১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টেস্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ সংক্রান্ত সভায় বক্তব্য রাখছেন : বাসস -

দেশে আরো দু’জন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন। ১৪১টি নমুনা পরীক্ষা করে এ দু’জনকে শনাক্ত করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৫৬ জন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পূববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ যে দু’জন শনাক্ত হয়েছেন তারা পুরুষ। এদের মধ্যে একজনের বয়স ৩০-এর কোঠায় এবং অপরজন ৭০-এর কোঠায়। এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে বলা হয়েছে।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেক অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল অনলাইন ব্রিফিংয়ে এমআইএসের পরিচালক ডা: হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকাসহ প্রত্যেক বিভাগের পরিচালক, সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আমরা যেন এসব নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষা করতে পারি।
এ দিকে দায়িত্ব পালনকালে মুখে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার ঝুঁকি এড়াতে এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিএমএসডির পরিচালক কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশব্যাপী ইতোমধ্যে তিন লাখ ৫৭ হাজার ২৫০টি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে মজুদ আছে ৫৬ হাজার ১১০টি। প্রতিদিন দেশীয় কোম্পানি থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার পিপিই সংগ্রহ করা হচ্ছে। চীন থেকে আরো কিছু পিপিই (অনুদান ছাড়া) শুক্রবার অথবা শনিবার আসবে। আমাদের দরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ পিপিই। এ ছাড়া বিদেশ থেকে তিন থেকে চার লাখ সার্জিক্যাল ও এন-৯৫ মাস্ক আসবে। যেখানে পিসিআর ব্যবহার করা হয় সেখানে এগুলো দেয়া হবে। তিনি বলেন, তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু মাস্ক গেছে যেগুলো এন-৯৫ নয়। আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি এবং এগুলো প্রত্যাহার করার কথা বলেছি।
এ দিকে রাজধানীর বাইরে ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় গত বুধবার রাতে করোনা আক্রান্ত সন্দেহের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর তার বাড়ি লকডাউনের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। তার শরীরের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার গাবতলীতে বুধবার মারা যাওয়া শিশুর লাশ পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে দাফনের পর তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। অন্য দিকে সুনামগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শেরপুরের নকলায় করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ায় মা ও ছেলের শরীরের নমুনা নিয়ে মমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাটে এক পুলিশ সদস্য হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতাল নার্সের স্বামীর মৃত্যু, ৩৫ পরিবার কোয়ারেন্টিনে : রাজধানীর শেরেবাংলানগরের পঙ্গু হাসপাতাল ডরমিটরিতে এক নার্সের স্বামীর জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার ওই ডরমিটরির ৩৫ চিকিৎসক ও নার্স পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতে ওই ব্যক্তি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহে ডরমিটরির বাসিন্দাদের মধ্যে গতকাল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো: আবদুল গণি মোল্যাহ একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মৃত ব্যক্তির করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ ছিল। মৃতদেহের মুখ ও গলার সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে পুরো ভবনের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক কে এম মামুন মোর্শেদ বলেন, রোগীর জ্বর ও কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ছিল। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তি মারা যান। পরে ঢাকার সিভিল সার্জন আল মারকাজুল ইসলামের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশোধনী : গত রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকালের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভুলক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতিটি উপজেলায় ২টি করে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিভিন্ন চিকিৎসক পেশাজীবী সংগঠন এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিবর্গের উপস্থিতিতে একটি সভায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়। এর ফলে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে অধিকতর সঠিক ধারণা সৃষ্টি হবে বলে মত প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম গৃহীত হয়। বিভয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপিত না হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতর আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ৯টি এবং ঢাকার বাইরে ৫টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষা কেন্দ্র করেছে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা নগরীর বাইরে ৪০টি জেলার সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ২৬৭টি নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পিসিআর পরীক্ষাকেন্দ্র কর্তৃক ১০০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আইইডিসিআর পৃথকভাবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১০০টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। সর্ব মোট ৪৬৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি ২৪টি জেলার নমুনা সংগ্রহের তথ্য এখনো হাতে আসেনি। সংগৃহীত নমুনাগুলো সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা করা হবে এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
লক্ষ্মীপুরে বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বাড়ি লকডাউন : লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি ও ডায়রিয়া নিয়ে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যাওয়ার ঘটনায় একটি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সদর মডেল থানার ওসি এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বৃদ্ধ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে রাতে তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। আগে থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে জানা যায়। তার বাড়িতে ইতালিফেরত দুই প্রবাসী এখনো বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ দিকে খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে পুলিশ ওই বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। ওই বাড়িতে ১৫টি পরিবার থাকে।
গাবতলীতে শিশুর মৃত্যুর পর ৩ বাড়ি লকডাউন : বগুড়া অফিস ও গাবতলী সংবাদদাতা জানান, বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে বুধবার সন্ধ্যায় মারা যাওয়া ১৩ বছরের শিশুর দাফন ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের দড়ি সোনাকানিয়া গ্রামে পুলিশের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাগবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মুছা মিয়া, এসআই আরিফুল, ইউপি সদস্যসহ পরিবারের কিছু সদস্য। বুধবার সন্ধ্যার পরই শিশুটিরসহ আশপাশের তিনটি বাড়ি লকডাউন করে দেন গাবতলীর ইউএনও রওনক জাহান।
গাংনীতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বাড়ি লকডাউন : গাংনী (মেহেরপুর) সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্কে গাংনীর গাঁড়াডোব গ্রামের একটি বাড়ি লকডাউন এবং পাশের কয়েকটি বাড়ি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিভিল সার্জন নাসির উদ্দীন এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, শ্বাসকষ্ট ও সর্দিজ্বর নিয়ে ওই গ্রামের রুহুল আমিন (৫০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে তার রক্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
বিরামপুরে মৃত ব্যক্তি করোনাক্রান্ত নন : বিরামপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, বিরামপুরে জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে মারা যাওয়া ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। বুধবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মেহেদী হাসানকে এ তথ্য জানিয়েছে আইইডিসিআর। সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সোমবার জোতবানী ইউনিয়নের তপসি গ্রামে মারা যাওয়া ফরহাদ হোসেনের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব পরীক্ষায় মেলেনি।
সুনামগঞ্জে কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রবাসীর মৃত্যু : সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, দোয়ারা বাজার উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় জয়নাল আবেদীন (৪৯) নামে ওমান প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত ১৮ মার্চ বাড়িতে আসেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জয়নালের করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ ছিল না। বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ তার পেটব্যথা শুরু হয়। পরে হাসপাতালে নেয়ার সময় তিনি মারা যান। জয়নাল উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাড়িতে আসার পর থেকে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন।
রাজশাহীতে কোয়ারেন্টিনে আরো ১৯ বিদেশফেরত : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে বিদেশফেরত আরো ১৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: এনামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময়ে রাজশাহীতে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে নতুন ১৯ জনকে।
রামেকের ল্যাবে আরো তিন নমুনা : করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগে স্থাপিত ল্যাবে আরো তিনজনের নমুনা এসেছে। এর মধ্যে দু’টি রাজশাহীর ও একটি বগুড়ার। এগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রামেক অধ্যক্ষ ডা: নওশাদ আলী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিন গত বুধবার সন্দেহভাজন পাঁচজনের নমুনা নিয়ে এই ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হয়। সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবেদনটি আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। সম্মিলিতভাবে রাজশাহীসহ অন্য বিভাগের রিপোর্ট সেখান থেকেই প্রকাশ করা হবে।
মধুপুরে মৃত যুবক আক্রান্ত ছিলেন না : টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, জেলার মধুপুরে জ্বর-সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিয়ে মারা যাওয়া যুবক হবিবর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। তার শরীরের নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: রুবিনা ইয়াছমিন বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গত মঙ্গলবার করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান ওই যুবক। ডা: রুবিনা জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আমরা ওই যুবকের মারা যাওয়ার খবর পাই। বিকেল ৫টার দিকে তার বাড়িতে গিয়ে লাশের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে যুবকটির রক্তবমি হয়েছিল। এটি করোনাভাইরাসের লক্ষণ নয়। উল্লেখ্য, মহিষমারা ইউনিয়নের টিক্কার বাজার এলাকার হাসেন আলীর ছেলে হবিববের মৃত্যুর পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মহম্মদপুরে একজন হাসপাতালে : মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা সন্দেহে প্রথম এক রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকালে ভর্তির পর তাকে হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ওই ব্যক্তি বেশ কিছু দিন থেকে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, ওই রোগীর মধ্যে করোনার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন কৃষক।
সিলেটে নজরদারিতে আরো ১৯ : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট বিভাগে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন আরো ১৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৭৪৭ জন। এ ছাড়া ১৯০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা: আনিসুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সিলেট বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে রাখাদের মধ্যে সুনামগঞ্জে সাতজন ও মৌলভীবাজারে ১২ জন রয়েছেন। তবে হবিগঞ্জ ও সিলেটে নতুন করে কাউকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়নি। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৯০ জনকে কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে সিলেটে ৫৭ জন, সুনামগঞ্জে ৪২ জন, হবিগঞ্জে ৫১ জন ও মৌলভীবাজারের ৪০ জন রয়েছেন। সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে কোয়ারেন্টিন মুক্ত হলেন দুই হাজার ৩৬০ জন।
ময়মনসিংহে পরীক্ষায় ৪ জনেরই নেগেটিভ : ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহ বিভাগে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার চারজনের নমুনা সংগ্রহ করে মমেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করার পর চারজনেরই নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বুধবার ময়মনসিংহের তিনজন ও কিশোরগঞ্জের একজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা: চিত্তরঞ্জন দেবনাথ। এ দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্যাডেল রিকশা ও ভ্যান ছাড়া ব্যাটারি বা ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রংপুরে প্রথম দিনেই ১১ নমুনা জমা : রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে যাত্রা শুরু করল করোনা পরীক্ষার যন্ত্র রিয়েল টাইম পিসিআর। গতকাল সকাল ১০টায় এর উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিনেই সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১১টি নমুনা জমা পড়েছে। আজ শুক্রবার সকালেই শুরু হবে পরীক্ষা কার্যক্রম। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ও পিসিআর ল্যাবের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মুস্তাকিম উর রহমান জানান, একটি প্লেটে ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। একটি প্লেটে পরীক্ষা চালাতে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগবে। বিভাগের ৮ জেলার ৫৪ উপজেলার সন্দেহভাজনদের নমুনা এই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা যাবে। এখান থেকেই দেয়া হবে ফলাফল।
নড়াইলের নার্সকে ঢাকায় প্রেরণ : নড়াইল সংবাদদাতা জানান, সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মাধবী রানী দাসের করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ায় তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুস শাকুর বলেন, মাধবী রানী কয়েক দিন ধরে শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ও জ্বরে ভুগছেন।
শেরপুরে মা-ছেলের নমুনা সংগ্রহ, বাড়ি লকডাউন : ইউএনবি জানায়, করোনা পরীক্ষার জন্য শেরপুরের নকলা উপজেলার ধনাকুশা এলাকার এক বাড়ির মা-ছেলের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ওই বাড়ি লকডাউনের পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওই বাড়ির ছেলে মাসুদ মিয়া ঢাকায় রিকশা চালান। চার দিন আগে তিনি বাড়িতে আসেন এবং তিন দিন ধরে গলাব্যথার সাথে হাঁচি-কাশি, জ্বরে ভুগছেন। বুধবার থেকে তার মায়েরও জ্বর, হাঁচি-কাশি দেখা দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌর ভবনের কোয়ারেন্টিন থেকে আরো তিন প্রবাসীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ৩৫ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে চারজন রয়েছে। গতকাল পৌরসভার কোয়ারেন্টিন কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
বাগেরহাটে পুলিশ সদস্য আইসোলেশনে
বাগেরহাট সংবাদদাতা জানান, এক তরুণ পুলিশ সদস্যকে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরের পর জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে ওই পুলিশ সদস্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে এলে কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আইসোলেশনে ভর্তি করে।
সাভারে ৬ কবরস্থান প্রস্তুত
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি হলেও তাকে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বহন করছে না, হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসা। এমনকি মৃত্যু হলে গোসল, নামাজে জানাজা ও দাফন নিয়ে হচ্ছে জটিলতা। এ অবস্থায় সাভারে প্রস্তুত করা হয়েছে ছয়টি কবরস্থান, দু’টি অ্যাম্বুলেন্স। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ম্যান ফর ম্যান’ দায়িত্ব নিয়েছে মৃতের গোসল, নামাজে জানাজা ও দাফনের। আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শাহাব উদ্দিন ও ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন। ওই সব অ্যাম্বুলেন্স সন্দেহজনক রোগীদের বহন করবে। এ ছাড়া করোনায় কারো মৃত্যু হলে দাফনের জন্য সাভার পৌর এলাকার তালবাগ কবরস্থান, পাথালিয়ার দু’টি, আশুলিয়ার একটি, তেঁতুলঝোড়ার একটি ও সাভার সদর ইউনিয়নের একটি কবরস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement