২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা : কাদের

বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্টের হামলায় নিহতদের প্রতি আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা : নয়া দিগন্ত -

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। ২০০৪ সালের এই দিনে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান টার্গেট করে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সন্ত্রাসীদের দিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা দরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে সেটা চিরদিনের জন্য শেষ করে দিয়েছে বিএনপি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টার মাইন্ড তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এ গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের জবানবন্দীতে আছে তারেক রহমানের নির্দেশ মেনেই তারা সে দিন অপারেশন চালিয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ডের যেমন বিচার হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদেরও সর্বোচ্চ সাজা হতে হবে। আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য অবশ্যই আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তিনি বলেন, সে দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মূল টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। তিনি যখন বেঁচে আছেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হবে এ বাংলার মাটিতে। বাংলার মানুষ এর অপেক্ষায় রয়েছে। আজকের দিনে আমাদের শপথ, রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মোকাবেলা করব।
বগুড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন
বগুড়া অফিস জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে বগুড়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সকালে জাতীয়, দলীয়, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। সকাল ৯টায় দলীয় কার্যালয়ে স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা: মকবুল হোসেন। সভায় বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, অধ্যাপক এস এম আইয়ুব, টি জামান নিকেতা প্রমুখ। ১ আগস্ট থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শোকের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
খুলনায় শোক শোভাযাত্রা
খুলনা ব্যুরো জানায়, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে খুলনায় গতকাল বুধবার সকালে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নগরীতে শোক শোভাযাত্রা বের করে। এর আগে দলীয় কার্যালয় চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে, গ্রেনেড হামলার সঠিক তদন্ত না করে উল্টো আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছিল। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
সমাবেশে আরো বক্তৃতা দেন অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবর রহমান, এফ এম মাকসুদুর রহমান, অ্যাডভোকেট সুজিৎ অধিকারী, বিএমএ সালাম, অ্যাডভোকেট রজব আলী সরদার প্রমুখ।
রাজশাহীতে আ’লীগের দোয়া মাহফিল
রাজশাহী ব্যুরো জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে শহীদদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় কার্যালয়ের পাশে স্বাধীনতা চত্বরে গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতিকৃতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এতে গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২১ আগস্ট সেদিনের সমাবেশে আমিও উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চ থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নেত্রীর বক্তব্য শুনছিলাম। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিকট একটা শব্দ হয়। প্রথম শব্দে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। এর কয়েক সেকেন্ড পর আরেকটি বিকট শব্দ হয়। তখন বুঝতে পারি কিছু একটা ঘটেছে। এরপর মানুষের ছোটাছুটিতে ধাক্কায় আমি পড়ে যাই। আমার ওপর দিয়ে কত মানুষ যে চলে গেছে। এরপর আমি যখন উঠে দাঁড়াই, তারপর আরেকবার পড়ে যাই। পরেরবার উঠে যখন দাঁড়িয়েছি, দেখলাম গাড়ির সিটে বসে কিছুটা সামনের দিকে হেলে গালে হাত দিয়ে আছেন নেত্রী। গাড়ির জানালায় তাজা রক্ত। কিছুক্ষণ পরই আমার সামনে দিয়ে নেত্রীর গাড়ি চলে গেল।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ শেখ হাসিনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করবেনÑ এই জন্যই হয়তো সেদিন নেত্রী বেঁচে গেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement