২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জ্বর-কাশির রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না

-

দেশে জ্বর অথবা সর্দি-কাশির রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসের ভয়ে এ ধরনের উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না। হাসপাতালে প্রবেশের আগেই রোগীর উপসর্গ জ্বর ও সর্দি-কাশি থাকলেই অন্য কোথাও যেতে বলে দেয়া হচ্ছে। এভাবে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের সুরক্ষাসামগ্রী নেই সে কারণে তারা চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অথবা বাংলাদেশের বিরাজমান চিকিৎসা নির্দেশনায় চিকিৎসকদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। চিকিৎসকরা সুরক্ষিত না হলে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, কোন রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইনে উল্লেখ আছে। ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত রোগীকে অবশ্যই ভর্তি করতে হবে। মুশকিল হলো এখন রোগীরা শ্বাসকষ্ট অথবা নিউমোনিয়ার পূর্ব-ইতিহাস গোপন করে ভর্তি হতে চান অথবা চিকিৎসকের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে চাচ্ছেন, এটা উচিত নয়। করোনার রোগী হলে অবশ্যই করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। রোগীদের উচিত আগে আইইডিসিআরের হটলাইনে কল করে জেনে নেয়া এবং পরীক্ষা করানো যে, তিনি করোনার রোগী কি না। তিনি জানান, আগে একটি জায়গায় করোনার পরীক্ষা করা হতো; এখন ১৭-১৮ স্থানে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। যেহেতু রোগীরা শ্বাসকষ্ট অথবা যেসব দেশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে সেসব দেশ থেকে এসে সত্যটা না বলে তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে আসেন সে কারণে চিকিৎসকরা ভয় পাচ্ছেন।
তাহলে এখন চিকিৎসকরা কি সবাই পিপিই পরে চিকিৎসা দেবেন? এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, পিপিই সবার জন্য নয়। কেবল যারা করোনা রোগীর চিকিৎসা করবেন অথবা রোগীদের সেবা দেবেন তারাই পরবেন। সবচেয়ে বড় কথা সবার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে আবার চিকিৎসকের নিরাপত্তারও প্রয়োজন আছে। রোগীদের উচিত তথ্য গোপন না করে চিকিৎসককে সব কিছু বলা এবং করোনার কী লক্ষণ ও উপসর্গ তা আইইডিসিআর থেকে জেনে উপযুক্ত হাসপাতাল অথবা ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসের পরিচালক ডা: মো: হাবিবুর রহমান জানান, আমরা জানতে পেরেছি বিভিন্ন জায়গায় সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগীরা এলে তাদের সেবা দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সবার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সব রোগীকেই চিকিৎসা দিতে হবে। প্রয়োজনে পিপিই পরেই চিকিৎসা দিতে হবে। সরকারি হাসপাতালে পিপিই দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে তিন লাখ ৩৪ হাজার ২৭০টি পিপিই পাঠানো হয়েছে। আরো পিপিই আমাদের কাছে মজুদ আছে।
মেডিসিনের একজন অধ্যাপক জানান, এ সমস্যাটা আগে ছিল না। হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের কারণেই এমন হয়েছে। সবাই এখন আতঙ্কগ্রস্ত। একজন চিকিৎসক জানেন কিভাবে বিপজ্জনক এ ভাইরাসের মধ্যে মানুষকে চিকিৎসা দেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সুরক্ষা পোশাক পরে তারা চিকিৎসা দেবেন; কিন্তু সেই সুরক্ষা পোশাক তো সরকারিভাবেই সহজলভ্য নয়। সরকার অবশ্য এখন পিপিই পাঠাচ্ছে; কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও এমন অবস্থা এখনো হয়নি যে, চিকিৎসকরা ব্যক্তিগতভাবে তা কিনে নেবেন। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, এ অবস্থায় চিকিৎসকরা ভয় পাচ্ছে। এ ভয় কাটানোর ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। খুব দ্রুত পিপিই সহজলভ্য করে দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ‘মানুষের যেমন চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে তেমনি চিকিৎসকদের সুরক্ষিত থাকারও অধিকার রয়েছে। একজন চিকিৎসক হাজার হাজার মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন। চিকিৎসকরা বিপন্ন হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসারে সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পরিহিত হয়ে করোনার মতো ছোঁয়াচে রোগের চিকিৎসা দেবেন; কিন্তু সুরক্ষাসামগ্রী না পাওয়ায় তারা চিকিৎসা দিতে পারছেন না। সরকারকেই সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানি অথবা দেশে উৎপাদন যে করেই হোক পিপিই’র ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে চিকিৎসা না দেয়ার এ প্রবণতা থাকবে না।’
সম্প্রতি চাটখিল কলেজের সাবেক জিএস জাহাঙ্গীর আলমের শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর করুণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন তারই এক আত্মীয়। চাটখিলে তিনি অসুস্থ হলে তাকে ঢাকায় আনা হয়। প্রথমেই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাকে রাখা হয়নি। সেখান থেকে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলেও ভর্তি করেনি। পরে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে ভর্তি করা হয়; কিন্তু দু’দিনের মাথায় তাকে টেস্ট করে জানানো হয় যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হননি। অন্য কোথায় নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে মিরপুরের হার্ট ফাউন্ডেশনে করোনা নেইÑ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভর্তি হলেও সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়েই ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে বাসায় নিয়ে আসা হলে আবার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তখন আবারো হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এভাবেই জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয় বিনা চিকিৎসায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের

সকল