২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ৪১৬ কোটি টাকা চায় ইসি

সাড়ে তিন কোটি স্মার্ট পরিচয়পত্র বিতরণ বাকি ; তিন বছরে অগ্রগতি ৩০ শতাংশ, বাকি আছে দেড় বছর
-

চলতি অর্থবছরই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ৪১৫ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ টাকা টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস বা আইডিইএ প্রকল্পটির জন্য এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রতিজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ২ লাখ ২০ হাজার টাকা সম্মানী পাবে। ২০১৬ সালে শেষ করার কথা থাকলেও তা কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি মেয়াদে এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করার ঘোষণায় সরকারি টাকায় চলমান রাখা হয়েছে। এখনো সাড়ে ৩ কোটি স্মার্টকার্ড বিতরণ বাকি আছে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, তিন বছরে যখন বিতরণের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ, সেখানে দেড় বছরে বাকি ৭০ শতাংশ কার্ড প্রদান করতে হবে।
ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, তৃতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ৯ মাস বাড়ানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে সাড়ে ৩ কোটি স্মার্ট পরিচয়পত্র বিতরণ করতে হবে। প্রকল্পের অসমাপ্ত জরুরি কিছু কাজ সম্পাদনের জন্য বর্ধিত সময়ের জন্য গত অর্থবছরের অব্যয়িত ৪১৫ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা এ আইডিইএ প্রকল্পের অনুকূলে চলতি বছর বরাদ্দ প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ও ডিজি এনআইডি উইং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইসিকে দেয়া এক চিঠিতে বলছেন, ওই ৯ মাসে কর্মচারীদের প্রতিদান ৫১ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা, পণ্য ও সেবা ব্যয় ২৮১ কোটি ৫৪ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা বেতন-ভাতাদি, ফার্মের এক হাজার ৩১৬ জন কর্মচারী বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সম্মানী ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, পরামর্শক খাতে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, স্মার্ট এনআইডি কার্ড উৎপাদন ও বিতরণে ব্যয় ৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ওবের্থার টেকনোলজিস কোম্পানির বকেয়া পাওনা ২২০ কোটি ২২ লাখ টাকা, আমদানিকৃত পণ্য খালাসে কাস্টমস ডিউটি ও শুল্ক ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ডাটা রিকভারি সিস্টেম-সংক্রান্ত ব্যয় ৩৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
ইসি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্স একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইতে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৭ কোটি মার্কিন ডলার। পাঁচ বছরব্যাপী প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড প্রদান ও বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এতেও কাজ শেষ হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে না।
এদিকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি স্মার্টকার্ড সরবরাহকারী ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবের্থার টেকনোলজিসের (ওটি) সাথে ১০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৮১৬ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের জন্য স্মার্টকার্ড উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর শুরু হয় বিতরণ। নির্ধারিত সময়ে তাতে ব্যর্থ হওয়ার পর ওই চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। গত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণসংক্রান্ত সর্বশেষ সভার কার্যবিবরণীতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬০ লাখ স্মার্টকার্ড তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ৩ কোটি ৩৩ লাখ পরিচয়পত্র নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনেক কার্ড রয়ে গেছে, যেগুলো বিতরণ করা হয়নি বা নাগরিকরা নিতে আসেননি। এছাড়া নাগরিকের তথ্য না মেলায় অনেক স্মার্টকার্ড মুদ্রণ সম্ভব হয়নি।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, বিদেশী সংস্থার সহযোগিতায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। পরে তারা অপারগতা জানালে এখন নিজেরাই উৎপাদন করেছি। সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে মুদ্রণ ও বিতরণ কাজ দ্রুততর করার চেষ্টা চলছে। আশা করি, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সব ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারব।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উইং বলছে, বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হলো, সংশোধিত মেয়াদকালে প্রকল্পের প্যাকেজভিত্তিক সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা এবং এর বিপরীতে প্রকল্পের অগ্রগতির অবস্থান আইএমইডিতে যথাশিগগির পাঠাতে হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণ এবং নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্তি নিশ্চিতকল্পে সব রিসোর্স মোবিলাইজেশন আরো বৃদ্ধি করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement