২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা উপসর্গ নিয়ে ৫ মৃত্যু

টানা দুই দিনে নতুন আক্রান্ত নেই; পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে পরে মৃত্যু
-

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে একজন নারীসহ মারা গেছেন দুইজন। ঠাকুরগাঁওয়ের এক অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পাঁচ হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পাননি অসহায় পিতা। অবশেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই সন্তানের। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যু হয় একজনের। করোনা উপসর্গ নিয়ে মানিকগঞ্জেও মারা গেছেন এক নারী। বগুড়ার শিবগঞ্জে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের জন্য পুলিশ পাঠাতে হয়েছে। কবর খোঁড়ার লোকও সেখানে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নাটোরের বাগাতিপাড়ায় সাতটি বাড়ি, পটুয়াখালীর গলাচিপায় দু’টি বাড়ি ও চৌগাছায় ছয়টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গাজীপুরে হাসপাতালে ভর্তি এক যুবকের স্যাম্পল তিন দিনেও সংগ্রহ করেনি আইইডিসিআর।
এ দিকে গতকাল রোববারও করোনাভাইরাসে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি। এক অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। করোনায় দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জন বলে জানান তিনি।
টানা দ্বিতীয় দিনে নতুন রোগী পায়নি আইইডিসিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল রোববারও করোনাভাইরাসে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে পরপর দুই দিন করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশের সাতটি সেন্টারে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও টেস্ট করতে কেউ আসেননি বলে বলে এক অনলাইন প্রেসব্রিফিংয়ে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। প্রেসব্রিফিংয়ে বরাবরের মতো আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা করোনা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করেন। নতুন কেউ আক্রান্ত না হওয়ায় বাংলাদেশে মোট কনোনা আক্রান্ত ৪৮ জনই। এর মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, ১৫ জন সুস্থ হয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তারা এখন ফোন কল পেয়ে করোনায় সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বাড়িতে যাবেন নমুনা সংগ্রহ করার জন্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএসের পরিচালক ডা: হাবিবুর রহমান বার উদ্দেশে বলেন, যাদের মধ্যে করোনার লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে তারা দয়া করে হাসপাতালে আসবেন না। তারা জেলা অথবা উপজেলা পর্যায়ের হটলাইনে কল করুন। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের পাঠানো হবে নমুনা সংগ্রহের জন্য। তিনি জানান, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে হটলাইনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আবার হটলাইনে সেবাদানকারী চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এখন এক হাজার ১০০ ডাক্তার সেবা দেবেন। এই সেবা দানের জন্য সাত হাজার চিকিৎসক নিবন্ধিত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানান, আমাদের কাছে ইতোমধ্যে ২৫০টি ভেন্টিলেটর চলে এসেছে। আরো সাড়ে তিন শ’ ভেন্টিলেটর আসবে। অনেক বড় বড় দেশে এসব সুবিধা নেই। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করেছি। আমাদের করোনা টেস্ট করার অনেকগুলো পিসিআর মেশিন রয়েছে। করোনার আগেই এগুলো এনেছিলাম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। চীনে করোনা শুরু হওয়ার পর গত জানুয়ারি থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমাদের পরিস্থিতি যেকোনো উন্নত দেশের চেয়ে ভালো। এখানে করোনার রোগী পাওয়া যায়নি, এটা খুশির সংবাদ। বিভিন্নজন প্রশ্ন করেন দেশে করোনা রোগী এতো কম কেন। আমি বলতে চাই, করোনা রোগী বেশি হলে কি আপনারা খুশি হবেন। আমরা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তিন লাখ পিপিই বিতরণ করেছি। আরো পাঁচ লাখ পিপিই আসবে। প্রতিদিন দেশে ৩০ হাজার পিপিই তৈরি হচ্ছে।
মন্ত্রী নিজে কোয়ারেন্টিনে আছেন কি না এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি আক্রান্ত নই, আমি নিজে কাজ করছি। যেভাবে অন্যরা আছে, আমি নিজে সেভাবেই আছি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি বড় মন্ত্রণালয়। এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন। ফলে কোনো কোনো কর্মকর্তা আক্রান্ত হতেই পারেন।
ঢাকার বাইরে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর মেশিন পর্যাপ্ত নেই কেন এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে প্রতিটিতে ১০টির মতো আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দিয়েছি কমপক্ষে তিনটি আইসিইউ পৃথক করে রাখার জন্য যেন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া যায়।
করোনা চিকিৎসার জন্য ঢাকাতেই ১০-১৫টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তেজগাঁওয়ে আকিজ গ্রুপের একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থানীয়রা ভেঙে দিয়েছে এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসায় সহায়তা করতে বেসরকারিভাবে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। আকিজ গ্রুপ যদি ভবন তৈরি করে দিতে চায় এবং কারো আপত্তি না থাকলে সেখানে করোনা চিকিৎসা হলেতো কোনো সমস্যা নেই। বেসরকারি হাসপাতালে পিপিই দেয়া হচ্ছে না মর্মে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, বেসরকারি হাসপাতালে পিপিই দেয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিপিই নিজেরাই কিনে নিতে পারে।
খিলগাঁও কবরস্থানে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের মৃত্যু হয়েছে এমন একটি লাশ দাফন করতে দেয়া হয়নি। লাশবাহী বাড়ির সাথে একজন ড্রাইভার ও একজন ওয়ার্ডবয় ছাড়া কেউ আসেননি। আইইডিসিআর বলেছে, তাদের তত্ত্বাবধানে করোনা আক্রান্তদের লাশ দাফন করার ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু এখানে এর কিছুই দেখা যায়নি। এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, লাশ দাফনের একটি প্রটোকল আছে। সে অনুযায়ী লাশ দাফন করা হয়। মন্ত্রী বলেন, শনি ও রোববার কোনো নতুন করোনার রোগী শনাক্ত হয়নি। যখন যেখান থেকে টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে আমরা টেস্ট করছি। কক্সবাজারে টেস্ট করার ব্যবস্থা করা হলেও সেখানে এখন পর্যন্ত টেস্ট করার জন্য কেউ আসেননি।
মানিকগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে নারীর মৃত্যু : মানিকগঞ্জ ও ঘিওর সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সুচিত্রা সরকার (২৬) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় তাকে মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুচিত্রা সরকার হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের বড়ইছড়া গ্রামের মুদি দোকানদার নিতাই সরকারেরর স্ত্রী।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। সুচিত্রা সরকার সাত দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট এবং দুই দিন ধরে পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত ছিলেন। সাত দিন আগে ওই নারীর শ্বশুর মারা যান। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক লোকসমাগম হয়েছিল। সেখানে আসা কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য এই নমুনা ঢাকায় পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিকটতম প্রতিবেশীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে হাসপাতালকে বিশেষ নজরদারিতে এবং রোগীর সংস্পর্শে আশা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে, মৃত ওই ব্যক্তির পুরো গ্রামকেই লকডাউন করা হবে বলে জানান তিনি।
কুর্মিটোলায় করোনা ইউনিটে একজনের মৃত্যু : সময় টেলিভিশন জানিয়েছে, রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনা ইউনিটে এক রোগী মারা গেছেন। গত শনিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, তার করোনার মারাত্মক লক্ষণ ছিল। তবে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি; ওই লোক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, শনিবার মারা গেলেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে রোববার সকালে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মারা যাওয়া ওই রোগীর স্ত্রী ও সন্তানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে অসুস্থ অবস্থায় রোগীকে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত শুক্রবার প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হতে আসেন এক রোগী। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় জরুরি বিভাগ থেকে ওই রোগীকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তির সুপারিশ করা হয়। পরে আইসিইউ চিকিৎসক গেল ১০ দিন জ্বর, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের লক্ষণ দেখে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বগুড়ায় দুই রোগী আইসোলেশন কেন্দ্রে
বগুড়া অফিস জানায়, করোনা রোগী সন্দেহে বগুড়ায় দুই রোগীকে গতকাল সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছেন। তবে পরীক্ষা না করে এখনি কিছু বলতে চাইছেন না তারা। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুই রোগীর মধ্যে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলায়। অপরজন ২৬ বছরের এক যুবক কুমিল্লা থেকে তার বাবার কর্মস্থল বগুড়ার কাহালুতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শ^াসকষ্ট রয়েছে।
নাটোরে ২২৬ জন কোয়ারেন্টিন মুক্ত : নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মোট ৪৫৫ ব্যক্তির মধ্যে ২২৬ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বাকি ২২৯ জন এখনো কোয়ারেন্টিনে আছেন। নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: আনছারুল হক জানান, করোনা আক্রান্ত শঙ্কায় বড়াইগ্রাম উপজেলার গুনাইহাটি গ্রামের এক ব্যক্তি এবং নাটোর জেলা কারাগারের এক হাজতিকে ইতঃপূর্বে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। তাদের নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত আরো ২৩২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে মোট দুই হাজার ৩৮৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে আরো ১০৯ জনকে। এ দিকে গত শনিবারও ভারতে আটকে থাকা ১০৪ জন বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী দেশে ফিরেছেন। তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হলো এক হাজার ৬০৭ জন প্রবাসীকে। তাদের মধ্যে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬৫৬ জন প্রবাসী। ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৯৫১ জনকে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে এখন ৫০৯ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়। গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৮৮৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
এ দিকে রাজশাহী সংক্রমণ ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাটোর থেকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ওই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে রাজশাহী সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন বিদেশফেরত আরো ৫০ জন। এ নিয়ে এই বিভাগে মোট হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন এক হাজার ৩৮৫ জন।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকায় পাঠানো তিনজনের কেউই করোনা আক্রান্ত নন বলে জানা গেছে। তাদের বাইরে গতকাল পর্যন্ত তিনজন রোগী ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনকে নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে ফরিদপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন এক হাজার ৬১৭ জন। এ দিকে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা পার করেছেন ৭১৯ জন।
শিবগঞ্জে পুলিশি ব্যবস্থাপনায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন : বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার শিবগঞ্জে করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন পুলিশের ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার রাত ৮টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া মাজারের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার খুদরত ই খুদা শুভ, শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু, শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দাফনে মৃতের স্বজনসহ এলাকাবাসীকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
দাফন শেষে বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (শিবগঞ্জ-সোনাতলা সার্কেল) খুদরত ই খুদা শুভ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘একটি লাশ দাফন করে এভাবে স্ট্যাটাস দিয়ে জানাতে হবে, তা কখনো ভাবিনি। মানুষের মাঝে মানবিকতা জাগাতে এতটা গলদঘর্ম হতে হবে, তা কখনো জানা ছিল না।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘সকাল থেকেই নানা বাধা-বিপত্তি আর নানা নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে রাত পৌনে ৮টায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণসাপেক্ষে পুলিশের উদ্যোগে লাশের দাফন সম্পন্ন করা হলো। দাফনকাজে বাধা দেয়ার খবর শোনামাত্রই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অতিরিক্ত দুই প্লাটুন স্পেশাল আর্মড ফোর্স পাঠানো হয়। কয়েকজন দুষ্ট লোক এলাকায় ভুল বুঝিয়ে কয়েক হাজার লোক জড়ো করেন। শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরান। কিন্তু কবর খোঁড়ার লোক কোথায়। শিবগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাফিজ আর এসআই আহসান আরো দু’জনকে সাথে নিয়ে কবর তৈরি করেন। অবশেষে লাশ দাফন হলো। একজন ব্যক্তি পেল তার লাশের সঠিক মর্যাদা। আমরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়লাম।’
মৃতের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, দাফন-কাফনের সময় তাদের কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয়নি। একই কথা বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক আত্মীয়। উল্লেখ্য, গত শনিবার মাসুদ রানা নামের ওই পরিবহন শ্রমিক শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ গ্রামের তার স্ত্রীর বাড়িতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে প্রশাসন ১০টি বাড়ি লকডাউন করে। এরপর সেখানে দাফনে স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরপর সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বড়পুকুরিয়া মাজারের পাশের সরকারি খাস জমিতে তাকে দাফন করে পুলিশ।
অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে ৫ হাসপাতাল ঘুরলেন বাবা, অবশেষে মৃত্যু : ইউএনবি জানায়, করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকায় নিজ বাড়িতে রাখতে পারেনি গ্রামবাসীদের বাধায়। হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসা করালেন না চিকিৎসকরা। এক এক করে চারটি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পেলেন না। শেষ পর্যন্ত এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলেও ছেলেকে বাঁচাতে পারেনি এক বাবা। শনিবার রাতে আল আমিন (২২) নামের ওই যুবক রামেক হাসপাতালে মারা যান।
মৃত আল আমিন নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার অলংকার দিঘি গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে। মোখলেসুর রহমান জানান, আল আমিন নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করতেন। শনিবার সকালে প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাড়িতে ফিরলে গ্রামের লোকেরা তাকে গ্রামে রাখতে বাধা দেন। পরে তাকে দ্রুত নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা আল আমিনকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেন ও ফেরত পাঠান। পরে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করা হয়। পরে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুনকে জানালে তার হস্তক্ষেপে আল আমিনকে প্রথমে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে আবার নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বিকেলে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা আল আমিনকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, আল আমিনের লাশ রাতেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে আল আমিন করোনায় নয়, মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ভর্তির সময় তার শরীরে জ্বরের মাত্রা তীব্র ছিল। মাথা ব্যথা ও গলা ব্যথা ছিল।’
বরিশালে করোনা ইউনিটে নারীসহ ২ জনের মৃত্যু
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে এক নারীসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দু’জনের মধ্যে একজনের শনিবার মধ্যরাতে এবং অপরজনের রোববার সকালে মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি পটুয়াখালীন সদর উপজেলার গোহানগাছিয়া গ্রামে।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার করার পর শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে প্রথমে মেডিসিন ইউনিটে নেয়া হলেও পরে রাতেই করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় এবং রোববার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। রোগীর এক স্বজন মোবাইলে জানান, মৃত রোগীর দীর্ঘ দিন ধরে অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শেবাচিমের পরিচালক জানান, এই রোগীর মৃত্যুর পর বিষয়টি আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে, তাদের নির্দেশনা অনুসারে লাশ দাফন করার ব্যবস্থা করা হবে।
এ দিকে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শনিবার দিবাগত রাতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নিরু বেগম (৪৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি বরিশাল নগরীর কাউনিয়া পুড়ানপাড়া এলাকার মোহাম্মদ দুলালের স্ত্রী।
হাসপাতালের এক মুখপাত্র জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটের দিকে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এর মাত্র ১৫ মিনিট আগে ওই রোগীকে শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বলেন, রোগীর স্বজনদের কাছে উপসর্গগুলো শুনে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনা ইউনিটে পাঠিয়েছিলেন। করোনা ইউনিটে নেয়ার সাথে সাথে ওই নারীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা যাওয়ার পরপরই স্বজনরা তার লাশ বাসায় নিয়ে যান। মৃত ব্যক্তির স্বজনদের বরাতে তিনি আরো বলেন, এই রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিন দিন আগে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরে বাড়িতে গিয়ে জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে শনিবার রাতে শেবাচিমে নেয়া হয়। তার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ছিল বলেও জানিয়েছেন স্বজনরা।
বাগাতিপাড়ায় ৭ বাড়ি লকডাউন
বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বাগাতিপাড়ায় শরীরে করোনা উপসর্গ থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দল এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে পাঠায়। এ ঘটনায় উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের ওই ছাত্রের বাড়িসহ আশপাশের সাতটি বাড়িকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে ওই ছাত্রের বাড়িতে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুরে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ফরিদুজ্জামান জানান, ওই ছাত্র ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। ছাত্রটি বিদেশফেরতের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং গত ১৯ মার্চ সর্দি কাশি ও জ্বর নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাগাতিপাড়ায় আসেন। পরে তার শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। অসুস্থ ওই ছাত্র জানান, শনিবার রাতে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা রোববার সকালে তাকে করোনা নয়, বরং অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত জানিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
পটুয়াখালীতে দু’টি বাড়ি লকডাউন : পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালী শহর ও শহরতলির দু’টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে বাড়ি দু’টি লকডাউন করা হয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শনিবার বিকেলে শহরের মাদবর বাড়ি এলাকায় আবদুর রশিদ নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ জন্ডিসসহ নানা সমস্যায় ভুগে নিজ গৃহে মারা যান। কিন্তু স্থানীয়দের করোনা সন্দেহের কারণে মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বাড়িটি লকডাউন করা হয়। অন্য দিকে সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সদর উপজেলার টাউন বহালগাছিয়া এলাকায় থাকত জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে শনিবার বিকেলে পটুয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে বরিশাল শেবাচিমের আইসোলেশনে ভর্তির পর রাতে তিনি মারা যান। তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি গলাচিপার লামনা গ্রামে।
সোনারগাঁওয়ে পুলিশ চলে গেলেই বাইরে আসছেন কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা : সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রশাসনের তৎপরতার পরও হোম কোয়ারেন্টিন থেকে বেরিয়ে আসছে মানুষ। সরকারের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রথম দিকে রাস্তায় তেমন মানুষ দেখা না গেলেও আস্তে আস্তে মানুষ তাদের নিজস্ব কাজকর্ম ছাড়াও আড্ডা দিতে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হচ্ছেন। আর চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়ে চলেছে।
উদ্ভবগঞ্জ এলাকার মিশুক চালক আল আমিন বলেন, আমরা খেটেখাওয়া মানুষ। একদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটবে না। গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। দিনমজুর আলাউদ্দিন জানান, উপজেলার আশপাশে খাবার দেয়া হয়েছে। আমাদের ভাটিবন্দর গ্রামে কেউ খাবার দিতে আসেনি। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের দিনমজুর শফিউল্লাহ জানান, আমাদের এলাকায় কোনো চাল ডাল, তেল, লবণ আসেনি। শুধু মুখের একটি মাস্ক দিয়ে কি পেট ভরবে। আমাদের বের না হলে খাবার জুটবে না।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, মানুষকে কোনোভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করছি।
নোয়াখালীতে চার বাড়ি লকডাউন
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার দক্ষিণ চর মজিদ গ্রামে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাড়িসহ চারটি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। গতকাল রোববার ওই চারটি বাড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়। এ সময় হ্যান্ডমাইকে আশপাশের লোকজনকে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়। সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম ইবনুল হাসান ইভেন জানান, ৩৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি পেশায় অটোরিকশা চালক। তিনি গত ছয় দিন থেকে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। করোনা পরীক্ষার জন্য তার শরীরের নমুনা ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।
কালকিনিতে কলেজছাত্র হাসপাতালে ভর্তি
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় এক কলেজছাত্রকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে ওই ছাত্রকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিশ্চিত করা হয়। সে ঢাকা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের কানুরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আল-বিধান মোহাম্মদ সানাউলাহ বলেন, ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থী গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা দেখা দেয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে ভোরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কি না।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা সাত মাসের শিশুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাসের নমুনা না থাকায় গতকাল সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জ্বর, ঠাণ্ডা ও কাশিতে আক্রান্ত হলে শিশুটিকে গত ২৩ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বাবা সিঙ্গাপুরফেরত তহিদুল ইসলাম হোম কোয়ারেন্টিনে থাকায় শিশুটিকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করা হয়। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত করোনা সন্দেহে বা করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন কোনো রোগী জেলার কোনো হাসপাতালে আসেনি। জেলায় বর্তমানে বিদেশফেরত ২৮০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের জাজিরায় ২১ বছরের এক গৃহকর্মীকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, গতকাল সকাল ১০টায় ওই গৃহকর্মী আউটডোরে ঠাণ্ডা, জ্বর ও কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে এলে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার রাতেই আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে করোনায় আক্রান্ত কি না নিশ্চিত হতে পারব। এ দিকে রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলায় ২৭৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে পাঁচজন হোম কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৪০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে পঞ্চম দিনেও মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রোববার সকালে পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান পাটগোদাম বিজের মোড়ে অবস্থান নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহে গত ২৪ ঘণ্টায় বিদেশফেরত ১৮২ জনসহ এক হাজার ৭২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গতকাল আরো ৪৬ জনসহ ৬৪১ জনকে কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে ১ মার্চ থেকে বিদেশফেরত দুই হাজার ৯৬৭ জন ময়মনসিংহে এলেও প্রশাসন এক হাজার ৪৮৬ জনকে শনাক্ত করে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে। ঠিকানায় গরমিল থাকায় এখনো এক হাজার ৪৮১ জন প্রবাসীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন তাদের খুঁজছে।
গাজীপুরে হাসপাতালে ভর্তি যুবকের স্যাম্পল তিন দিনেও সংগ্রহ করা হয়নি : গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি এক যুবকের স্যাম্পল তিন দিনেও সংগ্রহ না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কোভিক-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন হতদরিদ্র মেহেদী হাসান নামে ওই যুবক।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, সর্দি-ঠাণ্ডা, হাঁচি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথ্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ হাসপাতালে ভর্তি হন মেহেদী। ভর্তি হওয়ার পর তার স্যাম্পল নেয়ার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে দুই দফা চিঠি লেখা হয়েছে কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলেও তার স্যাম্পল নেয়নি। এ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি এ হাসপাতালে ১০ বেডের একটি আইসোলেশন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। এ ইউনিটে একমাত্র রোগী হলেন মেহেদী হাসান। তার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও ওষুধ সরবরাহ করা হলেও স্যাম্পল সংগ্রহের এখতিয়ার এ হাসপাতালের কারো নেই। একমাত্র আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ এ স্যাম্পল সংগ্রহ করবে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান জানান, গাজীপুরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৭ জন। আইসোলেশনে আছেন একজন। আর হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক হাজার ৪৯৬ জনের মধ্য থেকে ৫৫৮ জনকে দেয়া হয়েছে ছাড়পত্র। এ দিকে করোনাভাইরাস দেহে না থাকায় ইতালিফেরত ৩৬ জনকে আজ সোমবার গাজীপুরের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। গাজীপুরের পূবাইল এলাকার ‘মেঘডুবি ২০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ থেকে সুস্থ হয়ে ১৬ দিন পর তারা বাড়ি ফিরছেন। এই কেন্দ্রে ৪৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় বলে জানান গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আটজনের দেহে অস্বাভাবিক তাপ থাকায় তাদের ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে একজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। সাতজনকে আবার এ কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হয়।
চৌগাছায় ৬ বাড়ি লকডাউন : চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের চৌগাছায় রেনুকা ওরফে রিয়া (২৮) নামে এক মহিলার করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে যশোর সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তিনি চৌগাছা পৌর শহরের ছারাপাইলট বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় রবিউল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় রবিউল ইসলামের বাড়িসহ আশপাশের চারটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ওই নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন বিদেশফেরত ব্যক্তি রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলার ছয় উপজেলায় ৯৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ৪০২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪০ জন। এ দিকে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা ৩০টি নিরাপত্তা সরঞ্জাম (পিপিই) সুন্দরবন কুরিয়ারে আটকে গেছে। গেল কয়েক দিন আগে এগুলো ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: সেলিনা বেগম।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় দুইজনসহ ৮৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩৭ জনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার নয় উপজেলায় মোট ৫৪০ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৩২০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা সম্ভব হয়েছে। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ৬৫০ পিপিই পেয়েছি। যা জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement