১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন বেলা খাওয়ার চিন্তায় নিম্ন আয়ের মানুষ

-

শাহজালাল। পেশায় একজন রিকশাচালক। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গোপীবাগের এক খুপরি বাসায় বসবাস। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে মোটামুটি খেয়ে-পরে থাকতে পারেন। রিকশা চালানোর বাইরে উপযুক্ত কাজ পেলেও বাড়তি উপার্জনের জন্য করে থাকেন। করোনার প্রভাবে শাহজালাল এখনই বিধ্বস্ত। দিনতিনেক ধরে আয় কমতে শুরু করেছে। গতকাল আয় নেই বললেই চলে।
পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে এই আশঙ্কা আগেই করেছিলেন শাহজালাল। স্ত্রী-সন্তানদের তিন দিন আগে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় এখন তিনি একা। গতকাল টিকাটুলি ব্রাদার্স ক্লাবের সামনে কথা হয় শাহজালালের সাথে। মুখ কালো করে বসেছিলেন যাত্রীর আশায়। শাহজালাল জানালেন, রাস্তায় তো মানুষই নেই। যাত্রী পাবেন কোথায়? আর যাত্রী না থাকলে রোজগার আসবে কোত্থেকে? শাহজালাল জানালেন, এভাবে এক সপ্তাহ থাকলে কী খাবেন তাই নিয়ে দুশ্চিন্তা তার। স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে পাঠালেও ওরা সেখানে বসে কী খাবে? এর মধ্যে লোন নেয়া আছে। সেই লোনের টাকা কিভাবে শোধ করবেনÑ আরো অনেক চিন্তা শাহজালালের মাথায়।
শুধু শাহজালালই নন, খেটে খাওয়া প্রায় প্রতিটি মানুষেরই এই চিন্তা। গোপীবাগ রেললাইনের পাশে পান-চায়ের দোকান ছিল মানিকের। দোকানটি দু’দিন ধরে বন্ধ। পুলিশ বসতে দিচ্ছে না। দোকানে চায়ের আড্ডা বসে। মানিক জানালেন, এখন কী করার। পুলিশ তো নিরাপত্তার জন্য বসতে দেবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পেট চলবে কিভাবে? মানিক জানালেন, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। দোকান দিয়ে যে আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলে। দোকান বন্ধ থাকলে কী খাবেন? গ্রামের বাড়ি গিয়েই বা কী খাবেন। কোনো জমা টাকা নেই।
মানিকনগর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সৌরভ জানালেন, বেচাবিক্রি নেই। রাস্তায় তো মানুষই নেই; বিক্রি করবেন কার কাছে। সৌরভ জানান, মার্কেটের অনেকে দোকানই খুলছেন না। যাদের দু’চার দিন চলার টাকা আছে তারা দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। এই দু’চার দিন গেলে তারা কী করবেন?
উত্তরায় ঠিকাদারি কাজ করেন আলমগীর। গতকাল জানালেন, কোনো কাজ নেই। রাস্তায়ই নামতে পারেন না ভয়ে। কাজ করবেন কিভাবে। দিনমজুর যারা ছিলেন গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। কবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তখনই কেবল কাজ শুরু করতে পারবেন।
আশিকুর রহমান নামের একজন জানান, এমনিতেই সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। প্রাণ রক্ষাকারী ওষুধ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ এমন কোনো জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি। এই অবস্থায় উপার্জনের পথও বন্ধ। কিভাবে বাঁচবেন সেই দুশ্চিন্তায় তারা। উত্তরার বাসিন্দা ইব্রাহিম জানান, কিভাবে দিনগুলো কাটবে সেই চিন্তায় আছেন। দু’বেলা অন্তর এক বেলা খেতে হলেও তো সংস্থান লাগবে। তার কোনো উপায় আপতত দেখছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরো দেশেই এই একই অবস্থা। প্রান্তিক মানুষগুলো যেভাবে ভয়ে আছেন; তেমনি দুশ্চিন্তায়। এভাবে কাজকর্ম বন্ধ থাকলে তারা কী খাবেন সেই নিশ্চয়তা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও জীবন চালানোর জন্য কোনো আশ^াস এখনো পাননি তারা।


আরো সংবাদ



premium cement