২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বর্ণপদক বিতরণ

নবম শ্রেণী থেকেই বিষয়ভিত্তিক বিভাজন না করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী

কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নবম শ্রেণী থেকেই বিষয়ভিত্তিক বিভাজন (বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য) তুলে দেয়ার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা না থাকাই ভালো। এসএসসির পরে গিয়ে যদি বিভক্ত হয়, সেটাই ভালো।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৮’ বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণ করেন। এদের মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রী রয়েছেন ৮৮ জন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবই পড়–ক তারপর যেখানে সে মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে সেটা করে নেবে। তাহলে অন্তত তাদের মেধা বিকাশের একটা সুযোগ হয়।’ প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এখন সব সাবজেক্টই বিজ্ঞানভিত্তিক। সেটা ধীরে ধীরে চলেই এসেছে। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের (দেশে) ক্লাস নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে সেটা ভাগ করে দেয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকারই নাই। কারণ এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সব সাবজেক্টই তারা পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা নেই, কারণ বিজ্ঞান না পড়ার ফলে অনেক বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দিপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ টেকনোলজির শিক্ষার্থী মো: মোবারক হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শারমিন সুলতানা অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিব, জাতীয় অধ্যাপক, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান, বর্তমান এবং সাবেক ইউজিসি সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য এবং শিক্ষবিদ, পিএমও, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সে লক্ষ্যে একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমরা কাউকেই অবহেলা করতে চাই না। যে কারণে আমাদের মাদরাসা শিক্ষার সাথে অনার্স কোর্স চালু এবং প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কওমি মাদরাসাকেও আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দিয়েছি। কারণ তাদেরকেও আমরা সমন্বিত শিক্ষার মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। একই ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসতে চাই।’
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রে বা চাকরি পেতে যে শিক্ষার দরকার হয়, সে শিক্ষাটাও তারা (মাদরাসার শিক্ষার্থীরা) গ্রহণ করবে। সেখানেও মেধাবী শিক্ষার্থী আছে। তাদেরকে কেন অবহেলা করব- প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলায় তার সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সাথে প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল, কলেজ এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, যার যেভাবে শিক্ষা গ্রহণ বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করার দক্ষতা রয়েছে সে সেইভাবেই শিক্ষালাভ করতে পারবে। সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন মঞ্জুরি কমিশন খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগসংক্রান্ত একটা অভিন্ন নীতিমালা করতে হবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কত ছাত্রছাত্রী থাকবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেয়াটাও জরুরি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর এখন সেটা খুব কঠিন কাজ নয়।
তথ্য-যোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষাটা আধুনিক জগতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতে হয়তো আরো নতুন নতুন পদ্ধতি আসবে। কিন্তু যখনই যেটা আসবে তার জন্য আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা সব সময় যেন প্রস্তুত থাকতে পারে সেভাবেই তাদেরকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’
সারা দেশে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মেরিন অ্যাকাডেমির সাথে মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, ডিজিটাল, টেক্সটাইল এবং ফ্যাশন ডিজাইনিং বিশ্ববিদ্যালয়ও করেছে। একই সাথে লালমনিরহাটে একটি অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ও করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনটা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি এবং প্রত্যেকটা বিভাগে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে। যেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেখানে কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি এবং বিজ্ঞান শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য ৯৬ সালেই ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন পাস করে যাই।
প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সোনার ছেলেমেয়ে আখ্যায়িত করে আগামীতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলায় নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলে দেশগড়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্যও সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেলেন ১৭২ শিক্ষার্থী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৬টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান করেছেন।
গতকাল বুধবার তিনি সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সর্বোচ্চ নম্বর/সিজিপিএ প্রাপ্তদের হাতে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৮’ তুলে দেন। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং নেপালের একজনসহ ৮৮ জন ছাত্রী রয়েছেন। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন ১৬৩ জন শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজ টেকনোলজির শিক্ষার্থী মো: মোবারক হোসেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজের শারমিন সুলতানা অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব, জাতীয় অধ্যাপক, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান, বর্তমান ও সাবেক ইউজিসি সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি ও শিক্ষাবিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বিশাল জয়ে টাইগারদের অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সিরিজের একমাত্র টেস্টে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।
টাইগাররা ঢাকায় শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে। গতকাল এক অভিনন্দন বার্তায় ক্রিকেট অনুরাগী প্রধানমন্ত্রী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বিশাল বিজয়ের জন্য সকল খেলোয়াড়, বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ও কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের টিম স্পিরিট এবং তাদের অসাধারণ নৈপুণ্যে জাতি আজ গর্বিত।’ প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিজয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল