২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
মূল লড়াইয়ে রাজাপাকসে-প্রেমাদাসা

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ফল প্রকাশ আজ

-

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ করা হয়। দেশটিতে ধর্মীয় উত্তেজনা ও অর্থনীতির কঠিন অবস্থার মধ্যে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে রেকর্ড ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে মূল লড়াই হচ্ছে বিরোধী শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) দলের প্রার্থী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রার্থী সাজিথ প্রেমাদাসার মধ্যে। আজ ভোরে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হতে পারে। এ দিকে ভোটকেন্দ্রে আসার সময় মুসলিম ভোটারদের গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। খবর বিবিসি, ডয়চে ভেলে ও আলজাজিরার।
গোটাবায়া দুইবারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই। অন্য দিকে সাজিথ প্রেমাদাসা সাবেক প্রধানমন্ত্রী রানাসিংহ প্রেমাদাসার ছেলে। এবার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা নির্বাচন করছেন না। চলতি বছরের ২১ এপ্রিল দেশটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়। হামলা হতে পারে এমন তথ্য পাওয়ার পরও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তার জনপ্রিয়তা তলানীতে ঠেকে। এজন্য তিনি এবার নির্বাচন করছেন না। ওই হামলার প্রায় সাত মাস পর এই নির্বাচন হলো।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায়। তবে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থীর কারণে ব্যালট পেপার দুই ফুট লম্বা হওয়ায় ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম খুঁজে পেতে সময় বেশি লেগেছে। এ কারণে বিকেলে ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয় বলে কোনো মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। দেশের ২২টি নির্বাচনী জেলায় ১২ হাজার ৮৪৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা ভোট দেন। বৈধ ভোটার এক কোটি ৫৯ লাখ। নির্বাচনে ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কোনো প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশ পেতে হবে।
জানা গেছে, সাজিথ প্রেমাদাসা সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয়। অন্য দিকে গোটাবায়া তার ভাইয়ের আমলে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে সংখ্যালঘু তামিল ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের মধ্যকার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অবসানে তার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার হার খুব বেশি। এর আগে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে।
তাতে ভোট দিয়েছিলেন শতকরা ৮১.৫ ভাগ ভোটার। সেই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তবে তিনি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তার দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) সমর্থন করছে গোটাবায়া রাজাপাকসেকে। অন্য দিকে নিজের দলের প্রার্থী প্রেমাদাসাকে সমর্থন করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। গত বছর অক্টোবরে এই প্রধানমন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। কিন্তু তাতে সফল হননি তিনি। রাজনীতির মারপ্যাঁচ ও কৌশলের কাছে হেরে যান সিরিসেনা। সদর্পে ক্ষমতায় ফেরেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
নির্বাচনী প্রচারণায় গোটাবায়া রাজাপাকসে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে মোকাবেলা করতে শক্তিশালী ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ২৬ বছর ধরে চলমান তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিজে সফল হয়েছেন বলে প্রচারণায় জোর দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। তবে ওই সময়ে সংঘটিত জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই গৃহযুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে কমপক্ষে ৪০ হাজার তামিলকে হত্যা করা হয়েছে।
গোটাবায়া রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী করবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে। কিন্তু মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুই দফা ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময়ে তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।
মুসলিম ভোটারদের গাড়িবহরে হামলা
নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার পথে মুসলিম ভোটারদের বহনকারী গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে গাড়ি থামিয়ে গুলি চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
শতাধিক মানুষের ওই গাড়ির একটি বহরকে গন্তব্যে পৌঁছতে বাধা দিতে রাস্তায় হামলাকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে দেয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপরই সেখানে গুলি চালানো হয়। বন্দুকধারীরা বাসে গুলি চালানোর পাশাপাশি পাথরও নিক্ষেপ করেছে। এতে কমপক্ষে দু’টি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
হামলার পর পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে যাত্রীদের ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল