেই।
তিনি বলেন, সব চেয়ে বড় দুর্বলতা দেখুন, হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার সেটাও নেই। ডিজি হেল্থ এক কথা বলছে, আইইডিসিআর ডিজি আরেক কথা বলছেন, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আরো ভীষণ কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবেÑ দেশে কোনো ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, পৃথিবী ভয়ঙ্কর মহামারীর মধ্যে পড়েছে, পৃথিবী গ্রেট ডিপ্রেশনের দিকে যাচ্ছে। সে বিষয়গুলোর ব্যাপারে সরকারের যদি দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে এ রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে এটা আমাদের বোধগম্য নয়।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় রোববার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, মধ্য মেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত আরো ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছেন তিনি। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মহাসচিব দলের পক্ষ থেকে ২৭ দফার এই প্যাকেজ প্রস্তাবনা দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা (করোনাভাইরাস) মানবসভ্যতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করার জন্য আমরা সবাই হাত বাড়িয়ে আছি, আমরা সবাই উদ্যোগী আছি। তারপরেও তারা বলছেন, আমরা নাকি দায়িত্বজ্ঞানহীন-কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছি। কোথায় দেখলেন তারা এসব? আমরা তো ২৭টা দফা দিয়েছি। তার বর্ণনা দিয়েছি। প্রত্যেকটি বিষয় যুক্তিসঙ্গতভাবে বলেছি। আজকে সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায়। আমি প্রস্তুতি বলব না, যে মানসিকতার দরকার ছিল, যেটা তৈরি করার তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
পূর্ণ লকডাউন দরকার : মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি, পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্য অনলি অ্যানসার। যে ভয়াবহতা আসছে, তা এখনো রিয়ালাইজ করতে পারছেন না তারা। ২৭ দিন হয়ে গেছে। অলরেডি আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বেই। ওই জিনিসটা যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি, আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা এবারো ওইভাবে পরাজিত করব, তবে তার জন্য যে অস্ত্র দরকার, তা তো আমরা পাচ্ছি না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে, ৮৭ শতাংশ হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা নেই। যেমনÑ কারো এপেনডিসাইটিজ হলো, আপনি চাইবেন ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে, সেটা আপনি পারবেন না। আপনার হার্ট অ্যাটাক হলো, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাবেন না। জাস্ট ফ্যাক্ট। এ বিষয়গুলো সরকার নজর দিচ্ছে বলে আমরা দৃশ্যমান কিছু দেখছি না। অন্য দিকে সমন্বয় কোনো খানেই নেই। এ বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইস্যুতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে।
করোনা মোকাবেলায় বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছেন, করোনা মোকাবেলায় তাদের ভূমিকা নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা যেসব মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের একটাই প্রতিক্রিয়া হলোÑ দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। ইতোমধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা কর্মজীবী দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটের মেয়র খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন। প্রত্যেকটা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে আমাদের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য সঠিক নয়, এসব অলিক অভিযোগ। এখন কি অভিযোগ করা সঠিক? তিনি বলেন, আমরা করোনার মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় অর্থনৈতিক কিছু আবেদন রেখেছি। তার প্রতি উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, যে মন্তব্যগুলো করেছেন, আমি আশা করিনি তার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ ধরনের মন্তব্য করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল