২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ট্রাম্পের

কাশ্মির নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে পাকিস্তান

-

কাশ্মির নিয়ে ভারতের সাথে বিরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। চলতি মাসের প্রথম দিকে কাশ্মিরের ভারত অধিকৃত অংশের বিশেষ মর্যাদা নয়াদিল্লি বিলোপ করার পর গত মঙ্গলবার দেশটি এ কথা জানিয়েছে। নয়াদিল্লির ওই পদক্ষেপে ইসলামাবাদ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যান চলাচল বন্ধ করে এবং ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানায় পাকিস্তান। গত মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরায়শি এআরোয়াই নিউজ টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘আমরা কাশ্মিরের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব আইনি দিক বিবেচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরে ভারতের বিরুদ্ধে ওঠা সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এই মামলাটিতে কেন্দ্রীভূত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। তবে কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার কথা অস্বীকার করে আসছে ভারত। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নিবে কি না সেটি পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, কাশ্মির বিষয়ে বহুপক্ষকে যুক্ত করে কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। উত্তর হচ্ছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সরাসরি আলোচনা।’
ফের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ট্রাম্পের : এ দিকে কাশ্মির ইস্যুতে ফের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার এনবিসি নিউজের সাথে আলাপকালে নিজের এমন অভিপ্রায়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। এক মাস আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাশে বসিয়ে একই ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন তিনি। তবে ওই প্রস্তাব নিয়ে তখন ভারতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
দুই প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফোনালাপের পর সোমবার টুইটারে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প কাশ্মিরের বর্তমান অবস্থাকে ‘একটি কঠিন পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। পরদিন মঙ্গলবার এনবিসি নিউজের সাথে আলাপকালে অঞ্চলটির বিদ্যমান অবস্থাকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কাশ্মিরের পরিস্থিতি শান্ত করার প্রচেষ্টায় যুক্ত হতে পেতে তিনি খুশি এবং এ ইস্যুতে তিনি সাহায্য করবেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহজ সম্পর্ক তৈরি না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এর জন্য দায়ী ধর্ম।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কাশ্মির খুবই জটিল একটি জায়গা। সেখানে হিন্দুও রয়েছে, মুসলিমও রয়েছে। আমি বলতে পারি না যে, তারা একসাথে ভালো রয়েছে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘মধ্যস্থতা করতে আমি যতটুকু সম্ভব করব। আপনারা দু’টি দেশ, দীর্ঘসময় ধরে একসাথে এবং ঘনিষ্ঠভাবে থাকতে পারছেন না, এটা খুবই বিস্ফোরক পরিস্থিতি।’ ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য জি সেভেন সম্মেলনেও কাশ্মির ইস্যু তোলার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, সেখানে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
প্রথম বন্দুকযুদ্ধে কাশ্মিরে নিহত ২ : কাশ্মিরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামীদের বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবারের এ ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক স্বাধীনতাকামী নিহত ও স্বাধীনতাকামীদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার পর একজন হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর এই প্রথম ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটল। উত্তর কাশ্মিরের বারামুল্লায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পাকিস্তানের গুলিতে ৬ ভারতীয় সেনা নিহত : তা ছাড়া কাশ্মিরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরোধমূলক গুলিবর্ষণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাসহ ছয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন বলে দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে। তারা বলেছে, সীমানা নির্ধারণকারী রেখা (এলওসি) অতিক্রম করার কারণে তারা প্রতিরোধ করতে গেলে ভারতীয় সেনা নিহত হয়। আইএসপিআর এক টুইট বার্তায় জানায়, ‘পাকিস্তান সেনাবহিনী আত্মরক্ষার্থে এলওসির তাত্তা পানি সেক্টরে ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে গুলি চালালে ভারতীয় সেনারা নিহত হয়।’
টুইট বার্তায় আরো জানানো হয়, ‘এর আগে ভারতীয় সেনাদের গুলিতে সাত বছরের শিশুসহ তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় পোস্ট লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাতে এক কর্মকর্তাসহ ভারতীয় ছয় সেনা নিহত হন।’
পাকিস্তানের ২০০ টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড : পাকিস্তানের ২০০টি অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। কাশ্মির নিয়ে উসকানিমূলক বার্তা প্রকাশ্যে আসার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে টুইটার। সাসপেন্ড হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও একাধিক সমাজকর্মীর অ্যাকাউন্ট। পাকিস্তান আইএসপিআরের ডিজি মেজর জেনারেল আসিফ গাফুর বলেন, টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়ায় খুবই সমস্যা হচ্ছে। টুইটারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement