২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ইচ্ছেকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

বাধ্যতামূলক ব্যাংক একীভূত দ্রুত করতে শিগগিরই আইন সংশোধন

-

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে শিগগিরই আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আর ইচ্ছে করলেই খেলাপি ঋণের ওপর উচ্চ আদালতে রিট করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন পেতে খেলাপি ঋণের ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হবে। আর ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও অর্থঋণ আদালত আইন শিগগিরই সংশোধন হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আইনজীবীদের মতামত নিয়ে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক বসানো হয়েছে। অপর দিকে নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। সাধারণ আমানতকারী থেকে শুরু করে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। অর্থ ফেরত পেতে তাই গ্রাহকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
জানা গেছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন পরিচালকের বিরুদ্ধে সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ মেরে দেয়ার অভিযোগ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাধ্য হয়ে ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে নতুন পর্ষদের কাছে দায়িত্ব দেয়া হয়। এখন অনেকটা স্যালাইন দিয়ে বেঁচে রাখা হয়েছে নতুন ওই ব্যাংকটিকে। ইতোমধ্যে দুর্নাম ঘোচাতে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখেছে ব্যাংকটি। আরো কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তাই বাধ্যতামূলক একীভূত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৭৭ ধারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মার্জার বা একীভূত হওয়ার কথা বলা হলেও দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বেশি দিন ধরেও রাখা যাবে না। এ কারণে দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একীভূত হতে বাধ্য করতে নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলো যাতে অন্য ব্যাংকগুলোর সাথে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়ে যেতে পারে সেজন্য এ সংক্রান্ত আইনে বিশেষ ধারা সংযুক্ত করা হচ্ছে। ওই ধারায় দুর্বল ব্যাংকগুলো কিভাবে অন্য ব্যাংকের সাথে একীভূত হবে, ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের অবস্থান কী হবে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাথে নিতে সবল ব্যাংকগুলোর বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে।
এ দিকে ঋণখেলাপিরা কথায় কথায় কথায় উচ্চ আদালতে ব্যাংকের বিরুদ্ধে রিট করেন। একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণখেলাপি বলা যাবে না, অথবা অর্থঋণ আদালতের রায় নিয়ে ঋণখেলাপির দেয়া বন্ধকী সম্পত্তি নিলামের ওপর ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালত থেকে সহজেই স্থাগিতাদেশ নিয়ে থাকেন। নির্ধারিত সময়ের জন্য এ স্থগিতাদেশ নিয়ে আবারো অন্য ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে এ পর্যন্ত এমন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে, যা উচ্চ আদালত থেকে রিট করা হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকে কিভাবে রিট ঠেকানো যায় তার কৌশল প্রণয়নের জন্য অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, ঋণখেলাপিরা ইচ্ছে করলেই উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবেন না। রিট করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অনুমোদন দিলেই কেবল সংশ্লিষ্ট গ্রাহক উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুমোদন পেতে খেলাপি ঋণের ২৫ শতাংশ অর্থ আদালতে জমা দেয়ার মুচলেকা দিতে হবে। আবার বন্ধকী জমি বিক্রির আগে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তা হিসেবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির অনুমোদনের ব্যবস্থা রাখাও হচ্ছে। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধকী জমি নিলামের আগে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করে থাকেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক।
এ দিকে ব্যাংক কোম্পানি আইনও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এসব আইনের সংশোধনের খসড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত করেছে। এর একটি প্রতিবেদন আইনজীবীদের কাছে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীদের মতামত পাওয়া গেলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ব্যাংক মার্জারসহ অন্যান্য বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ড. মো: কবির আহমদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্য করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এবং অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে। তারাই এ বিষয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement