২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আশপাশের জেলার সড়ক ও ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড়

ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন পোশাক কর্মীরা

-

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে আজ রোববার থেকে কিছু কিছু তৈরী পোশাক কারখানা খুলছে। শনিবার ছুটি শেষ হওয়ায় গত দুই দিন ধরে কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরছেন শ্রমিকেরা। তবে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ফিরতে নারাজ। তাই অনেক কারখানা বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা বলে কর্মস্থলে আনছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে প্রাণঘাতী করোনার ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা বা আশপাশের কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।
জানা গেছে, ঢাকায় ফিরতে গতকাল রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে পোশাক শ্রমিকসহ বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। লঞ্চ ও অন্য নৌযান বন্ধ থাকায় শত শত মানুষ বিভিন্ন বাহনে করে ফেরি পার হন। ফরিদপুর-দৌলতদিয়া মহাসড়কে হেঁটে, ভ্যান-ট্রলি ও পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায় পোশাক শ্রমিকদের। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হাঁটার পর অতিরিক্ত ভাড়ায় ট্রাক, পিকআপ বা অটোরিকশা করে ঢাকার দিকে ছুটছিলেন মানুষ।
এ দিকে মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরি ঘাটেও দেখা মিলে ঢাকামুখী মানুষের ঢল। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলাকালে দুই নীতি গ্রহণের সমালোচনা করেছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে নাটোর থেকে একদল শ্রমিক ট্রাকে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। করোনার এই প্রাদুর্ভাবের সময় একজন থেকে আরেকজন কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও এসব শ্রমিক গায়ের সাথে গা লাগিয়ে ফিরছেন কর্মস্থলে। তাদের বহন করা ট্রাককে নাটোর সদর উপজেলার অ্যাসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান আটকিয়ে দিলেও পরে ছেড়ে দেন। আবু হাসান তার ফেসবুকে ট্রাকের ওপর গাদাগাদি করে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘এরা ঢাকাগামী ট্রাকের যাত্রী। সকলেই বিভিন্ন গার্মেন্টে কাজ করেন। নাটোর সদরের দত্ত পাড়া ব্রিজের পাশে থেকে দুপুর ১২টায় ছবিটি তুলেছি। হামীম গ্রুপের একজন কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেল বেতন নিতে যাচ্ছেন। পরে তার মাধ্যমে ওই কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসারকে ফোন করে বললাম, এই যুগে বেতন দিতে হলে অনলাইনেও বেতন দেয়া যায়। খামোখা ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন যে? তিনি বললেন, কোম্পানির সিদ্ধান্ত, আমার কিছু বলার নাই। রিস্কি জার্নি ফর করোনাভাইরাস। ট্রাকটি ছেড়ে দিলাম। ভাবছি.....।’
এ ব্যাপারে কথা হয় অ্যাসিল্যান্ড আবু হাসানের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই দিক দিয়ে একটা অভিযানে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় ট্রাকে পোশাক কর্মীদের এমন অবস্থা দেখে আটকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ট্রাকে বিভিন্ন কারখানার কর্মী ছিলেন। বেতন দেবেন বলে তাদের কারখানায় যাওয়ার কথা বলেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এক কারখানার অ্যাডমিন অফিসারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাকটি ছেড়ে দেই।
জানা যায়, রোববার থেকে কারখানা খুলছে। এজন্য শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার তাগাদা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাজির না হলে বেতন কাটা যাবে। কোনো কোনো মালিক চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দিয়েছেন। সে কারণে করোনার ভয় নিয়েই কষ্ট করে ঢাকায় ফিরছেন তারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাক বা মালবাহী যেকোনো গাড়িতে করে ঢাকায় ফিরছেন তারা। অনেকে আবার ভেঙে ভেঙে অর্থাৎ একই গাড়িতে না এসে কিছু দূর এক গাড়িতে এসে, তারপর আরেক গাড়িতেÑ এভাবে ঢাকায় পৌঁছছেন। অনেকে আবার হেঁটে বা রিকশা ভ্যানেও ফিরছেন কর্মস্থলে।
এক শ্রমিক জানান, একটি টি-শার্ট তৈরি করতে ২৫-৩০ জন শ্রমিকের হাতের ছোঁয়া লাগে। একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এদের সবাই আক্রান্ত হবেন। এরপর আশপাশের লোকেরাও আক্রান্ত হবেন। পোশাক কারখানায় এখন অবশ্যই ছুটি থাকা উচিত। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। আমাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে তাড়া দেয়া হচ্ছে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা গার্মেন্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত মালিকদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। দেশে প্রায় ১১ শ’ কারখানায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্ডার বাতিল হয়েছে। তারা বলছেন, কারখানা খোলা রাখা বা বন্ধের বিষয়ে সরকারের বাধ্যবাধকতা নেই। কারখানাগুলোতে বিদেশী ক্রেতাদের ক্রয়াদেশে পোশাক তৈরি হচ্ছে। কিছু কারখানায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ও মাস্ক তৈরির অর্ডার পাওয়া গেছে। এই অর্ডার হাতছাড়া হলে বড় বিপর্যয় তৈরি হবে এই সেক্টরে।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, আমরা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলাম। এর পর থেকে কারখানাগুলো চালু হবে। কারখানা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের রক্ষা করার জন্য সব স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের সব দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মালিকের থাকবে। কারখানা চালু রাখা বা বন্ধ রাখা যেকোনো অবস্থাতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কেউ চাইলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন। পিপিই ও মাস্ক বানাতে কারখানাগুলো খোলা থাকবে। পাশাপাশি খোলা রাখা কারখানাগুলোতে শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা নতুন করে ছুটির সময় বাড়াব না। যাদের কাজ আছে, তারা কারখানা খুলবে। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে কলকারখানা চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু ক্রেতা এখনো তাদের সাথে কাজ করতে চান। বাংলাদেশে তৈরী পোশাক কারখানায় পিপিই ও অন্য সুরক্ষা পণ্যের রফতানি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। করোনাসংক্রান্ত কিছু উপকরণের বিশ্ববাজারে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এসব চাহিদা কাজে লাগানোর জন্য কারখানা খোলার বিষয়টি আসছে, যোগ করেন মোহাম্মদ হাতেম।
বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, শনিবারের পর থেকে কেউ কারখানাটি পরিচালনা করবেন কি না তা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কারখানা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের রক্ষা করার জন্য সব স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি নিশ্চিত করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের তৈরী পোশাক কারখানা খোলা রাখা যাবে। করোনার এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। সেই চাহিদা অনুসারে নতুন পণ্য তৈরি করে রফতানি করতে হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সুযোগ আসছে। এসব সুবিধা যেন ব্যবসায়ীরা কাজে লাগান। তবে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ বিষয়ে পোশাক শ্রমিকদের ১১টি সংগঠনের জোট গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে সারা দেশে অচলাবস্থার মধ্যেও মালিকপক্ষের অনেকেই কারখানা চালু রেখেছেন।
দৌলতদিয়া ঘাট ও দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কে ভিড়
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, বেসরকারি ও গার্মেন্টকর্মীদের ঢাকায় ফিরতে দৌলতদিয়া ঘাটে প্রচণ্ড ভিড় ছিল গতকাল দুপুর থেকেই। করোনায় সামাজিক দূরত্ব দুরের কথা, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অসংখ্য মানুষ ফেরিঘাটে এসে ভিড় করে পদ্মা পাড়ি দেয়ার জন্য। লঞ্চ ও অন্য ট্রলার বন্ধ থাকায় শত শত মানুষ গাদাগাদি করে ফেরিতে পার হন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কর্মমুখী মানুষ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ পাড়ি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফরিদপুর-দৌলতদিয়া মহাসড়কে পায়ে হেঁটে, ভ্যান-ট্রলি এবং পিকআপ ভ্যানে করে নিজ নিজ গন্তব্যে ছোটেন পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ১০টায় এমন চিত্র দেখা যায় খুলনা-দৌলতদিয়া মহাসড়কে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ম্যানেজার আবদুল্লা রনি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে এখন ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। তবে গতকাল শনিবার থেকে গাড়ির চেয়ে মানুষই বেশি পার হচ্ছে। ফেরির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় একটি ফেরি ঘাটে ভিড়ার সাথে সাথেই তাতে ওঠার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সরেজমিন দেখা যায়, খুলনা, ফরিদপুর-দৌলতদিয়া মহাসড়কের বিভিন্ন বাসট্যান্ডে ঢাকামুখী যাত্রীরা কেউ হেঁটে যাচ্ছেন, যাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো তারা ভ্যান বা পিকআপে করে ছুটে চলছেন। অতি কষ্ট করে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত আসতে এলাকাভিত্তিক প্রতিজনের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা লেগেছে। ঢাকার মহাখালীর পোশাকশ্রমিক গোলেজান বিবি জানান, রোববার কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পাইছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই কারখানায় যাচ্ছি। সাইদুল নামে আরো এক পোশাকশ্রমিক বলেন, পথে যে ভাড়া তার চেয়ে পাঁচ-সাত গুণ বেশি চাচ্ছে পিকআপ ভ্যানের চালকরা, আমার কাছে এত টাকা নাই তাই বাধ্য হয়েই মোবাইলটি কম দামে বিক্রি করে দিয়ে যাচ্ছি।
ময়মনসিংহে গার্মেন্ট কর্মীদের স্রোত
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত দু’দিন ধরে গার্মেন্টকর্মীদের স্রোত চলছে ঢাকার দিকে। রোববার গার্মেন্ট খুলবে বলে শ্রমিকরা হেঁটেই ছুটছেন ঢাকার পথে। আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে হাজারো শিশু-কিশোরসহ নারী-পুরুষ যে যেভাবে পারছেন ময়মনসিংহ আসছেন। কিন্তু ময়মনসিংহের পাটগোদাম ব্রিজেরমোড় বাসস্ট্যান্ডে যানবাহন না পেয়ে আরো পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হেঁটে মহাসড়কের দিঘারকান্দা বাইপাসমোড়ে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। অনেকেই হেঁটেই ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছেন। চাকরি রক্ষা ও বেতনের সময় হওয়ায় করোনার ভয় নিয়েই শ্রমিকরা কারখানামুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিসের ছুটি থাকলেও তাদের ছুটি না থাকায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ময়মনসিংহ ট্রাফিক পুলিশের ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, গত শুক্রবার থেকে হাজার হাজার মানুষ স্রোতের মতো ঢাকার দিকে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার ভোর থেকে মহাসড়কে মানুষের ঢল নামে।
মৃত্যুভয় এড়িয়ে ছুটছে মানুষ
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর ভয় এড়িয়ে কর্মস্থলে ছুটতে বাধ্য হচ্ছে হাজারো শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে দেখা মিলে রাজধানী ঢাকামুখী কর্মজীবী মানুষের ঢল। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা খোলা পিকআপ, পন্যবাহী ট্রাক ও রিকশা-ভ্যানে চেপে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছে। পরিবহন স্বল্পতায় অনেকেই দল বেঁধে হেঁটে রওনা দিচ্ছে ঢাকার পথে। পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রচার-প্রচারণাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের। কোনো বাধাই মানছেন না কর্মজীবী মানুষ।
বরিশাল থেকে ঢাকায় ছুটছেন কর্মীরা
বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনার চলমান পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার সকাল থেকে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাস বন্ধ থাকায় সব বাধা উপেক্ষা করে বিকল্প পথে ঢাকার উদ্দেশে ছুটছেন মানুষ। কেবল নগরীর নয়, অন্যান্য উপজেলায় থাকা শ্রমিকরা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। ঢাকাগামী যাত্রীরা বলেন, সরকার ছুটি ঘোষণা করার পর তারা গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন। তবে ৫ এপ্রিল থেকে গার্মেন্ট ও কিছু বেসরকারি কোম্পানির অফিস খোলার ঘোষণা দিয়েছে। এখন চাকরি টিকিয়ে রাখতে তাদের কষ্ট করে কখনো হেঁটে, ট্রাকে চেপে আবার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
বিপাকে গাজীপুরের পোশাক শ্রমিকরা
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, আজ থেকে জেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা উপেক্ষা করে হাজার হাজার শ্রমিক গাজীপুরে ফিরতে শুরু করেছেন। প্রথম দফায় ১০ দিন ছুটি দেয়া হলেও দ্বিতীয় দফায় ছুটি বাড়েনি। এতে শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। তাই করোনা আতঙ্কের পাশাপাশি ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় তারা চাকরি রক্ষা করতে ছুটছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। গত শনিবার থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে দলবেঁধে শ্রমিকরা ছুটছেন তাদের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারা পিকআপ, ট্রাক ও রিকশায় চড়ে বাড়ি থেকে আসছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ড ও পয়েন্টে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন। যানবাহন স্বল্পতার কারণে মানা হচ্ছে না করোনা সংক্রমণ রোধের কোনো নিয়মকানুন। এতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ভিড়। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর অঞ্চলের গ্রামের বাড়ি থেকে সকাল থেকেই পিকআপ, ট্রাক ও ভ্যানগাড়িতে চড়ে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জেলার বিভিন্ন বিভিন্ন স্ট্যান্ডগুলোতে যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অগণিত নারী-পুরুষ শ্রমিককে। যানবাহন স্বল্পতার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ট্রাক পিকআপ চালকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। যাত্রীদেরও ওই সব পরিবহন থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে। অনেকে দলবেঁধে হেঁটে গাজীপুর মহানগর ও ঢাকা অভিমুখে চলছেন।


আরো সংবাদ



premium cement