২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভয়াবহ সংক্রমণ ঝুঁকিতে ভারত, লাখ লাখ লোক অনাহারে

আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ছুঁই ছুঁই; ইতালিতে জরুরি অবস্থা বাড়ল; মদিনার কয়েকটি শহর লকডাউন; ‘শাটডাউনে’ রাশিয়ায়; ব্র্রিটেনের আরেক মন্ত্রীর করোনা!
-

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ১৬৯ জন। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। গতকাল রোববার জন্স হফকিন্সের পরিসংখ্যানে, বিশ্বের ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৩ জন; লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৭ জন। পাঁচ লাখ ৪৬ জন চিকিৎসাধীন এবং ২৫ হাজার ৩৭৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, রয়টার্স, এনডিটিভি, সিএনএন ও ওয়ার্ল্ডোমিটারসের।
শনিবার ৬৬ হাজার ৫০৪ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ও তিন হাজার ৪৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন কাতার, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মালিতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের মোট আক্রান্তের ৮৮ শতাংশ চীনের মূলভূখণ্ডের বাইরে অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্ত হয়েছেন। গেল সপ্তাহে নতুন যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই চীনের মূলভূখণ্ডের বাইরের লোক।
ভারতে লাখ লাখ লোক অনাহারে : মাত্র চার ঘণ্টারও কম সময়ের নোটিশে ভারতের ১৩০ কোটি লোককে তিন সপ্তাহের লকডাউনে থাকার নির্দেশে দেশটির লাখ লাখ লোক বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে অনাহারে আছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের বিস্তার ঠেকাতে নেয়া এ পদক্ষেপের ফলে লাখ লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের হাতে চলার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। খাবার কেনার টাকাও তাদের কাছে নেই। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে কাজের খোঁজে শহরে যাওয়া এসব লোক অর্থের অভাবে আশ্রয় হারিয়েছে। রোববার দুপুর পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮৭। মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। রোগীদের মধ্যে ৮৭ জন সেরেও উঠেছেন। শহরগুলোতে আটকে পড়া হাজার হাজার দিনমজুর বেপরোয়া হয়ে নিজ নিজ গ্রামে ফেরার চেষ্টায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ‘কঠোর সিদ্ধান্তের’ জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘আমার গ্রহণ করা কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসুবিধার কারণ হওয়ায় আমি জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আপনাদের সুরক্ষার নিশ্চিত করার জন্যই আমাকে এ পদক্ষেপগুলো নিতে হয়েছে’, রোববার স্থানীয় সময় সকালে মাসিক রেডিও বক্তৃতা ‘মন কি বাত’ এ মোদি এমনটি বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে দুরবস্থায় গৃহহীনরা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহহীন মানুষরা এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। মেট্রোপলিটন ওয়াশিংটন কাউন্সিল অব গভর্নমেন্টের এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০১৯ সালে বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসির গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৭৯৪ জন। তাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরে। গৃহহীনদের মধ্যে অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, তাদের মধ্যে আবার অনেকেই প্রতিবন্ধী, অনেক মানুষ একসাথে রাস্তায় বাস করেন, তাদের নেই কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা। যাদের বয়স বেশি, দুর্বল স্বাস্থ্য, প্রতিবন্ধী, নিঃসন্দেহে তাদের করোনাভাইরাসের ঝুঁকি অনেক বেশি। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স টু অ্যান্ড হোমলেসনেসে তথ্যটি প্রকাশ পায়। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট এক লাখ ২৪ হাজার ৪৭৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ২২৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৩৮ জন। নিউ ইয়র্কে ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত। ভাইরাস মোকাবেলায় বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহের জন্য নিউ ইয়র্কে নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লকডাউনের আওতায় থাকবে নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটের কিছু অঞ্চল। এ দিকে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক বছরের কম বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এটিই রাজ্যটিতে করোনাভাইরাসজনিত প্রথম শিশু মৃত্যুর ঘটনা। এ তথ্য জানিয়েছে ইলিনয়ের স্বাস্থ্য দফতর।
মুম্বাইয়ের বস্তিতে করোনার হানা : করোনার সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে ভারত। ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেলে তা খুবই বিপজ্জনক বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের বস্তিগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এ বস্তিগুলোতে চারজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পারেলে ৬৪ বছর, জামভিপাড্ডায় ৩৭ বছর বয়স্ক, ঘাটকোপার বস্তিতে ২৫ এবং ৬৮ বছর বয়স্ক চারজনকে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। মুম্বাইয়ের এ বস্তিগুলোতে একটা ১০ ফুট বাই ৮ ফুট ঘরে ছয়-সাতজন মানুষ বাস করেন। এ রকম ২০০০ থেকে ২৫০০ ঘর রয়েছে এক একটি বস্তিতে। প্রতি ২০০ পরিবার পিছু একটি সাধারণ শৌচাগার। এ দিকে মুম্বাইয়ের কালিমবার জামবালিপাড়া বস্তিতে ৩৭ বছরের এক যুবকের শরীরে মিলেছে করোনা। যেখানে প্রায় ৮০০ পরিবারের বাস এবং তাদের জন্য বরাদ্দ মাত্র কয়েকটি শৌচাগার।
ইতালিতে জরুরি অবস্থার সময় বাড়ল : করোনার কারণে পুরো ইতালিজুড়ে জরুরি অবস্থার সময় বাড়ানো হয়েছে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এর আগে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেফ কন্তে চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করেন। মৃতের হিসাবে শীর্ষে আর আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ২৩। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৯২ হাজার ৭৪২ জন। ১৩ হাজার ৩৮৪ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসাধীন থাকা ৭০ হাজার ৬৫ জনের মধ্যে ৩ হাজার ৮৫৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মদিনায় আরো কয়েকটি শহর লকডাউন : লকডাউন করা হচ্ছে পবিত্র মদিনা নগরীর কয়েকটি শহর। নগরীর আস শুরাইবাত, বনি যুফার, কুরবান, আল জুময়া, আল ইসকান, বানি খুদরা এলাকাগুলো এই লকডাউনের আওতাভুক্ত থাকবে। সৌদির সরকারি এক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ২৮ মার্চ ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টা এই কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে। এই সময় উল্লিখিত এলাকাগুলোতে ঘর থেকে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে জরুরি চিকিৎসাসেবা ও মুদিপণ্য কেনাকাটার জন্য খুব নিয়ন্ত্রিতভাবে ওই সময়ের মধ্যে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা চারজন। আর আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২০৩ জন। ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসাধীন থাকা ১১৬২ জনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিন কোটি পরিবারকে বরিস জনজনের খোলা চিঠি : করোনার কারণে ‘পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে’ বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। গত শনিবার ব্রিটেনের প্রায় তিন কোটি পরিবারকে চিঠি পাঠিয়ে তিনি এ বার্তা দেন। এ জন্য প্রয়োজনে ব্রিটেনে আরো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করারও ইঙ্গিত দেন তিনি। চিঠিতে জনসন লিখেছেন, শুরু থেকেই আমরা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছি। বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা পরামর্শে আমাদের কিছু করতে বললে, আমরা তা অবশ্যই করব। আমরা জানি পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে আরো খারাপের দিকে যাবে। তবে আমরা সঠিক প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমরা সবাই নিয়ম যত বেশি মেনে চলব, তত কম জীবন হারাবো এবং তত তাড়াতাড়ি জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। জনসন তার চিঠিতে মহামারীকে ‘জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা করতে এবং জীবন বাঁচাতে সবাইকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন। তিনি চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য সেবাদানকারীর পাশাপাশি সেসব লাখ লাখ মানুষ যারা অসহায় মানুষদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের কাজের প্রশংসা করেন।
ব্র্রিটেনের আরেক মন্ত্রীর করোনার উপসর্গ : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রিসভার আরেক সদস্যের শরীরে করোনার মৃদু উপসর্গ বা লক্ষণ ধরা পড়েছে। অ্যালিস্টার জ্যাক নামের ওই মন্ত্রী দেশটির স্কটল্যান্ড-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। এ ভাইরাসের লক্ষণ ধরা পড়ার পর বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছা আইসোলেশনে রয়েছেন। এর আগে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হুইটির সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন। ব্রিটেনে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৩১২ জন। এর মধ্যে এক হাজার ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৫১ জন। ১৬৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রাশিয়ায় ‘শাটডাউন’: করোনার বিস্তার কমানোর চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কথিত ‘কর্মবিহীন সপ্তাহ’ শুরু করেছে রাশিয়া। এ সময় লোকজনকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শনিবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন এই বিধিনিষেধ ৫ এপ্রিলে পর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে দেশটির কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাশিয়ায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন, মারা গেছে আটজন, সুস্থ হয়েছে ৬৪ জন, চিকিৎসাধীন আছে এক হাজার ৪৬২ জন আর আটজনের অবস্থা সঙ্কটপূর্ণ। বেশির ভাগই আক্রান্তই রাজধানী মস্কোর বাসিন্দা।
নিউজিল্যান্ডে করোনায় প্রথম মৃত্যু : করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউজিল্যান্ডে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫১৪। রোববার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অ্যাসলে ব্লুমফিল্ড এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে গত ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকেই সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ শুরু হয় নিউজিল্যান্ডে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান দেশজুড়ে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন। লকডাউন চলাকালীন দেশটিতে অপ্রয়োজনীয় সেবা, পানশালা, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, জিম, সুইমিংপুল, জাদুঘর, লাইব্রেরি, খেলার মাঠসহ যেসব স্থানে জনসমাগম ঘটে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সুপার মার্কেট, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, সার্ভিস স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা চালু আছে।
চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০০ : স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চীনে। চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৫৭ জন, মোট মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩০৪ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৫ হাজার ৫৭৬ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই হাজার ৬৯১ জন, ৭৪২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে চীনের বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপনের অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) সন্দেহ প্রকাশ করবে।’
ফ্রান্সে এক দিনে ৩১৯ প্রাণহানি : মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে ফ্রান্সেও। আক্রান্তের সংখ্যায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল দুই হাজার ৩১৪ জনে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ হাজার ১০৫। সুস্থ হয়েছে ৫ হাজার ৭২৪ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২৯ হাজার ৫৬১ জন, তন্মধ্যে চার হাজার ২৭৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্পেনে ৫ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু : মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৯৮২। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজার ২৩৫। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৮৫ জন সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৪ হাজার ৯৬৮ জনের মধ্যে চার হাজার ১৬৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের দিক দিয়ে স্পেন এখন বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে।
ইরানে ২ হাজার ৫১৭ জনের মৃত্যু : মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে করোনায় আক্রান্ত দুই হাজার ৫১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত ১১ হাজার ৬৭৯ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। ৩৫ হাজার ৪০৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি আছে ২১ হাজার ২১২ জন, তন্মধ্যে তিন হাজার ২০৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও রয়েছেন।
জার্মানিতে আক্রান্ত ৫৮ হাজার ২৪৭ : আক্রান্তের সংখ্যা পঞ্চম স্থানে আছে জার্মানি। জার্মানিতে করোনায় আক্রান্ত ৫৮ হাজার ২৪৭। অন্য দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৫৫ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ৪৯ হাজার ৩১১ জন, তন্মধ্যে ১৫৮১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আট হাজার ৪৮১ জন।
ইসরাইলে আক্রান্ত ৩৮৬৫ : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইসরাইলে তিন হাজার ৮৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জনের অবস্থা সঙ্কটপূর্ণ। ৮৯ জন সুস্থ হয়েছেন।
তুরস্কে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১০৮ : করোনায় আক্রান্ত হয়ে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ১০৮ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ৪০২ জন। ৪৪৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সুইজারল্যান্ডে ২৮২ জনের মৃত্যু : সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ১৪ হাজার ৩৫২ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮২ জনের ও সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৫৯৫ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ১২ হাজার ৪৭৫ জন, তন্মধ্যে ৩০১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নেদারল্যান্ডে ৬৪০ জনের মৃত্যু : নেদারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮১৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬৪০ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন মাত্র ছয়জন। ৯১৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫২ জনের মৃত্যু : দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ৫৮৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৫২ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৩ জন। ৫৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের কর্মী আক্রান্ত : মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের কর্মী কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছেন। শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের এই কর্মীর করোনোভাইরাস টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে। জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমার অফিস থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি সুইজারল্যান্ড থেকে মিয়ানমারে ফিরে এসে নিজ ব্যবস্থায় সঙ্গরোধে ছিলেন। তিনি কোভিড -১৯ এর লক্ষণ অনুভব করতে শুরু করলেই একটি নির্ধারিত পাবলিক হাসপাতালে যান। বর্তমানে সেখানে তাকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।
কাশ্মিরে করোনা আক্রান্তের মৃত্যু : এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণে দ্বিতীয় রোগীর মৃত্যু হয়েছে জম্মু-কাশ্মিরে। রোববার শ্রীনগরের এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় বারামুল্লার এক পৌঢ়ের। শনিবারই তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। সন্দেহ করা হচ্ছে কম্যুনিটি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ওই পৌঢ়। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন চিকিৎসকরাও। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মিরে কভিড-১৯ আক্রান্ত ১১ জন শনাক্ত হয়েছে, এদের মধ্যে একজন সুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
করোনা বিপর্যয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বৈধতা দিলো পর্তুগাল : করোনাভাইরাস বিপর্যয়ে পর্তুগালের সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির অভিবাসন অধিদফতরে (এসইএফ) যাদের বৈধ হওয়ার আবেদন করা ছিল শুধু তারা এ সুযোগের আওতায় পড়বেন। শুক্রবার রাতে একটি আদেশে এমনটি জানিয়েছেন পর্তুগালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডুয়ার্ডো ক্যাব্রিতা।
এতে আরো জানানো হয়, পর্তুগালের অভিবাসন অধিদফতরে আবেদনের কাগজটি এখন থেকে অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট হিসেবে গণ্য হবে। এই প্রমাণ বা আবেদনের কাগজ দিয়ে আবেদনকারীরা এখন থেকে পর্তুগালের সব রাষ্ট্রীয় সেবা নিতে পারবেন বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা।
পর্তুগালে যারা রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের আশ্রয়ে আছেন তারাও এই আদেশের আওতায় পড়বেন। করোনাভাইরাস ‘সঙ্কটের সময় এটি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য’ বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী এডুয়ার্ডো ক্যাব্রিতা।
দেশটির সরকার নিশ্চিত করেছে যে, সব অভিবাসী যাদের অভিবাসন অধিদফতরে আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে তারা এখন থেকে নিয়মিত বলে বিবেচিত হবেন এবং অন্যান্য নাগরিকের মতো সামাজিক অধিকারসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এই আদেশটি কার্যকর হবে ১৮ মার্চ থেকে, যেদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পর্তুগালে জরুরি আইন জারি করা হয়।
এর আওতায় এখন থেকে আবেদনকারীরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, সামাজিক সহায়তা সুবিধা, ইজারা চুক্তিতে স্বাক্ষর, কর্মসংস্থান চুক্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা চুক্তিসহ সব নাগরিকসুবিধা পেতে অস্থায়ী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
করোনায় লকডাউনে নেই সুইডেন : পুরো ইউরোপ যখন করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ঘরের ভেতর গুটিয়ে গেছে, তখন অঞ্চলটির একটি দেশে জীবনযাত্রা চলছে স্বাভাবিকভাবেই। দেশটি হচ্ছে সুইডেন। দীর্ঘ শীতের পর সেখানে আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করেছে। ঘরের বাইরে বসে সময় কাটানোর মতো উষ্ণতা এসেছে। সুইডেনের জনগণ করোনার আতঙ্ক ভুলে সে উষ্ণতা গায়ে মাখছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাজধানী স্টকহোমের মারিয়াটরগেট স্কয়ারে আইসক্রিম খেতে জড়ো হচ্ছেন অনেকে। শহরের অন্যান্য অংশে খোলা রয়েছে নাইটক্লাবগুলো। তবে গতকাল রোববার থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এ পদক্ষেপ কিছুটা শিথিল। ডেনমার্কে ১০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্য দিকে ব্রিটেনে নিজের বাড়ি ছাড়া বাইরে কারো সাথে দেখা করাই নিষিদ্ধ।
লকডাউনে না থাকলেও সুইডেনের করোনার আতঙ্ক স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। দেশটির রাস্তাগুলো আগের চেয়ে নীরব হয়ে উঠেছে। স্টকহোমের গণপরিবহন প্রতিষ্ঠান এসএল জানিয়েছে, সাবওয়ে ও কমিউটার ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে গেছে। জরিপ অনুসারে, শহরটির অর্ধেক বাসিন্দা বাড়ি থেকে কাজ করছে।
রাষ্ট্রীয় তহবিলে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান স্টকহোম বিজনেস রেজিওন, স্টকহোমের বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সমর্থন দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমান, রাজধানীর অন্তত ৯০ শতাংশ বড় সংস্থা এ পরিস্থিতির মধ্যেও উন্নতি করবে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও স্টাফান ইনগাভারসন বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই এমনটা করার সুযোগ রয়েছে। তারা এটা করছে। এটা কার্যকরী।


আরো সংবাদ



premium cement