২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি কমেছে পচনশীল পণ্যের

-

রাজধানী ঢাকার বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বেশির ভাগ শুকনো খাবারের দাম বেড়েছে। আর কমেছে শাক-সবজি, পেঁয়াজ, মাছ, ডিম, মুরগিসহ প্রায় সব পচনশীল পণ্যের। করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটির কারণে কাঁচাবাজার বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই বেচা-বিক্রি। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলো খোলা আছে, সিটি করপোরেশনের বাজারগুলো বন্ধ থাকলেও বেচাকেনা হচ্ছে আশপাশে। তবে পরিবহন সঙ্কটে পড়ে গ্রামে উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারজাত করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার মালিবাগ রেলগেট-সংলগ্ন কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ দিনের মতোই ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। শত শত মানুষের ভিড়ে করোনাজনিত আতঙ্ক কিংবা সাবধানতার লেশমাত্রও নেই। এ সময় কিছু মানুষের মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস দেখা গেলেও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষিত রয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, পারিবারিক প্রয়োজনে খাদ্য এবং নিত্যপণ্য সংগ্রহের জন্য তাদেরকে বাইরে আসতেই হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তার চেয়ে আয়-রোজগারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে বিক্রেতাদেরও।
খুচরা বাজারে গতকাল সবচেয়ে কম দামি প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এক মাস আগে এ চালের দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মাঝারি মানের বিভিন্ন চাল বিক্রি যাচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। আর নাজির শাইল ও মিনিকেটসহ কিছু সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিদরে। এক মাস আগে এ চাল বিক্রি হয়েছে অন্তত ৫ টাকা কম দরে। সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদফতর জানায়, কাঁচাবাজারে বর্তমানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। গত ৩ নভেম্বর তা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি সবচেয়ে মোটা মসুর ডালের দাম উঠেছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। দুই মাস আগে এ দাম ছিল ৬০ টাকার মধ্যে। মাঝারি দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, এটা ছিল ৭০ টাকার মধ্যে। আর সরু দানার মসুর ডাল দুই মাস আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। এ ডাল গতকাল বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। কৃষি বিপণন অধিদফতরের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, চার মাসে মোটা মসুর ডালের দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। একই অবস্থা ছোলার ডাল, খেসারির ডাল, মুগডাল এবং ডাবলির ক্ষেত্রেও।
খুচরা বাজারে গতকাল এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১১২ টাকা। এত দিন এ দাম ছিল ১০০ টাকার মধ্যে। খোলা সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৯৫ থেকে ৯৮ টাকায়। জানুয়ারিতে ছিল ৮৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতা-বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা আতঙ্কে হাস, মুরগি, কবুতর, প্রভৃতি প্রাণীর বিক্রি কমেছে। ফলে দামও বেশ কম। কমেছে পেঁয়াজ-রসুনের দামও। দেশি পেঁয়াজের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। দাম কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজেরও। খুচরা বাজারে ২৪ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ পণ্যটি। দেশী রসুন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। আদার দামও কিছুটা কমে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ঢেড়শের দাম এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা। ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি করল্লা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিদরে। একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সাধারণ সবজির মধ্যে টমেটো ২০ থেকে ৩০ টাকা, শিম ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, শসা ২০ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফুল ও বাঁধাকপির পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুনের কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ও শালগম ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা এবং আলুর দাম প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে প্রতি কেচি সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এখন বেশ কম। মুরগি ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিদরে পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, দেশি মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, গরুর গোশতের দাম কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি করতে দেখা যায়। দেশী মুরগির ডিমের ডজন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, হাসের ডিমের হালি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
বাজারে গতকাল এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হয় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এ ছাড়া পাবদা মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, রুই আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, মৃগেল ২১০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতল ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
খাদ্যপণ্যের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবুল বাসার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, খাদ্যপণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু বাজারে তো একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। আগে চালের দাম বাড়ল। আর এখন নীরবে ডালের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ছে চিনি, তেল, আটা, ময়দা প্রভৃতিরও। এভাবে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হয়। সরকারের উচিত এই মুহূর্তে যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement