২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজশাহী চিড়িয়াখানায় চারটি হরিণ খেল ক্ষুধার্ত পাঁচ কুকুর

-

রাজশাহী নগরীর শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ঢুকে পাঁচটি ক্ষুধার্ত কুকুর খেয়ে ফেলেছে চারটি হরিণকে। গতকাল শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দেয়া হয়। আর বের করে দেয়া হয় কুকুর পাঁচটিকেও।
জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে প্রথমে দাবি করেন। বরং সাংবাদিকরা এ খবর কোথায় পেলেন সেটিই বারবার জানার চেষ্টা করেন। অবশ্য পরে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। নেড়ি কুকুরের দল ঢোকার সময় শেডে মোট হরিণ ছিল ৭৫টি। কুকুরে খাওয়ার পর এখন হরিণের সংখ্যা ৭১টি। কুকুরের পেটে যাওয়া চার হরিণের তিনটিই বাচ্চা। একটি তাদের মা। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ শেডের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
এ দিকে ভোরে এ ঘটনার পর গতকাল বিকেলেও চিড়িয়াখানার ভেতরে কুকুর দেখা গেছে। চিড়িয়াখানায় দ্বিতীয় গেটের বাম পাশে থাকা পুকুরপাড়ে শুয়ে ছিল একটি কুকুর।
চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানায়, কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণেই শেডের ভেতর চারটি হরিণ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে সাংবাদিকরা চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন। তবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা: ফরহাদ উদ্দীনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে কয়েক দফা ফোন করা হলেও ভেটেরিনারি সার্জন ডা: ফরহাদ উদ্দীন ফোন ধরেননি।
শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। তিনি জানান, রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ চলেছে। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবারসঙ্কট। তাই পাঁচটি নেড়ি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়েছিল। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের শেডে ঢুকতে পেরেছিল।
সমর কুমার পাল বলেন, আমরা ধারণা করছিÑ ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়েছিল মা হরিণটি। তখন সবগুলোকেই আক্রমণ করেছে কুকুরগুলো। সব হরিণের দেহের অংশ খেয়ে ফেলেছিল। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন হরিণের শেডে পাঁচটি কুকুর। চারটি হরিণের ক্ষতবিক্ষত দেহও পড়ে ছিল। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেয়া হয় ও হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তিনি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement