২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় মৃত্যু বেড়ে ৮, আক্রান্ত ৭০, লক্ষণ নিয়ে আরো ছয়জনের বিদায়

চিকিৎসা না দিলে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল; ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ২, আক্রান্ত ৯ : স্বাস্থ্য অধিদফতর; বগুড়ায় পাঁচ ডাক্তার ও আট নার্স কোয়ারেন্টিনে
-

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে আটজন আর আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন। এ দিকে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে দু’টি শিশুসহ আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ রোগীর চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। গতকাল এ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশ না মানলে প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
করোনায় মৃত্যু ২, নতুন আক্রান্ত ৯ : মোট টেস্ট করা হয়েছে ৫৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, করোনাভাইরাসে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৯ জন। করোনা সন্দেহে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৫৩টি। দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে আটজনের। গতকাল শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব তথ্য দেন। বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বর্তমানে ফোনে ১২ হাজার ৭৭৯ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ে। দৈনিক দুই হাজার ১০০ চিকিৎসক বিনামূল্যে মানুষের সেবা দিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে ৭৬ হাজার ৮০৩টি ফোন কল এসেছে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের একজনের বয়স ৯০ বছর। অন্যজনের বয়স ৬৮ বছর। তাদের একজনের স্ট্রোকের ইতিহাস রয়েছে এবং তার বুকে স্ট্যান্টিং করা ছিল।
নতুন করে ৯ জন আক্রান্ত হয়েছে তারাসহ দেশে মোট করোনা আক্রান্ত ৭০ জন। গতকাল আরো চারজন করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। দেশে করোনাভাইরাস থেকে মোট মুক্ত হয়েছেন ৩০ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগী রয়েছে ৩২ জন। ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, যে ৩২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ২০ জনকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে অবশিষ্ট ১২ জনকে।
এবার সর্দি, সর্দি ও কাশি থাকলে নিজেরাই কিছু ওষুধ কিনে খেতে পারবেন বলে জানালেন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সামান্য জ্বর, সর্দি ও কাশির জন্য হাসপাতালে যাওয়ার দরকার নেই। সর্দি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। সাথে গরম পানি পান করার কথা বলেছেন তিনি। এতে ভালো না হলে হাসপাতালে পৃথক জ্বর ও সর্দি-কাশির বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সর্দি-কাশি ও জ্বরের রোগীদের মধ্যে করোনা সন্দেহ করলে টেস্ট করে নিশ্চিত হলে তাকে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠাবেন। তিনি জানান, এখন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং নিকটতম পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেসরকারি হাসপাতালের নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে। তারা চিকিৎসা কার্যক্রম না চালালে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুমেকে করোনা টেস্ট কিটস, পরীক্ষা শুরু ১১ এপ্রিল
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে (খুমেক) গতকাল শনিবার টেস্ট কিটস এসে পৌঁছায় পিসিআরে আগামী ১১ এপ্রিল থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হবে। খুমেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফোকাল পারসন ডা: শাহনাজ পারভীন জানান, আগামী ১১ এপ্রিল থেকে নমুনা নিয়ে পিসিআর মেশিন থেকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছি। এই সপ্তাহে মেশিনটি ব্যবহারের বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করব।
খুমেক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেয়া পিসিআর মেশিনটি খুলনা মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় তলার মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্থাপন করা হয়েছে। এ জন্য একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টকে নিযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আইইডিসিআর থেকে আসা সেলিমুজ্জামান নামের ওই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সাথে মেশিন স্থাপনের কাজে অংশ নিয়েছেন। গত ৩০ মার্চ পিসিআর মেশিন খুমেকে এসে পৌঁছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজে স্থাপিত পিসিআর মেশিন দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রি পরীক্ষা করা যাবে। পিসিআরের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহভাজন রোগীর রক্ত, ঘাম ও কফ পরীক্ষা করা হবে। যে কেউ চাইলেই নিজে এসে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন না। এ জন্য লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে ভর্তির পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে শনাক্ত হলেই কেবল ওই রোগীকে ভর্তি করা হবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুতকৃত ডায়াবেটিক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে।
চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় ৫ বাড়ি লকডাউন
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় ওমরাফেরত এক ব্যক্তির করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই ব্যক্তির বাড়িতে (বেয়াইবাড়ি) যাওয়া-আসার কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সাতকানিয়ার পুরানগর ও চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী জামিজুড়ি গ্রামের এই পাঁচটি বাড়িকে লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এই বাড়িগুলোতে ১২টি পরিবার রয়েছে।
ভারত থেকে আসা পাঁচজন শার্শা আইসোলেশনে
বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা জানান, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে আসা ৩৬ বাংলাদেশীর মধ্যে পাঁচজনের শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাদের শার্শা উপজেলা আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে তাদের চেকপোস্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে শার্শা আইসোলেশনে পাঠানো হয়। তারা ভারতে চিকিৎসা ও বেড়ানোর জন্য গিয়েছিলেন। বেনাপোল চেকপোস্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের ডাক্তার জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে ৩৬ জন বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাদেরকে শার্শা উপজেলা আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জে ১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ১৯ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে নয়টি উপজেলা থেকে এ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। উপজেলাগুলো হলোÑ সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও তাহিরপুর। শুধু ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলার অবশিষ্ট রয়েছে। জেলা শহর থেকে এসব উপজেলার দূরত্ব বেশি হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সিভিল সার্জন ডা: শামছু উদ্দিন বলেন, জেলায় করোনাভাইরাস আছে কি না তার নমুনা পরীক্ষা চলছে। শনিবার ১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলে আরো দুইজন আইসোলেশনে
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় দু’জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয় মোট এক হাজার ৭৯১ জন প্রবসীকে। শনিবার সকাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এক হাজার ৫৩৫ জনকে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ২৫৪ জন। এ ছাড়া নতুন করে দু’জনকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। আর সখীপুরে যে ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল শনিবার তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অন্য দিকে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, টাঙ্গাইলে অসহায় জনগণের মধ্যে বিতরণের জন্য এ পর্যন্ত মোট অর্থ বরাদ্দ আসে ২৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৭০টি পরিবারকে মোট ১৫ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিতরণের জন্য এখনো মজুদ রয়েছে ৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া টাঙ্গাইলে বরাদ্দকৃত ৫০০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে এখনো মজুদ রয়েছে ২৬০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার ৭৮৬টি পরিবারের মধ্যে ২৪০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে ৬৯ জনের করোনা নেগেটিভ
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, গত তিন দিনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ৬৯ জনের সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাস নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা: চিত্তরঞ্জন দেবনাথ। তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত সাতজন প্রবাসীসহ এক হাজার ৪০৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শনিবার ৪৭ জনসহ ছাড়পত্র পেয়েছেন এক হাজার ২৬৩ জন।
কোটচাঁদপুরে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে সাবেক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে শনিবার সাবেক এক পুলিশ সদস্য শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মৃতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর প্রশাসনের মাধ্যমে বাড়ি ও বাড়ি যাওয়ার রাস্তা লকডাউন করেছে। কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আবদুর রশিদ জানান, কোটচাঁদপুর শহরের গালর্স স্কুল সড়কের সাবেক পুলিশ কনস্টেবল এনামুল হক সুজা (৭০) দীর্ঘ দিন ধরে ডায়বেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ১২-১৩ দিন আগে তিনি ফরিদপুর যান। সেখান থেকে এসে জ্বরে পড়েন ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শনিবার ভোরে তিনি মারা যান। কোটচাঁদপুর থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, মৃতের বাড়ি ও বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি লকডাউন করা হয়েছে। মৃতের গোছল, দাফন-কাফনের জন্য পাঁচজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্বল্প পরিসরে নামাজে জানাজা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে নগরীর ৬টি ভবন লকডাউন
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় ছয়টি ভবন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনীক ভবনগুলো লকডাউন ঘোষণা করেন। তিনি জানান, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জানান, করোনা আক্রান্ত রোগী দামপাড়ায় একটি দোতলা ভবনের উপরের তলায় থাকেন। তাদের বাসায় ছয়জন আছেন। নিচতলার আরেক ফ্ল্যাটে পাঁচজন থাকেন। আক্রান্ত ব্যক্তি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ভবনে বসবাসরত বাকিরা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশপাশের বাকি পাঁচটি ভবনের বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০টি পরিবার বসবাস করে। তাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। তারা আপাতত বাসা থেকে বের হতে পারবেন না। স্থানীয় বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনকে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। সিভিল সার্জন আরো জানান, আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ে ও জামাই গত ১২ মার্চ সৌদি আরব থেকে চট্টগ্রামে এসে তার বাসায় ওঠেন। তার ধারণা, সৌদিফেরত মেয়ে ও জামাই থেকে তিনি সংক্রমিত হতে পারেন। তবে ওই দু’জনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ ১৮ জন কোয়ারেন্টিনে : চট্টগ্রামে প্রথম করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দেয়া বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটালের তিন চিকিৎসকসহ ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ডা: শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত তিনজন ডাক্তার, তিনজন নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি পাঁচলাইশে পার্কভিউ হাসপাতালেও যান। তবে সেখানে সংশ্লিষ্টরা পিপিই পড়েছিলেন। তাই তাদের কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন নেই।
রমেকর পিসিআরে পরীক্ষা করা ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়নি
রংপুর অফিস জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা সন্দেহভাজন ৪২ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়নি। গতকাল এ সংক্রান্ত ফলাফল ঢাকার ডিজি হেলথে পাঠানো হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার প্রফেসর এ কে এম নূর-উন-নবী লাইজু বিষয়টি নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানান, শনিবার জমা পড়া নমুনা রোববার পরীক্ষা করা হবে। এক সাথে ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায় বলেও জানান তিনি। এ জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম প্রস্তুত আছে।
কোম্পানিগঞ্জ পৌরসভার কোয়ারেন্টিন থেকে প্রত্যেকে বাড়ি ফিরেছেন
কোম্পানিগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৫ জন প্রবাসীর সবাই ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সবশেষ শনিবার দুইজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এর আগে গত ২১ মার্চ থেকে চালু হওয়া এই কোয়ারেন্টিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩৫ জন প্রবাসী যুক্ত হয়েছিলেন। শনিবার কোয়ারেন্টিন কন্ট্রোল রুম থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
রাজশাহীতে করোনা ল্যাবে নতুন ২২ নমুনা
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের (রামেক) করোনা শনাক্ত ল্যাবে নতুন আরো ২২ জনের নমুনা এসেছে। এর মধ্যে পাবনা থেকে এসেছে ১৯টি। অপর তিনটি রাজশাহীর। গতকাল শনিবার দুপুরে রামেক অধ্যক্ষ ডা: নওশাদ আলী সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার আমরা ২২টি নমুনা পেয়েছি, আরো পেতে পারি। তবে এক দিনে আমরা সর্বোচ্চ আটজনের নমুনা নিয়ে কাজ করতে পারব। আমরা শুরু থেকে এ পর্যন্ত আটজনের নমুনা পরীক্ষা করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীতে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।
করোনা উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী আইডি হাসপাতালে নার্স : এ দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী সংক্রমণ ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে একজন নার্সকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে তাকে করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে গত শুক্রবার সকালে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রামেক হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: আজিজুল হক আজাদ শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সন্দেহভাজন ওই নারী একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স হিসেবে কর্মরত। রামেক হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরে তাকে আইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়। করোনা পরীক্ষার জন্য দুপুরে তার নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রামেক হাসপাতালে শনিবার সকালে ১২ রোগী পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তাদের মধ্যে আটজনকে দুপুরে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বাকি চারজন এখনো পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
গাইবান্ধায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ১০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত আমেরিকা প্রবাসী দু’জনসহ তাদের সংস্পর্শে আসা আরো দু’জন মোট চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশ.ন ও অপরজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আইসোলেশনে রয়েছেন। সিভিল সার্জন ডা: এ বি এম আবু হানিফ জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদেশফেরত ১৬৩ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। শনিবার জেলা প্রশাসকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হেয়ছে, এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় ১৬ হাজার ৪০০ দরিদ্র শ্রমজীবী কৃষক পরিবারের মধ্যে ১৬০ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও ১৬ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে আট লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ভাণ্ডারে ২০১ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
মৌলভীবাজেরে একজনের মৃত্যু, পরিবারের সদস্যরা হোম কোয়ারেন্টিনে
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের রাজনগরে সর্দি কাশি ও জ্বর শ্বাস কষ্টে গতকাল সকালে সানছু মিয়া (৪৫) নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রাজনগর উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি রায় জানান, মৃত সানছু মিয়া রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের রইছ মিয়ার ছেলে। মাঝে মধ্যে তিনি অসুস্থ থাকতেন। গত দু’দিন ধরে তিনি সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়।
মুন্সীগঞ্জ থেকে ৯ জনের নমুনা আইইডিসিআরে প্রেরণ
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে করোনা শনাক্তের জন্য ৯ জনের সোয়াব পাঠিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: আবুল কালাম আজাদ। দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশি রয়েছে এমন ৯ জনের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: আবুল কালাম আজাদ জানান, সোয়াব সংগ্রহের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৩ জন কর্মী রয়েছেন। তারা পিপিই ব্যবহার করে নিজেদেরকে সুরক্ষায় রেখে সোয়াব সংগ্রহ করেছেন। এই ৯ জনের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার একজনের সোয়াব টেস্ট করা হয়েছে। যিনি দুবাই থেকে এক মাস আগে এসেছেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন তার পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ থাকায় তার সোয়াব নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজদিখান উপজেলা থেকে দু’জন, টংগীবাড়ির দু’জন, লৌহজংয়ের দু’জন, গজারিয়া উপজেলার দু’জনসহ মোট ৯ জনের সোয়াব সংগ্রহ করে শনিবার ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। আরো আটজনের সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছে, যা রোববার পাঠানো হবে।
নড়িয়ায় ৩৩টিসহ ৩৫ বাড়ি লকডাউন
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়ার এক বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত হয়ে সকালে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করায় নড়িয়ায় তার বাড়িরসহ আশপাশের ৩৩টি বাড়ির ১৮০ জন সদস্য ও স্বজনদের দু’টি বাড়িসহ মোট ৩৫টি বাড়ি লকডাউন করেছে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন। স্বজনদের দু’টি বাড়ির একটি হলো মৃত ব্যক্তির বোনের সখিপুরের বাড়ি ও অপরটি মেয়ের মীরপুরের টলারবাগের বাড়ি। জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের জানান, ইতোমধ্যে নড়িয়া উপজেলার হাট-বাজারসহ সব লোকালয় ও রাস্তাঘাটে যেকোনো ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কাউকে ঘরের বাইরে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপর দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে আসা রোগীর মৃত্যু হলে নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতিকালে লাশ নিয়ে পালিয়েছে স্বজনরা। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুনির আহমেদ খান জানান, গতকাল সকাল সোয়া ৯টার দিকে দিকে জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে ওই রোগী ভর্তি হন। বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। জ্বর ও মাথা ব্যথা থাকায় করোনা আছে কি না পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতি নেয়ার ফাঁকে ওই রোগীর স্বজনেরা লাশ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মৃতের বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিকেলে স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে লাশ দাফন করা হয়।
ধুনটে প্রবাসীর ছেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি : বাড়ি লকডাউন
বগুড়া অফিস ও ধুনট (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামে মালয়েশিয়া প্রবাসীর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে ওই প্রবাসীর ১৮ বছর বয়সী ছেলের করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় তাকে বগুড়া করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শনিবার রাত ৯টায় ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, হেউটনগর গ্রামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর ছেলে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। গত ছয় দিন আগে ছুটিতে ওই যুবক ঢাকা থেকে হেউটনগর গ্রামের বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর সে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শনিবার দুপুরে চিকিৎসার জন্য সে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। এ সময় চিকিৎসকরা তার শরীরে করোনা উপসর্গ পাওয়ায় তাকে আইসোলেশনে নেয়ার উদ্যোগ নেন। বিকেলে ওই যুবককে বগুড়া আইসোলেশন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে রাত ৯টায় ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা হেউটনগর গ্রামে ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন। একপর্যায়ে তিনি ওই বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করেন।
নেত্রকোনায় দিনমজুরের মৃত্যু, এলাকায় তোলপাড়
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার দ্বীপহাওর খালিয়াজুরি উপজেলায় নৃপেন্দ্র দাস (৫৭) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যুকে ঘিরে এলাকাবাসী, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গোপনে শ্মশানঘাটে দ্রুত ওই ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এমন সংবাদ প্রচার হলে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ঝটিকা সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে মৃতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর সৎকার সম্পন্ন করা হয়। গতকাল শনিবার ভোরে করোনার লক্ষণ নিয়ে সর্দি-জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বড়াটি গ্রামে নিজ বাড়িতে ওই দিনমজুরের মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপনে কিছু নিকটাত্মীয় স্থানীয় একটি শ্মশানঘাটে দ্রুত তা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রস্তুতি নেয়। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা: মাশরুর সিয়াম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস ঢাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্রমিকের কাজ করতেন। গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি আসেন। কিন্তু এই বিষয়টি গোপন থাকায় তিনি আসলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না তা জানা যায়নি। স্বজনদের কেউ কেউ দাবি করেন তিনি যক্ষ্মার রোগী ছিলেন। কিন্তু যক্ষার কোনো কাগজপত্র আমরা পাইনি। হাসপাতালেও কোনো রেকর্ড নেই। সিভিল সার্জন ডা: তাজুল ইসলাম জানান, নমুনা পরীক্ষার পর বুঝা যাবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না।
বরিশাল থেকে পাঠানো নমুনায় কারো করোনা শনাক্ত হয়নি
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মৃতরোগীসহ ছয়জন রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলে তাদের কারো দেহেই করোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি। শনিবার দুপুরে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন এ খবর জানান। তিনি আরো জানান, বর্তমানে শেবাচিমের করোনা ইউনিটে দুইজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর দিকে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন জানান, নগরীসহ জেলার ১০টি উপজেলায় বিদেশ থেকে আসা ৬৮৯ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে নিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তাদের মধ্যে ৪৪০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
সাতকানিয়ায় চার বাড়ির ১২ পরিবারকে লকডাউন
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের কালিনগর এলাকায় চার বাড়ির ১২টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গতকাল চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। ওই ব্যক্তির মেয়ে ও শাশুড়ি গত ১২ মার্চ সৌদি আরব থেকে ওমরা হজ করে দেশে আসেন। অপর মেয়ে চট্টগ্রাম নগরে বাবার বাড়িতে উঠেন। আর শাশুড়ি সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম শহরের ওই ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করলে তাকে চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলায় কোভিড-১৯ সন্দেহে দু’জন ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা দু’জনেই কয়েকদিন ধরে জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
মাগুরা সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের মুজদিয়া গ্রামে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বিদেশফেরত এক ব্যাক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর বলেন, বিদেশফেরত ওই ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেরপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের উপসর্গ সন্দেহে পরীক্ষার জন্য শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর গ্রামের একজন ও শ্রীবরদী উপজেলার চারজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের বাড়ির লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: এ কে এম আনোয়ারুর রউফ জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় পাঠানো ১০ জনের নমুনায় সবার রেজাল্টই নেগেটিভ। তারা কেউই করোনা আক্রান্ত নন।
ইউএনবি জানায়, কুমিল্লায় শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৩৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: নিয়তুজ্জামন। তিনি জানান, জেলার ১৬ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানোর পর শনিবার সকালে ৯ জনের ফল নেগেটিভ এসেছে। বাকিদের ফল পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। ডা: নিয়তুজ্জামন বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো দু’জন হোম কোয়ারেন্টিনে ঢুকেছেন। এ নিয়ে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৩৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ ছাড়া ১৪৫ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষে হয়েছে।
চাঁদপুরে নারীর মৃত্যু ৫ বাড়ি লকডাউন
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন বাড়ি তিনটি লকডাউন ঘোষণা করে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিন দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন ওই নারী। শুক্রবার রাতে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি মারা যান। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার ফল না আসা পর্যন্ত ওই পাঁচ বাড়ি লকডাউন থাকবে। চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘ওই নারী কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।’ চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা লাশ নিয়ম অনুযায়ী দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। সেই অনুসারে তার দাফন হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে ২ শিশুর মৃত্যু : লকডাউনে ৯ পরিবার
ইউএনবি জানায়, লক্ষ্মীপুরে কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ও চর মার্টিন এলাকায় শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে দু’টি বাড়ির ৯টি পরিবারকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি নিয়ে কমলনগরে দুই বছর তিন মাস বয়সী এক শিশু মারা যায়। এতে উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের বদিউজ্জামান মার্কেটের পাশে মৃতের বাড়ির পাশের তিনটি পরিবারকে লকডাউন করে রাখা হয়। উপজেলার আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আমিনুল ইসলাম জানান, করোনার উপসর্গ (শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি) সন্দেহে শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ দিকে চর মার্টিনে কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে নোয়াখালী হাসপাতালে নেয়ার পথে শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিম তার নমুনা সংগ্রহ করে। কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ নুরুল আবছার বলেন, ‘তোরাবগঞ্জ ও চর মার্টিনে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ওই দুই বাড়ির ৯টি পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে। শিশুদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’
বাগেরহাটে আরো এক পুলিশ সদস্যসহ আইসোলেশনে ভর্তি ২
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে আরো এক পুলিশ সদস্যসহ দু’জন বাগেরহাট সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। নড়াইলে কর্মরত ৩০ বছর বয়সী এক পুলিশ সদস্যকে শনিবার সকালে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে জেলার কচুয়া উপজেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সদর উপজেলার হালিশহর-খালিশপুর এলাকার মধ্যবয়সী এক মহিলাকে একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় করোনা আক্রান্ত সন্দেহে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বাগেরহাটে কর্মরত অপর এক পুলিশ সদস্যকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি এখনো হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। ওই পুলিশ সদস্যের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পায়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিয়ানীবাজার থেকে করোনা সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষার নমুনা প্রেরণ
বিয়ানীবাজার (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে একজন রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা আইইডিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল