করোনা আতঙ্কের মধ্যেও নিশ্চিন্তে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা
- আশরাফুল ইসলাম
- ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাসের মধ্যেও অনেকটা নিশ্চিন্তে আছেন দেশের ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ব্যাংক ঋণের বড় একটি অংশ দখলে রেখেছেন এসব ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালক, বড় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ রয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছয় মাসের মধ্যে কাউকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। আর পরিশোধ না করলে তাদের খেলাপিও বলা যাবে না। তাই এ সময়ের মধ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করে ঋণ নিয়মিত দেখাতে হবে না এসব ঋণখেলাপির। এ কারণে বলা চলে অনেকটা স্বস্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ী গ্রুপ ও উদ্যোক্তারা।
সাধারণত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে খেলাপি হয়ে যান একজন ঋণগ্রহীতা। আর খেলাপি হলে, তিনি নতুন করে কোনো ঋণসুবিধা পান না। এমনকি আমদানি-রফতানির মতো কোনো বৈদেশিক বাণিজ্যেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ নানা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করেন না। আবার সেসব ঋণ খেলাপিও দেখানো হয় না। নানা কৌশল অবলম্বন করে ঋণ নিয়মিত দেখান তারা। যেমন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি ব্যাংক পরিচালক ও প্রভাবশালী হওয়ায় বেনামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে পুরনো ঋণ পরিশোধ দেখান। কেউবা ঋণের নামে টাকা উত্তোলন করেন, কিন্তু ঋণের অর্থ ছাড় দেখান না। কেউবা ডাউন পেমেন্ট না দিয়েই ঋণ নবায়ন করেন। আবার যেসব ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে ব্যাংকের মালিকানা নেই তারাও প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করেই বছরের পর বছর ঋণ নবায়ন করে আসছেন। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের অনৈতিক কাজ বেশি হচ্ছে। এর পরেও কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে উচ্চ আদালতে রিট করে খেলাপির খাতা থেকে নিজের নাম স্থগিত করে রেখেছেন। এর বাইরে সময়ে সময়ে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ঋণ নবায়নের সুবিধা নেন এ ধরনের সুবিধাবাদি গ্রুপ। যেমন ২০১৪ সালে ঋণ পুনর্গঠনের নামে মাত্র ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৫০০ কোটি ও ১ হাজার কোটি টাকার ওপরের ঋণখেলাপিরা ঋণ নবায়ন করেন। ওই সময় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেন মাত্র ১৪টি ব্যবসায়ী গ্রুপ। ঋণ নিয়মিত করে আবার শত শত কোটি টাকা বের করে নেন ব্যাংক থেকে। কিন্তু ওই ঋণ আর পরিশোধ করা হয়নি। গত বছরে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে দীর্ঘ ১০ বছরের জন্য। এ ক্ষেত্রে সুদহারেও বড় ধরনের ছাড় নেয়া হয়। যেমন, যখন ঋণ গ্রহণ করেন তখন ঋণের সুদহার ছিল ১৭ শতাংশ। কিন্তু ২ শতাংশ সুদে ঋণ নবায়ন করলে সুদহার স্বয়ংক্রীয়ভাবে ৯ শতাংশে নেমে আসবে। এভাবেই সাধারণের আমানতের অর্থঋণ আকারে নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না বছরের পর বছর ওই অসাধু গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমান প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে ব্যাংকিং খাতে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর বড় একটি অংশই রয়েছে এসব অসাধু ব্যবসায়ী গ্রুপের দখলে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, আগামী জুন মাস পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে না। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগামী জুন মাস পর্যন্ত এ ছাড় দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ছাড় আশীর্বাদ হিসেবেই দেখছেন ওই সব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর ফলে নানা কৌশল অবলম্বন করে তাদের আর ঋণ নিয়মিত দেখাতে হবে না। তাই তারা দুর্যোগের এ সময়টিতে অনেকটা নিশ্চিন্তেই কাটাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পরিবেশ পরিস্থিতিতে আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেমনটি করা হয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সামাজিকভাবে অনেকটা বয়কট করা হয়েছে তাদের। এসব পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকিং খাতের ঋণ আদায় অনেক বেড়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা আরো বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা