২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে ৮১ হাজারের বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা

বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ২৮ হাজার ৩৭৭, আক্রান্ত ৬ লাখ ১৭ হাজার ২৮৮; ভারতে ১০ কোটি মানুষ আক্রান্তের শঙ্কা; রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ করোনায় আক্রান্ত; ইতালিতে ৯ হাজার ১৩৪ জনের মৃত্যু
-

পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে অল্প সময়ে এত মৃত্যু কয়েকটি দেশকে যেন মৃত্যুকূপ বানিয়ে ফেলেছে। মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একেকটি দিন মনে হচ্ছে বিভীষিকাময়। এ দিকে বৈশি^ক অর্থনীতিতেও ধস নামতে শুরু করেছে। লকডাউন আর শাটডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে জীবন-জীবিকা। ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে পৃথিবী। কোভিড-১৯ নামের ভাইরাসটি এরই মধ্যে ২০০টি দেশে আক্রান্ত করেছে ছয় লাখ ১৭ হাজার ২৮৮ জনকে। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৩৭৭ জনের। চার লাখ ৫১ হাজার ৩৫১ জন চিকিৎসাধীন এবং ২৩ হাজার ৯৯৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ জন। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, দ্য মিরর, মিডল ইস্ট মনিটর, ওয়ার্ল্ডোমিটারস, সিএনএনের।
যুক্তরাষ্ট্রে চার মাসে মরবে ৮১ হাজারের বেশি : আগামী চার মাসে করোনাভাইরাস শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কেড়ে নিতে পারে ৮১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল আগামী জুন মাস পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিনের এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায় এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। জুনের শেষ দিকে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন অন্তত ১০ জন করে কমতে পারে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ চার হাজার ২৫৬ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ৭১১ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৫২৫ জন।
নিউ ইয়র্কে আক্রান্ত ৫ শতাধিক পুলিশ : গত শুক্রবার নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, অঙ্গরাজ্যটিতে ৫১২ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪২ জন পোশাকধারী কর্মকর্তা এবং বাকি ৭০ জন বেসামরিক সদস্য। আরো তিন হাজার ১৬ জন পুলিশ সদস্যের শরীরে ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এসব সদস্য জ্বর, কাশি, সর্দি ও মাথাব্যথার মতো সমস্যায় ভুগছেন। শুক্রবার চার হাজার ১১১ পুলিশ সদস্যের অসুস্থতার খবর পাওয়া গেছে; অর্থাৎ ৩৬ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১১ শতাংশই অসুস্থ।
তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯২ : করোনায় আক্রান্ত হয়ে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৯২ এবং আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৯৮ জন। ২৪১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটিতে করোনা শনাক্তের জন্য ১০ লাখের বেশি কিট রয়েছে। আক্রান্তদের অবস্থান প্রকাশ করছে না তুরস্ক। কারণ এতে সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। সংক্রমণ এলাকার নাম প্রকাশ করলে লোকজন অন্য এলাকায় চলে যাবে যেখানে কোনো আক্রান্ত নেই। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান তুর্কিদের ধৈর্যধারণ করে সরকারের পদক্ষেপকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সামনে উজ্জ্বল দিন অপেক্ষা করছে যদি আমরা নির্দেশনা মেনে চলি, সতর্ক ও সাবধান থাকি। সব নাগরিক আমাদের কাছে সমান। তাই আমরা বলছি, ‘ঘরে থাকো, তুরস্ক’।
জাতিসঙ্ঘের ৮৬ কর্মী আক্রান্ত : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসঙ্ঘের ৮৬ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার রোধে বর্তমানে জাতিসঙ্ঘের বেশির ভাগ কর্মীই বাড়িতে বসে কাজ করছেন। জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ অফিসে প্রতিদিন চার হাজার কর্মী কর্মরত ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০। ভিয়েনাতে জাতিসঙ্ঘের ৯৭ শতাংশ কর্মীই বাড়িতে বসে কাজ করছেন। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় ৯৯ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
রানী ২য় এলিজাবেথ আক্রান্ত : ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হুইটির শরীরেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়ায় তিনি নিজেই সাত দিনের সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন। ব্রিটেনে প্রতি ১৩ মিনিটে মারা যাচ্ছে একজন করোনা রোগী। করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ মার্চ ১৩৩ জনের, ২৫ মার্চ ১১৫ জনের। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৭৫৯ জন। এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৫৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যায় ২য় চীন : জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চীনে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৯৪৬ জন, মোট মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ২৯৫ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭৪ হাজার ৯৭১ জন। নানা কঠোর পদক্ষেপ এবং জনজীবনে বিধিনিষেধ জারি করে চীন আড়াই মাসে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বাকি বিশ্বে।
ফ্রান্সে লকডাউনের সময় বৃদ্ধি : ফ্রান্সে লকডাইনের সময় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী এদোয়ার্ড ফিলিপ। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা এক মহা সঙ্কটের মধ্যে আছি; যা বহুদিন স্থায়ী হতে পারে। দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ১৭ মার্চ বোরবার ১৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা দিয়েছিল। ফ্রান্সে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৪১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক হাজার ৯৯৫ জন। সুস্থ হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৩৭৮৭ জন।
ভারতে ১০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা : জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি এবং সেন্টার ফর ডিজিসেস, ডাইনামিক্স অ্যান্ড পলিসির (সিডিডিইপি) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসে ভারতের ১০ কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। জুলাই মাসের মধ্যে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ কোটি থেকে ৪০ কোটি ছুঁয়ে ফেলতে পারে। মার্চের শুরুর দিকেই ভারতে কোভিড-১৯ স্টেজ থ্রি-তে ঢুকে পড়ে সামাজিক সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। লকডাউন করে সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে না। অর্থনীতির ওপরে প্রভাব পড়বে মারাত্মক। খাদ্য সঙ্কটের মতো সমস্যা দেখা দেবে, মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৩। মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। রোগীদের মধ্যে ৮৪ জন সেরেও উঠেছেন।
১ জন থেকে সংক্রমিত ৪০ হাজার : ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের কর্তৃপক্ষ সেখানকার ২০টি গ্রামের ৪০ হাজার বাসিন্দাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের সবার দেহে এই রোগ সংক্রমিত হয়েছে মাত্র একজনের কাছ থেকে। পাঞ্জাবে ৩০ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ বছর বয়সী বলদেব সিং সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন। এই ব্যক্তি একজন শিখ ধর্মপ্রচারক। সম্প্রতি তিনি ইতালি ও জার্মানি সফর শেষে দেশে ফেরেন। মৃত্যুর কিছু দিন আগে শিখ ধর্মের উৎসব হোলা মহল্লা উপলক্ষে তিনি বড় ধরনের এক জনসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। ছয় দিনব্যাপী ওই উৎসবে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। বলদেব সিংয়ের মৃত্যুর পর তার ১৯ জন আত্মীয়ের দেহে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে।
ইতালিতে ৯ হাজার ১৩৪ জনের মৃত্যু : ইতালিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৪ জন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৯৮ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছে ১০ হাজার ৯৫০ জন। চিকিৎসাধীন থাকা ৬৬ হাজার ৪১৪ জনের মধ্যে তিন হাজার ৭৩২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ শুরুর প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবের মধ্যেই অসুস্থদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তারা।
স্পেনে আক্রান্ত ৯ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী : স্পেনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক দিনে বেড়েছে আট হাজার। দেশটিতে ৯ হাজার ৪৪৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী বর্তমানে আক্রান্ত। স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের দিক দিয়ে স্পেন এখন বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। দেশটির ৯০০ নার্সিং হোমে অন্তত এক হাজার ৫১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নার্সিং হোম, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র জীবাণুমুক্ত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। করোনায় ফরাসি বংশোদ্ভূত বোরবন পার্মা রাজ পরিবারের সদস্য প্রিন্সেস মারিয়া টেরেসা (৮৬) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্পেনের হাউজ অব বোরবনের বর্তমান ডিন্যাস্টির ক্যাডেট শাখার সদস্য ছিলেন এই চিরকুমারী। স্প্যানিশ রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখিও করতেন। স্পেনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭২ হাজার ২৪৮ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৮৫ জন সুস্থ হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৯০ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫৪ হাজার ২৭৩ জনের মধ্যে চার হাজার ১৬৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইরানে ২ হাজার ৫১৭ জনের মৃত্যু : ইরানে করোনায় আক্রান্ত দুই হাজার ৫১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত ১১ হাজার ৬৭৯ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। ৩৫ হাজার ৪০৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩ হাজার ২০৬ জন।
জার্মানিতে আক্রান্ত ৫৩ হাজার ৩৪০ : জার্মানিতে করোনায় আক্রান্ত ৫৩ হাজার ৩৪০। অন্য দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৯৯ জন। করোনায় আক্রান্ত এক হাজার ৫৮১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ছয় হাজার ৬৫৮ জন।
ইসরাইলে আক্রান্ত ৩,৪৬০ : করোনায় ইসরাইলে তিন হাজার ৪৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ জনের অবস্থা সঙ্কটপূর্ণ। ৮৯ জন সুস্থ হয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement