২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুজবে কঠোর নজরদারি

প্রায় অর্ধশত আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত
-

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। করোনা নিয়ে পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে গুজবও। প্রচার করা হচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য। করোনা হলে কী করবেন আর কী করবেন না, তা নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নয়, ‘মুসলমানদের জন্য করোনাভাইরাস কোনো আতঙ্কের কারণ নয় বরং কাফিরদের প্রতি চরম আজাব-গজব’ এই শিরোনামে রাজধানীতে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। এসব গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য যেন না ছড়ায় এ জন্য দেশব্যাপী কঠোরভাবে মনিটরিং করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, র্যাব, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থা গুজব বন্ধে কাজ করছে। সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুজব বন্ধে বিভাগটি সাইবার পেট্রোলিং করছে। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এ পর্যন্ত ২০টি ফেসবুক আইডি ও পেজ বন্ধসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে এ বিভাগ। এ ছাড়াও প্রায় অর্ধশত ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্রের মুসলিমবিরোধী কার্যক্রমসহ বাংলাদেশের সরকার ও সরকারের নানা কাজের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এসব কাজের জন্য সারা দেশ থেকে মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি একটি চক্র বিভ্রান্তিকর তথ্য লিফলেট আকারে প্রকাশ করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ‘রাজারবাগী হুজুর’ নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় চক্রটি এমন প্রচারণায় শামিল হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চক্রটি ৩২টি পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা শহরে এই লিফলেট বিতরণ করছে। গত শনিবার রাতে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল ও মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে এ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সিনিয়র এসি এসএম শামীম সাংবাদিকদের বলেন, জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন বিদ্বেষমূলক কাজের জন্য এবং জন উপদ্রব সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও রমনা থানায় দুটো মামলা করা হয়েছে।
লিফলেট বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জব্দ লিফলেটে করোনাভাইরাস নিয়ে যেসব বাণী লিপিবদ্ধ আছে যা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তা ছোঁয়াচে রোগ বিস্তারের পক্ষে সহায়ক। লিফলেটের এক স্থানে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস হলো দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষীদের জন্য এক কঠিন গজব।’ তিনি যোগ করেন।
তিনি আরো জানান, এক পাতার লিফলেটে আরো বলা হয়েছে, ‘ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা হারাম, কাট্টা কুফরি ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।’
কাদের ইন্ধনে এই প্রচারণা এমন প্রশ্নের উত্তরে এস এম শামীম জানান, গ্রেফতারকৃতরা ‘রাজারবাগী হুজুর’ নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় এমন প্রচারণায় শামিল হয়েছেন বলে জানান তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা মোট ৩২টি পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা শহরে এই লিফলেট বিতরণ করছেন।
সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত এডিসি মো: নাজমুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনাভাইরাসকে (কোভিড-১৯) কেন্দ্র করে অনেকে নানাভাবে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের শনাক্তে আমরা প্রথম থেকেই কাজ করছিলাম। এরই অংশ হিসেবে অভিযুক্ত আইডিগুলো বন্ধ করা হয়েছে। গুজব বন্ধে সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, অনেকেই না বুঝে এগুলো শেয়ার করে গুজবটাকে বিস্তৃত করছেন। আমরা সবাইকে কোনো পোস্ট নিশ্চিত না হয়ে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস নিয়ে চারটি ইস্যুতে গুজব সৃষ্টি করা আরও ৫০টি ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্রের মুসলিমবিরোধী কার্যক্রমসহ বাংলাদেশের সরকার ও সরকারের নানা কাজের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য গুজবগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া গুজবের পোস্ট শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য সাতজনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যায়, তারা না বুঝে এগুলো শেয়ার করেন। তাই এই সাতজনকে পরবর্তীতে এসব না করার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব রটালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, করোনাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীব্যাপী ফেক নিউজ ও গুজব ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। নিয়মিত ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটর করছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার টিম। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়ানোকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং গুজব ছড়ানো আইডি বন্ধ করা হয়েছে।
গুজব ও মিথ্যা না ছড়িয়ে সহযোগিতা : করোনার বিস্তার রোধে এবং সরকারের নির্দেশনা অনুযায় দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য বিভিন্ন প্লাটফর্মে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনার বিস্তাররোধে সারা দেশে কোটি মানুষের সাথে পুলিশের ইন্টারঅ্যাকশন বা সাক্ষাৎ হচ্ছে প্রতিদিন। এর মধ্যে গুটিকয়েক ঘটনা বা ইন্টারঅ্যাকশনের সময় পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়গুলো নিউজ মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য যেকোনো উপায়ে পুলিশ সদর দফতরের দৃষ্টিতে আসা মাত্রই মাঠ পর্যায়ে ইউনিট কমান্ডারদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আইজিপি ব্যক্তিগতভাবে ভিডিও বার্তায় এবং মোবাইল ফোনে অপারেশনাল সব কমান্ডারের সাথে কথা বলেছেন। এর ফলে, একই ধরনের ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে পুলিশ সদর দফতরের দৃষ্টিতে পড়েনি।
কিন্তু তার পরও কিছু নিউজ মিডিয়ায় নতুন করে পুরাতন অভিযোগগুলো নিয়ে এমনভাবে নিউজ ছাপা হচ্ছে যাতে মনে হচ্ছে এখনো বলপ্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া, একটি দুষ্টচক্র অতীতের বিভিন্ন সময়ের পুরাতন ছবি ও ভিডিও যে গুলোর বিষয়ে তদন্ত করে সেই সময়েই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা এডিট করে বা কৌশলে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন করে পোস্ট দিচ্ছে। এমনকি ২০১১ সালে পুলিশ কর্তৃক বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস দমনের ছবিও ফটোশপ করে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেগুলো সহজেই বিশ্বাস করে তার বিপরীতে তাদের উষ্মা প্রকাশ করছেন এবং তা শেয়ার করছেন।
এ ধরনের মিথ্যাচারের ফলে পুলিশের প্রায় শতভাগ সদস্য যারা দেশ ও জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও করোনা আক্রান্ত লাশ সৎকারসহ নানা উপায়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন, তারা মানসিকভাবে ডিমোটিভেটেড হচ্ছেন। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গুজব ছড়ানো ও মিথ্যাচার বন্ধ করে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায়, গুজব ছড়িয়ে ও মিথ্যাচার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়ালে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান : করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে গুজব, বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য ছড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছে তথ্য অধিদফতর। এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর তথ্য শেয়ার বা প্রচার করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মিথ্যা তথ্য বা গুজব মোকাবেলায় ৯৯৯ অথবা তথ্য অধিদপ্তরের ৯৫১২২৬৪, ৯৫১৪৯৮৮ নম্বরে অথবা ই-মেইল- piddhaka@gmail.com জানাতে বলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে? গাজায় রিজার্ভ ব্রিগেড মোতায়েন ইসরাইলের

সকল